ট্রাম্পের সময় ফুরিয়ে আসছে

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক
23 November, 2020, 06:40 pm
Last modified: 23 November, 2020, 06:43 pm
টুমি ও ক্রিস্টি সহ আরও বেশকিছু রিপাবলিকান নেতাও ট্রাম্পকে নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিয়ে দায়িত্ব হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন। এই সপ্তাহেই বাকি ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলোর মামলার ফলাফল আসলেই ট্রাম্পের ওপর এই চাপ আরও বেড়ে যাবে। 

কংগ্রেসের বেশিরভাগ রিপাবলিকান নেতাই নির্বাচনের ফলাফলের ব্যাপারে ট্রাম্পের আইনি লড়াইয়ের পক্ষেই আছেন। ট্রাম্পের শেষ পর্যন্ত আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়া উচিৎ এমনটাই জানিয়েছেন তারা। তবে সেইসাথে ট্রাম্পকে ফলাফল মেনে নেয়ার আহ্বানও করছেন অনেক রিপাবলিকান সমর্থক। 

ফল নির্ধারনী গুরূত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোতে বেশি ভোট পেয়েই জয়লাভ করেছেন জো বাইডেন। মিশিগান, পেনসিলভানিয়া ও নেভাডায় তিনি ১ লাখ ৫৫ হাজার, ৮১ হাজার এবং ৩৩ হাজার বেশি ভোট পেয়েছেন। 

পেনসিলভানিয়ার রিপাবলিকান সিনেটর প্যাট টুমি ট্রাম্পকে নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। গত শনিবার পেনসিলভানিয়ার ফেডারেল কোর্টে নির্বাচন সংক্রান্ত ট্রাম্প শিবিরের মামলায় পরাজয়ের পরই এ আহ্বান জানান তিনি। নির্বাচনে বাইডেনের জয়লাভের ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করলেও ফলাফল মেনে নেয়ার সময় এসেছে এমনটাই মনে করছেন তিনি। 'ট্রাম্পের শাসনামলে তার কৃতিত্ত্বের জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন এ ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে এবং দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে প্রেসিডেন্টের ট্রাম্পের উচিৎ নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেয়া এবং দায়িত্ব হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় সাহায্য করা।' বলেন তিনি। 

ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত নিউ জার্সির সাবেক গভর্নর ক্রিস ক্রিস্টিও ট্রাম্পকে পরাজয় মেনে নেয়া আহ্বান জানান। তিনি মার্কিন সংবাদ মাধ্যম এবিসি-কে এপ্রসঙ্গে বলেন, 'নির্বাচনে জালিয়াতির প্রমাণ থাকলে তা উত্থাপন করুন। সত্য কথা বলতে গেলে, প্রেসিডেন্টের আইনজীবীর দল শুধু বিব্রতকর কাজই করে যাচ্ছে।'

ট্রাম্পের থেকে ৬০ লাখ পপুলার ভোট বেশি পেয়েছেন বাইডেন।  ইলেকটোরাল ভোট পেয়েছেন ৩০৬টি। এদিকে একের পর এক আইনি লড়াইয়েও হেরে যাচ্ছেন ট্রাম্প। সেইসাথে টুমি ও ক্রিস্টি সহ আরও বেশকিছু রিপাবলিকান নেতাও ট্রাম্পকে নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিয়ে দায়িত্ব হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন। এই সপ্তাহেই বাকি ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলোর মামলার ফলাফল আসলেই ট্রাম্পের ওপর এই চাপ আরও বেড়ে যাবে। 

পেনসিলভানিয়া 

আদালতে ট্রাম্পের আইনজীবীরা নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগের কোনো প্রমাণই দেখাতে পারেনি এমনটা জানিয়ে ট্রাম্প শিবিরের মামলা খারিজ করে দেন বিচারক। এপ্রসঙ্গে বিচারক ম্যাথিউ ব্র্যান বলেন, 
'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে একজন ব্যক্তির অধিকার বঞ্চিত হওয়ারও সুযোগ নেই। সেখানে ৬টি রাজ্যে এমন হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই।'

