গাজার গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোকে কেন্দ্র করে কেন ইসরায়েল হামলা চালাচ্ছে?

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক
20 May, 2021, 08:30 pm
Last modified: 20 May, 2021, 08:45 pm
ইসরায়েলি বামপন্থী দৈনিক হারেৎজের কলাম লেখক গিডিয়ন লেভি বলেন, বহুতল ভবনগুলোতে চালানো বোমা হামলা মূলত দর্শনীয় টেলিভিশন অনুষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। গাজায় হামলার পক্ষে ইসরায়েলি জনমতকে টিকিয়ে রাখতে বিষয়টি সাহায্য করে

ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় গত শনিবার গুঁড়িয়ে যায় গাজার আল-জালা টাওয়ার। ভবনটিতে আল জাজিরা এবং অ্যাসোসিয়েট প্রেসের কার্যালয় ছাড়াও ছিল একাধিক প্রতিষ্ঠানের অফিস এবং আবাসিক অ্যাপার্টমেন্ট।

অন্যান্য হামলার ক্ষেত্রে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের ঘাঁটি ধ্বংস করার ব্যখ্যা দিলেও এবার তা দিতে ব্যর্থ হয়। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে যারা সোচ্চার তাদের মাঝে ইসরায়েলের সাংবাদিকদের 'নীরব' করার এই প্রচেষ্টা তুমুলভাবে সমালোচিত হয়েছে।

গাজার তথ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ১০ মে শুরু হওয়া বোমা হামলায় নগরের গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি ভবন ধূলিসাৎ করে দিয়েছে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান। ভবনগুলোতে ১৮৪টির বেশি আবাসিক ও বাণিজ্যিক সম্পত্তি অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর মধ্যে ছিল ৩৩টি গণমাধ্যম কার্যালয়।

রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বিশ্লেষক মোহসিন আবু রামাদান বলেন, জনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং অবকাঠামোতে ইসরায়েলের বোমা হামলার কৌশল নতুন কিছু নয়।

"পূর্বেও আমরা এ ধরনের আক্রমণ প্রত্যক্ষ করেছি। কিন্তু, এবার গাজা উপত্যকায় বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে হামলার পরিমাণ বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে," বলেন তিনি।

আল-জাজিরার কাছে তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থন এবং আরব নেতাদের 'অক্ষমতা'র কারণে ইসরায়েল এধরনের কৌশল প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়েছে।

"অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হামলার পূর্বে জনসাধারণকে বাড়িঘর এবং কর্মক্ষেত্র খালি করার বিষয়ে সতর্ক করা হয়নি। সুতরাং, মানবিক বিবেচনায় হামলার পূর্বে সতর্কবার্তা পাঠানো নিয়ে ইসরায়েলের মিথ্যা প্রচারণার পুরোটাই নাটক," বলেন আবু রামাদান।

মনোবল ভেঙে দেওয়ার মরিয়া প্রচেষ্টা:

গাজা শহরের মিউনিসিপ্যালিটির মেয়র ইয়াহিয়া আল সারাজ আল-জাজিরাকে বলেন, "গাজা উপত্যকায় সংগঠিত বিশাল সংখ্যক বেসামরিক নাগরিক নিধন এবং বড় ধরনের ক্ষয়সাধন হলো আমাদের জনসাধারণের দৃঢ় মনোবল এবং স্থিতিশীলতা ভেঙে দেওয়ার মরিয়া প্রচেষ্টা।"

"তবে ঘুরে ঘুরে বহু মানুষের সাথে দেখা করে- বিশেষত যারা ঘরবাড়ি কিংবা পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছেন, আমার কাছে তাদের দৃঢ়তা আর ঘুরে দাঁড়ানোর ইচ্ছাই নজরে এসেছে," বলেন তিনি।

আল সারাজ আরও বলেন, "তারা জানে যে বিষয়টি শুধু গাজার বিরুদ্ধে চালানো যুদ্ধ নয়, বরং দখলকৃত পশ্চিম তীর এবং জেরুজালেমের মতো এটাও ইসরায়েলি আগ্রাসন নীতিমালার পরিবর্ধন।"

