চলতি বছরের শেষ নাগাদ ৩শ' কোটি ভ্যাকসিন ডোজ উৎপাদন করবে চীন 

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক
11 April, 2021, 09:50 pm
Last modified: 11 April, 2021, 10:02 pm
আগামী জুনের মধ্যেই মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশকে টিকা দেওয়ার কথা থাকলেও, বর্তমানে দেশটির ভ্যাকসিন উৎপাদন যথেষ্ট নয় 

চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এ বছরের শেষ দিক নাগাদ দেশটির কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন উৎপাদন সক্ষমতা ৩শ' কোটি ডোজে পৌঁছাবে।

দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের কর্মকর্তা ঝেং ঝংওয়েই গত শনিবার এক সম্মেলনে এই আভাস দেন। এর আগেও চীন তাদের উৎপাদন সম্পর্কে যে হিসাব দিয়েছিল, তার সঙ্গে এটির মিল রয়েছে বলে জানা যায়।

চীনের ন্যাশনাল কোভিড-১৯ টাস্ক ফোর্স-এর প্রধান ঝেং বলেন,  "আশা করছি চলতি বছরের বছরের দ্বিতীয়ার্ধেই আমরা নিজেদের চাহিদা পুরোপুরি মেটাতে সক্ষম হবো।"

চীনা সরকার জুনের মধ্যেই নিজেদের ৪০% শতাংশ জনগণকে ভ্যাকসিন দেয়ার লক্ষ্য নিলেও করলেও সরবরাহ কম থাকায় তারা এই লক্ষমাত্রা পূরণে হিমশিম খাচ্ছে। তবে দেশীয় চাহিদা মেটাতে প্রতিনিয়তই নিজেদের উৎপাদন মাত্রা বৃদ্ধি করে চলেছে চীনের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো। 

ফেব্রুয়ারিতে চীনা ওষুধ কোম্পানি 'সিনোভ্যাক'-এর ভ্যাকসিন উৎপাদন ছিল ১০০ কোটি ডোজ। সেখান থেকে এ মাসে নিজেদের তৃতীয় প্রোডাকশন লাইনে তারা ২০০ কোটি ডোজে উন্নীত করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

অন্যদিকে, সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান 'সিনোফার্ম' জানিয়েছে, তারা এবছর ১০০ কোটি ডোজ উৎপাদনে সক্ষম হবে এবং আগামী দিনগুলোতে তা ৩০০ কোটিতে উন্নীত করার আশা রাখছে। প্রতিষ্ঠানটির দেওয়া মানব ট্রায়ালের ফলাফল অনুযায়ী, তাদের ভ্যাকসিন ৭৯ শতাংশ কার্যকরী।

মার্চের শেষদিকে চীনের শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় জানায়, চীন এখন দৈনিক ৫০ লাখ ডোজ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন উৎপাদন করছে।

সম্মেলনে ঝেং আরো জানান যে, এখনও পর্যন্ত ২৫ কোটি চীনা ভ্যাকসিনের ডোজ সারা বিশ্বে দেয়া হয়েছে এবং সেগুলো নিরাপদ বলেই প্রমাণিত হয়েছে।

অন্যদিকে, চীনে ১৬ কোটির বেশি ডোজ দেওয়া হয়েছে বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়। 

একই সম্মেলনে অংশ নেওয়া দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র- সিডিসি'র প্রধান কর্মকর্তা স্বীকার করেন যে, চীনা ভ্যাকসিন 'অপেক্ষাকৃত কম' সুরক্ষা দেয় এবং জনগণকে ভবিষ্যতে মিশ্র ভ্যাকসিন দেওয়া হতে পারে।
 
সিডিসি-এর পরিচালক গাও ফু বলেন, মডার্না ও বায়োটেক-ফাইজার তাদের ভ্যাকসিনে যেমন সর্বাধুনিক জেনেটিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে, তেমনি নতুন এসব ভ্যাকসিন প্রযুক্তি চীনকেও আয়ত্ত করতে হবে।

মডার্না ও ফাইজার-দুটি কোম্পানির ভ্যাকসিনেই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে উদ্দীপ্ত করার জন্যে এমআরএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এবং এদের কর্মক্ষমতাও ৯০ শতাংশেরও বেশি।

গাও বলেন, "আমাদের ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতা যে কম, এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত।"

শনিবার সিনোফার্ম তাদের রিকমবিন্যান্ট ভ্যাকসিন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন পেয়েছে বলে জানায়। 

সিনোফার্ম সূত্র জানায়, তাদের এই রিকমবিন্যান্ট ভ্যাকসিনে স্পাইক প্রোটিন জন্মানোর জন্য জেনেটিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে যা একবার ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে দেওয়ার পর এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ক্ষতিকর ভাইরাস চিনতে ও তাকে শনাক্ত করে মোকাবিলা করার জন্য নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সাহায্য করে।

এছাড়াও, রিকমবিন্যান্ট ভ্যাকসিন একটি বহুল প্রচলিত ও প্রমাণিত বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার সাহায্য নিয়েছে, ফলে এটি বিপুল পরিমাণে উৎপাদনের জন্যও সুবিধাজনক। 

কোম্পানিটি আরো জানিয়েছে, তাদের এই উৎপাদনের সঙ্গে কোনো জীবিত ভাইরাস বা ইনফেকশন হতে পারে এমন বস্তু জড়িত নেই। ফলে এর ক্ষেত্রে উচ্চ মাত্রার জৈব নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রয়োজন নেই। 

সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাক উৎপাদিত ভ্যাকসিনসহ অন্যান্য চীনা ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে মৃত বা পরিবর্তিত, নিষ্ক্রিয় ভাইরাস ব্যবহৃত হয় বলে তা মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে না, তবে পুরো প্রক্রিয়ায় উচ্চ মাত্রার  জৈব নিরাপত্তার প্রয়োজন হয়।     

  • সূত্র: সাউথ চাউনা মর্নিং পোস্ট 
     

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.