ধর্ষণের জন্য নারীদের দায়ী করে তোপের মুখে ইমরান খান
ধর্ষণের জন্য নারীদের 'যৎসামান্য কাপড় গায়ে রাখা'কে দায়ী করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
তাকে সেদেশে চলমান 'ধর্ষণ মহামারি' নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন আজিওস-এর সাংবাদিক জোনাথন সোয়ান। জবাবে ইমরান বলেন 'একজন নারী যদি শরীরে এত অল্প কাপড় রাখে, তাহলে তা পুরুষদের প্রভাবিত করবেই, যদি না সেই পুরুষ একটা রোবট হয়। এটা সাধারণ বিচার-বুদ্ধির ব্যাপার।'
তবে 'অনেক অল্প কাপড়' বলতে তিনি কি বুঝিয়েছেন, তা তিনি ব্যাখ্যা করেননি। কারণ পাকিস্তানের মতো দেশে প্রায় সব নারীই প্রথাগত পোশাক পরে থাকেন এবং পর্দা মেনে চলেন।
ইমরানের খানের এই বক্তব্যের পর তার ক্ষমাপ্রার্থনা করা উচিত- এমন দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে হিউম্যান রাইটস কমিশন অব পাকিস্তানসহ ডজনখানেক নারী অধিকার সংগঠন। তারা বলে, "এটা খুবই ভয়ঙ্কর ব্যাপার যে, নারীরা অন্যায়ের শিকার হওয়ার পরেও তাদেরই দোষ দেওয়া হচ্ছে এবং পুরুষকে দেখা হচ্ছে 'অসহায়' প্রাণী রূপে।"
পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের মেয়ে মারিয়াম নওয়াজ বলেন, "(ইমরান) খান ছিলেন একজন 'ধর্ষণ সমর্থনকারী' ব্যক্তি। ধর্ষকদের সঙ্গে তার চিন্তাধারার কোনো পার্থক্য নেই।"
নারী অধিকারকর্মী ও প্রচারক কানওয়াল আহমেদ টুইটারে লিখেছেন, 'আজকে প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর কতজন ধর্ষক যে নিজেদের কাজকে যৌক্তিক মনে করছে, এটা ভেবে আমার বুক কেঁপে উঠেছে।'
ইমরান খানের বক্তব্যকে ঘিরে করাচি ও লাহোর শহরেও সপ্তাহব্যাপী প্রতিবাদের আয়োজন করা হয়েছে।
এর আগে চলতি বছরেই দেশটির শীর্ষ পর্যায়ের একটি অধিকার রক্ষা গোষ্ঠী ইমরানকে 'অজ্ঞতার সমর্থক' বলে অভিযুক্ত করেছিল; কারণ সে সময় তিনি ধর্ষণ প্রতিরোধে নারীদের পর্দা করে চলার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
তবে ইমরান খানের মিডিয়া টিম পরবর্তীকালে দাবি করেছিল, জাতীয় ভাষা উর্দুতে বলা তার সেই বক্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
ধর্ষণের শিকার নারীদের নিয়ে তার আগের মন্তব্যের ব্যাপারে সোয়ান যখন তাকে প্রশ্ন করেন, ইমরান বলেন, এটা ছিল 'অর্থহীন' কথা; বরং সমাজের লোলুপ চোখ থেকে নারী যেন নিজেকে রক্ষা করতে পারেন, এজন্য তিনি ইসলামের 'পর্দা প্রথা'র কথা বুঝিয়েছিলেন।
পাকিস্তানে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার নারীদের প্রায়ই সন্দেহের চোখে দেখা হয় এবং অপরাধীর বিরুদ্ধে খুব কমই অভিযোগ দায়ের করা হয়। দেশটির অধিকাংশ পরিবারই তাদের তথাকথিত 'সম্মান' বজায় রাখতে চায়। তারা মনে করে, যেসব নারী পরিবারের জন্য 'লজ্জা'র কারণ হয়েছে, তাদেরকে হত্যা করাই উচিত।
লিঙ্গ সমতার দিক থেকেও পাকিস্তানের অবস্থান প্রায়ই সর্বনিম্ন দেশগুলোর সারিতে থাকে।
২০২০ সালে যখন এক পুলিশ প্রধান গণধর্ষণের শিকার এক নারীকে পুরুষ সঙ্গী ছাড়া রাতে গাড়ি চালানোর জন্য উল্টো তিরস্কার করেন, তখন পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভের ঝড় উঠেছিল। ফরাসি-পাকিস্তানি সেই নারীর গাড়ির জ্বালানি শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনি গাড়ি থামান। সে সময় সন্তানদের সামনেই তাকে যৌন নিপীড়ণ করা হয়।
-
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান