কোভিড-১৯ থেকে জীবন রক্ষাকারী প্রথম ওষুধ ডেক্সামেথাসোন

আন্তর্জাতিক

টিবিএস রিপোর্ট
16 June, 2020, 09:45 pm
Last modified: 16 June, 2020, 10:31 pm
সস্তা ও সহজলভ্য হবে এরকম একটি ওষুধ করোনাভাইরাসে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করবে।

স্বল্প মাত্রার স্টেরয়েড ডেক্সামেথাসোন প্রাণঘাতী রোগ কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি 'যুগান্তকারী আবিষ্কার' বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরা।

এই ওষুধ ব্যবহার করে ভেন্টিলেটরে থাকা রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি এক তৃতীয়াংশ নামিয়ে আনা যাবে। আর যাদের অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার এক পঞ্চমাংশ কমানো যাবে, বলছেন গবেষকরা।

গবেষকরা আরও জানান, যুক্তরাজ্যে মহামারীর শুরুতেই এই চিকিৎসা দেওয়া গেলে পাঁচ হাজার জীবন বাঁচানো যেত, বলছেন তাঁরা। একই সঙ্গে কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় এর মাধ্যমে দরিদ্র দেশগুলোও দারুণভাবে উপকৃত হত। 

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্য সরকার ডেক্সামেথাসোনের বড় সংগ্ৰহ গড়ে তুলেছে ইতোমধ্যেই। ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস ভেন্টিলেটর এবং অক্সিজেন নিচ্ছে এমন রোগীদের চিকিৎসার এ ওষুধ সহজলভ্য নিশ্চিত করেছে। 

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ২০ জনের মধ্যে ১৯ জনই হাসপাতলে ভর্তি না হয়েও সুস্থ হয়ে ওঠেন। আর যারা হাসপাতালে ভর্তি হন, তাদের মধ্যেও বেশিরভাগই সুস্থ হয়ে ওঠে শেষ পর্যন্ত, তবে কারও কারও ক্ষেত্রে অক্সিজেন ও ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন হতে পারে।

উচ্চ ঝুঁকির বা গুরুতর অসুস্থ রোগীর ক্ষেত্রেই ডেক্সামেথাসোন বরং বেশি কাজ করে। ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে প্রদাহ নিরাময়ে এই ওষুধ আগে থেকেই ব্যবহার হয়েছে আসছে।

এই পরীক্ষায়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২ হাজার রোগীকে এই ডেক্সামেথাসোন প্রয়োগ করে, আর বিপরীতে ৪ হাজার রোগীকে ডেক্সামেথাসন প্রয়োগ থেকে বাইরে রেখে পর্যবেক্ষণ করেন। এতে দেখা যায়, ভেন্টিলেশনে থাকা রোগীর  মৃত্যুঝুঁকি ৪০ শতাংশ থেকে কমে এসেছে ২৮ শতাংশে। আর যেসব রোগীর অক্সিজেন প্রয়োজন তাদের মৃত্যুঝুঁকি কমিয়ে আনে ২৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে। 

গবেষক দলের প্রধান প্রফেসর পিটার হরবি বলেন, "এখনও পর্যন্ত এটাই একমাত্র ওষুধ যা মৃত্যুর ঝুঁকি কমিয়েছে। এটা উল্লেখযোগ্য রকম মৃত্যু ঝুঁকি কমিয়েছে। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।"

প্রধান গবেষক অধ্যাপক মার্টিন ল্যানড্রে বলছেন, "এই পরীক্ষার ফলাফল থেকে দেখা যাচ্ছে যে, ভেন্টিলেটারে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে এমন প্রতি আট জন রোগীর মধ্যে একজনের প্রাণ এই ওষুধ দিয়ে বাঁচানো সম্ভব।"

"এই চিকিৎসায় রোগীকে ডেক্সামেথাসোন দিতে হবে ১০দিনের জন্য। এর জন্য খরচ হবে রোগী প্রতি ৫ পাউন্ড। আর এ ওষুধটি পৃথিবীর সব দেশেই পাওয়া যায়।"

অধ্যাপক ল্যানড্রে বলছেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীকে প্রয়োজনে দেরি না করে এখনই এই ওষুধ দেয়া উচিত। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন যে, কেউ যেন এই ওষুধ বাজার থেকে কিনে ঘরে মজুত না করেন।

যাদের করোনাভাইরাসের হালকা উপসর্গ রয়েছে শুধু, অর্থাৎ শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে চিকিৎসকের সাহায্যের প্রয়োজন পড়ছে না, তাদের জন্য ডেক্সামেথাসোন কাজ করবে না।

গত মার্চ মাস থেকে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হচ্ছিল। যেসব ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা চালানো হচ্ছিল তার মধ্যে ছিল হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনও। এই ওষুধটি পরীক্ষার পরে বাতিল করে দেয়া হয়, কারণ এই ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় হার্টের সমস্যা এবং অন্য প্রাণনাশক প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি দেখা দেয়।

আরেকটি ওষুধ রেমডেসিভির, যেটি অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি ভাইরাস থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার সময় কিছুটা তরান্বিত করতে পারে বলে প্রতীয়মান হওয়ার পর করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় এই ওষুধের ব্যবহার ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।

সূত্র: বিবিসি   

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.