চীনে বন্দরের পণ্যজটে ব্যাহত বৈশ্বিক সরবরাহ চক্র

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক
11 June, 2021, 10:05 pm
Last modified: 12 June, 2021, 05:18 pm
এই দশা বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির পাশাপাশি শোচনীয় করে তুলতে পারে সরবরাহ বিচ্ছিন্নতা

নতুন করে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় চীনের দক্ষিণাঞ্চলের বন্দরগুলোতে দেরিতে পৌঁছানো রপ্তানি পণ্যের ভিড় বেড়েছে। পণ্যজটের কারণে আমদানি-রপ্তানির স্বাভাবিক গতি হচ্ছে ব্যাহত। ফলে হুমকিতে পড়েছে বৈশ্বিক সরবরাহ চক্র। এই দশা বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির পাশাপাশি; শোচনীয় করে তুলতে পারে সরবরাহ বিচ্ছিন্নতা। 

এ অবস্থায় পণ্য পরিবাহী বৃহৎ কার্গো জাহাজগুলো সিঙ্গাপুরের পরিবর্তে সরাসরি চীনা বন্দরেই ভেড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চলতি মাসেই কসকো শিপিং লাইনস কোম্পানির একটি কার্গো জাহাজ সিঙ্গাপুর বন্দরে নোঙ্গর করার পরিকল্পনা বাতিল করেছে। এছাড়া, আগামী জুলাইয়ে চীনমুখী যাত্রায় বৃহৎ ফরাসি পণ্য পরিবাহী সংস্থা সিএমএ সিজিএম-এর একটি জাহাজও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ব্যস্ততম নৌ-বাণিজ্য কেন্দ্রটি এড়িয়ে যাবে বলে জানা গেছে।       

এদিকে আবার চীনে দেখা দিয়েছে চরম কন্টেইনার সঙ্কট। মহামারি কালে দেশটির অধিক রপ্তানি ও সে তুলনায় কম আমদানির কারণেই পর্যাপ্ত কণ্টেইনার মিলছে না। 

এব্যাপারে সাপ্লাই চেইন ইন্টেলিজেস ফার্ম প্রজেক্ট-৪৪ এর ভাইস প্রেসিডেন্ট জস ব্রাজিল বলেন, "কন্টেইনার সঙ্কট ও তার সঙ্গে বাড়তি রপ্তানি চাহিদা ইতোমধ্যেই চীনের অভ্যন্তরীণ পণ্য পরিবহনের খরচ অস্বাভাবিক পরিমাণে বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। এই বাড়তি খরচের কারণে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির আসন্ন হুমকিটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।"

ড্রিউরি শিপিং কনসালটেন্টস লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক সাইমন হ্যানি বলেন, চীনের প্রযুক্তি শিল্প কেন্দ্র শেনঝেন নগরীর ইয়ানতিয়ান বন্দর এলাকায় ভাইরাসের নয়া প্রাদুর্ভাবের কারণে ইতোমধ্যেই জলপথে পণ্য পরিবহনের বৈশ্বিক খরচ স্ফীত হয়েছে। যেকারণে গত তিন সপ্তাহ ধরেই ১০ শতাংশ ঊর্ধ্বমুখী অবস্থানে রয়েছে ড্রিউরি'র ওয়ার্ল্ড কন্টেইনার ইনডেক্স- সূচক।   

"আমরা অনুমান করছি, তৃতীয় প্রান্তিকের রপ্তানির পিক সিজনের কারণে খরচের পরিমাণটি আরও বাড়বে। তাছাড়া, পণ্য আসতে দেরি হওয়ায় বন্দরে জাহাজের অপেক্ষার সময় বাড়লে আমদানি ও রপ্তানিকারক উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হবে," বলে জানান সাইমন।  

মহামারির প্রথমদিকেই চাপের মুখে পড়েছিল বৈশ্বিক সরবরাহ চক্র, সেই সঙ্কটের রেশ এখনও কাটেনি। বছরের শুরুর দিকে সুয়েজ খালে কণ্টেইনার জাহাজ এভার গিভেন আটকে থাকার কারণেও সরবরাহ চক্র আরও ব্যাহত হয়। তার মধ্যেই চীনের দুর্বল আমদানি-রপ্তানি গতি সেই ক্ষতকে গভীর করবে।

সিঙ্গাপুর বন্দরে বড় জাহাজগুলোতে চীন থেকে অন্যান্য আকারের জাহাজের মালামাল লোড ও আনলোড করা হয়, নৌপরিবহন বাণিজ্যে যাকে বলা হয়; ট্রান্সশিপমেন্ট। প্রজেক্ট-৪৪ এর হিসাব অনুসারে, এই মুহূর্তে ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য সিঙ্গাপুর বন্দরে জাহাজগুলোকে আট- নয়দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। অথচ মাত্র এক বছর আগেও অপেক্ষার মেয়াদ ছিল সর্বোচ্চ পাঁচদিন। 

সিঙ্গাপুর বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান- পিএসএ সিঙ্গাপুর ব্লুমবার্গের এক ইমেইলের জবাবে জানায়, মূলত ইয়ানতিয়ান বন্দরের কার্যক্রমে দেরি হওয়াতেই সমুদ্রগামী নৌযানের সময়সূচি ও পরিবহন সেবা ব্যাহত হচ্ছে। পণ্যের বাড়তি চাপ ছড়িয়ে পড়েছে নিকটবর্তী শেকুও এবং নানশা টার্মিনালেও। এতে সিঙ্গাপুর বন্দরে আসা জাহাজগুলোও প্রভাবিত হবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।"  

তবে ইয়ানতিয়ানে দেরির কারণে পিএসএ সিঙ্গাপুর পরিচালিত টার্মিনাল ব্যবহারকারী নৌযানকে দীর্ঘ অপেক্ষার মধ্যে পড়তে হচ্ছে না বলেও দাবি করে কন্টেইনার অপারেটর সংস্থাটি।    

  • সূত্র: ব্লুমবার্গ 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.