পরাজয়ের দিন ট্রাম্পকে যেমন দেখেছি
গত চার বছর ধরেই বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আমি প্রেসিডেন্টকে দেখেছি। তবে ৭ নভেম্বর, যেদিন নিশ্চিত হওয়া গেল ডোনাল্ড ট্রাম্প পরাজিত হয়েছেন, সেদিনটি সবচেয়ে আলাদা ছিল।
সকাল ১০টার দিকে কালো উইন্ডব্রেকার ও ট্রাউজার পরেই তিনি গলফ ক্লাবের উদ্দেশ্যে বের হন হোয়াইট হাউস থেকে; মাথায় ছিল 'মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন' লেখা ক্যাপ। দিনের শুরুটা করেন নির্বাচনের জালিয়াতি অভিযোগ সংক্রান্ত টুইটার বার্তা দিয়ে।
বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়েই হোয়াইট হাউস থেকে বের হন তিনি। এদিকে হোয়াইট হাউসে কর্মরত স্টাফরা বেশ চাপের মধ্যে ছিলেন, তা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। আমি একজন স্টাফকে 'কেমন আছো' জিজ্ঞাসা করায় তিনি অপ্রস্তুতভাবে স্মিত হেসে জানান, 'ঠিক আছি।' হোয়াইট হাউসের ওয়েস্ট উইংয়ের অনেক ডেস্কই খালি পড়ে ছিল। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অনেক স্টাফই ছিলেন কোয়ারেন্টিনে।
ট্রাম্প গলফ ক্লাবে পৌঁছানোর পরপরই বিবিসি এবং মার্কিন গণমাধ্যমগুলো নির্বাচনে জো বাইডেনের জয়ের ঘোষণা দিতে থাকে। সেসময় আমি এবং আরও কিছু সাংবাদিক গলফ ক্লাবের কিছু দূরেই এক রেস্তোরাঁয় তার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
রেস্তোরাঁর বাইরে স্থানীয় এক নারী বলছিলেন, 'সে খুবই টক্সিক!' তার বেশিরভাগ প্রতিবেশির মতো তিনিও ডেমোক্র্যাট সমর্থক ছিলেন।
এদিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় চলে যাচ্ছে, কিন্তু ক্লাব থেকে আর বের হন না ট্রাম্প। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক সদস্যকে বলতে শুনলাম, 'তিনি নিজের জন্য সময় নিচ্ছেন।'
গলফ ক্লাব থেকে বের হওয়ার কোনো তাড়া ছিল না প্রেসিডেন্টের। ক্লাবে নিজের বন্ধু-বান্ধবের সাহচর্যে ছিলেন; এদিকে ক্লাবের বাইরে তার সমর্থকরা আমাদের উদ্দেশ্যে স্লোগান দিচ্ছিলেন, 'মিডিয়ার অর্থায়ন বন্ধ করো।' লাল-সাদ-নীল ব্যান্ডানা পরিহিত এক নারী 'চুরি বন্ধ করো' প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়েছিলেন।
অবশেষে ক্লাব থেকে বের হলেন ট্রাম্প। বাইরে তার বিরোধী ডেমোক্র্যাট সমর্থকরাও অপেক্ষা করছিলেন। ট্রাম্প তার গাড়িবহর নিয়ে হোয়াইট হাউসের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেন। পথিমধ্যেই ফেয়ারফ্যাক্স কাউন্টি পার্কওয়েতে প্রেসিডেন্টের গাড়িবহরের একটি ভ্যান ক্র্যাশ করতে যাচ্ছিল, অল্পের জন্য রক্ষা হয়।
আমরা যতই হোয়াইট হাউসের দিকে এগোতে থাকি, বিভিন্ন স্থানে ট্রাম্পবিরোধী জমায়েত ও বিজয় উল্লাস চোখে পড়ে। অনেকেই বিদ্রূপ করছিলেন, ভেঁপু বাজিয়ে বিজয় উল্লাস করছিলেন।
'তোমার হেরে যাওয়ায় আমরা সবাই জিতে গেছি,' লেখা প্ল্যাকার্ডও চোখে পড়ে।
হোয়াইট হাউসে পৌঁছানোর পর প্রেসিডেন্ট মাথা নিচু করেই পাশের একটি দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন। অন্য সময় এই দরজা তিনি ব্যবহার করেন না বললেই চলে। আমাদের দিকে তাকিয়ে সচরাচরের মতো হাত না নাড়িয়ে শুধু থাম্বস আপ দেখান। হোয়াইট হাউস বা গলফ ক্লাব- কোথাও তাকে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়াতে দেখা যায়নি এ সময়। নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে তিনিই জিতেছেন, বলে যাচ্ছেন।
সকালেই অবৈধভাবে গৃহীত ভোটের ব্যাপারে টুইটার বার্তা দেন; বিকালে বড় হরফে দেন 'আমিই নির্বাচনে জিতেছি' বার্তা।
তবে সামনাসামনি তার অভিব্যক্তি একেবারেই অন্য রকম ছিল। পাশের একটি দরজা দিয়ে বিমর্ষ চিত্তে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করেন। তার সদর্পে চলাচল করার সত্তা একেবারেই অনুপস্থিত ছিল সেদিন।
- লেখক: হোয়াইট হাউস প্রতিনিধি, বিবিসি
অনুবাদ: রাফিয়া তামান্না