অর্থনৈতিক কাঠামো ধ্বংস:

টেলিযোগাযোগ সংযোগ, ইলেকট্রিসিটি গ্রিড, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং পানি সরবরাহ ব্যবস্থার ওপরেও বোমা হামলা চালানো হয়েছে। সমুদ্র তীরবর্তী ক্যাফে, কারখানা, বাণিজ্যিক দোকানপাট, সাহায্যকারী সংস্থার কার্যালয় এমনকি কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও ছাড় দেওয়া হয়নি।

এখন পর্যন্ত মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৩২২.৩ মিলিয়ন ডলারের বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।

ফোমকো ম্যাট্রেস কারখানা এবং মাতোক আইস্ক্রিম কারখানা লক্ষ্য করে চালানো হামলা থেকে স্পষ্টভাবেই ইসরায়েল কর্তৃক গাজা উপত্যকার অর্থনৈতিক কাঠামো দুর্বল করার প্রচেষ্টার প্রমাণ বলে মন্তব্য করেন আল সারাজ। ২০০৭ সাল থেকেই গাজা উপত্যকা বিধ্বংসী অবরোধের আওতাধীন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

"ইসরায়েল দখলদার কর্তৃক এধরনের আচরণের মূল উদ্দেশ্য হলো তরুণদের নিরাশ করে তাদের মধ্যে হতাশা বৃদ্ধি করা। বিশেষ করে তারা যখন দেখতে পাবে যে তাদের গড়ে তোলা কর্মস্থল এবং প্রতিষ্ঠানগুলো সব নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে," বলেন তিনি।

ইসরায়েলের আক্রমণ পুরোটাই পরিকল্পিত এবং সুচিন্তিত বলেও মন্তব্য করেন মেয়র ইয়াহিয়া আল সারাজ।

টেলিভিশনে আকর্ষণীয় উপস্থাপন:

ইসরায়েলি বামপন্থী দৈনিক হারেৎজের কলাম লেখক গিডিয়ন লেভি বলেন, বহুতল ভবনগুলোতে চালানো বোমা হামলা মূলত দর্শনীয় টেলিভিশন অনুষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। গাজায় হামলার পক্ষে ইসরায়েলি জনমতকে টিকিয়ে রাখতে বিষয়টি সাহায্য করে।

আল-জাজিরাকে লেভি বলেন, "ভবনগুলোতে হামলা চালানোর দৃশ্যগুলো ছিল দারুণ। ইসরায়েলি টেলিভিশনগুলো বারবার শুধু ভবন ধসের চিত্রগুলোই প্রদর্শন করছে।"

"ইসরায়েল সবসময় নির্দিষ্ট বাড়ির নির্দিষ্ট ফ্লোরের নির্দিষ্ট ঘর লক্ষ্য করে হামলা চালানোর বিষয়টি নিয়ে গর্ব করে আসছে। তারা শুধু করতে পারে বলে করে এমনটা নয়, বরং তাদের বাধা দেওয়ার মতো কেউ নেই বলেও এ ধরনের কাজ তারা করে থাকে," বলেন তিনি।

ইসরায়েলিরা গাজা সম্পর্কে খুব সামান্যই জানে। তারা বিষয়গুলো সম্পর্কে কিছু না জেনেও সম্পূর্ণ সুখে আছে।

"গাজার যে চিত্র এবং প্রতিবেদন তারা দেখে সেখানে কোনো দুর্ভোগ বা ভোগান্তি নেই," ব্যখ্যা করেন লেভি।

তবে, বিষয়টি যে ইচ্ছাকৃত সেন্সরশিপের জন্য নয় তাও উল্লেখ করেন তিনি। সবাই একই সাথে বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতে পছন্দ করে।

"আমরা কেউ সেগুলো দেখতে চাই না। গণমাধ্যম আমাদের সেগুলো না দেখিয়ে সাহায্য করছে," বলেন লেভি।

  • সূত্র: আল জাজিরা 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.