মিশিগান 

মিশিগানের ৮৩টি কাউন্টির ফলাফল কাউন্টি পর্যায়ে ইতোমধ্যেই যাচাই বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার মিশিগান বোর্ড অব স্টেট ক্যানভাজারের বৈঠকে দুজন রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট সদস্যের উপস্থিতিতে সামগ্রিক ফলাফল যাচাই বাছাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু হবে। 
গত শুক্রবার রাজ্যটির ব্যুরো অব ইলেকশন  নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে এমন প্রমাণ সম্বলিত প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে। গত বৃহস্পতিবার মিশিগান আইনসভার সিনিয়র সদস্যদের এব্যাপারে আলোচনার জন্য হোয়াইট হাউজেও ডেকেছেন ট্রাম্প। তবে এই বৈঠকের পরও সিনেট মেজরিটি লিডার মাইক শারকি এবং হাউজ অব স্পিকার লি চ্যাটফিল্ড জানিয়েছেন, নির্বাচনের ফলাফল ভোটের তথ্যের সাথে মিলছে না এমনটা বিশ্বাস করার মতো কোনো কারণই দেখছেন না তারা। এক যৌথ বিবৃতিতে তারা জানান, 'মিশিগানে নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন হতে পারে এমন কোনো তথ্যই পাইনি আমরা। আইনসভার সদস্য হিসেবে মিশিগানের ইলেকটোরাল ভোটের ব্যাপারে আইন মেনেই সিদ্ধান্ত নেব আমরা।' 

নেভাডা 

নেভাডা থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে গেছে এমন ১ হাজার ৪০০ মানুষের ভোট গ্রহণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।  বিগত এক যুগে ভোট দেয়নি এমন  ৮ হাজার মানুষের ভোট গণনা করা হয়েছে; যা কিনা নেভাডার আইন পরিপন্থী, এমন অভিযোগও করা হয়। 
নেভাডায় বাইডেন ৩৩ হাজার ভোট বেশি পেয়েছেন। 
ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের বিচারক গ্লোরিয়া স্টারম্যান অভিযোগকারী অ্যাঙ্গেলা গ্রুপের আইনজীবীকে বলেন, 'ভোট দেয়া উচিৎ হয়নি এমন আড়াইশো – ৮ হাজার মানুষের ভোটের জন্য আপনি ১৪ লাখ ভোট খারিজ করার আবেদন জানিয়েছেন।'

এরপর কী? 

সামনের সপ্তাহে বাকি অঙ্গরাজ্যগুলোরও যাচাইয়ের প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাবে। ৩০ নভেম্বর অ্যারিজোনার এবং ১ ডিসেম্বর উইসকনসিনের ফলাফল আনুষ্ঠানিক ভাবে নিশ্চিত ঘোষণা হবে। উইসকনসিনের দুটি কাউন্টিতে ভোট পুনঃর্গণনার আবেদনও করেছে ট্রাম্প শিবির। তবে রাজ্যটির নির্বাচনী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন ট্রাম্প শিবিরের পরিদর্শকরা পুনঃর্গণনা প্রক্রিয়াও বিলম্বিত করছেন। 

৮ ডিসেম্বরের মধ্যেই রাজ্যগুলো তাদের ইলেকটোরাল ভোটদাতা নির্ধারণ করবেন। তারপরই ১৪ ডিসেম্বর তারা ইলেকটোরাল ভোত দিবেন। ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স এই ভোটের তথ্য পাবেন । সব প্রক্রিয়া শেষে ২০ জানুয়ারিতে বাইডেনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।  

ট্রাম্প শিবির মামলা, আপিলের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াকেই দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপই ট্রাম্পের অনুকূলে থাকবে না। দলীয় সমর্থক ও ঘনিষ্ঠ অনেক নেতার বিরাগভাজন হয়ে যেতে পারেন ট্রাম্প। বাকিরা হয়তো এই নিরর্থক চেষ্টা বন্ধ করতে ট্রাম্পকে বোঝানোর বৃথা চেষ্টা করে যাবেন। 

সূত্র: এনপিআর 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.