যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের প্রায় সব রেমডিসিভির ওষুধ কিনে নিয়েছে

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক
01 July, 2020, 04:50 pm
Last modified: 01 July, 2020, 10:24 pm
যুক্তরাষ্ট্রে যখন মহামারি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে, ঠিক তখনই আনুষ্ঠানিকভাবে অধিকাংশ চালান কিনে নেওয়ার চুক্তিটি প্রকাশ করে ট্রাম্প প্রশাসন। 

কোভিড-১৯ সংক্রমণ চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত প্রমাণিত দুটি ওষুধের মধ্যে একটি হচ্ছে- রেমডিসিভির। ওষুধটির আগামী তিন মাসের প্রায় সব চালান অগ্রিম কিনে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে বাকি বিশ্বকে এই ওষুধটি ছাড়াই এখন করোনা মোকাবিলার যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হবে। 

জীবন রক্ষাকারী একটি ওষুধের চালান এভাবে কুক্ষিগত করে রাখার একক মার্কিন পদক্ষেপে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞ এবং অধিকার কর্মীরা। এই সিদ্ধান্তের প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে চলেছে বলেই ধারণা তাদের। বিশেষ করে, করোনাভাইরাসের স্থায়ী কোনো ওষুধ বাজারে আসলে তখন যুক্তরাষ্ট্র কী করবে, সেটা ঘিরেই উদ্বেগ তাদের। 

উদ্বেগের সবচেয়ে বড় কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। ইতোমধ্যেই মার্কিন সরকার নিজ দেশের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাকি বিশ্বের চাইতে বেশি দামে কিনে মজুদ করছে। নিজ দেশে উৎপাদিত ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম রপ্তানি বন্ধেও পদক্ষেপ নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। খবর দ্য গার্ডিয়ানের। 

লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ভিজিটিং রিসার্চ ফেলো ডক্টর আন্ড্রু হিল বলেন, অধিকাংশ জরুরি ওষুধের চালান বিশ্ববাজার থেকে সরিয়ে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপের জন্য কিছুই অবশিষ্ট রাখছে না। 

এদিকে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় মার্কিন ওষুধ প্রশাসনের প্রথম অনুমোদিত ওষুধ হচ্ছে রেমডিসিভির। জিলিয়াড ফার্মার তৈরি এ ওষুধ আক্রান্ত রোগীদের রোগটি থেকে দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করে বলে প্রমাণিত হয়েছে।

ওষুধটির কার্যকারিতা পরীক্ষায় বিশ্বব্যাপী এক লাখ ৪০ হাজার ডোজ পাঠায় কোম্পানিটি। যার অধিকাংশই ব্যবহৃত হয়েছে ইতোমধ্যেই। 

বৈশ্বিক পরীক্ষার ব্যাপক সফলতার পরই রেমডিসিভিরের ৫ লাখ ডোজ কিনে নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। চলতি জুলাই থেকে শুরু করে আগামী আগস্ট ও সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ পরিমাণ ওষুধ জিলিয়াডের মোট উৎপাদন সক্ষমতার ৯০ শতাংশ। 

নিজেদের বাহাদুরি নিয়ে অবশ্য সন্তুষ্ট মার্কিন সরকারের সংশ্লিষ্টরা। দেশটির জনস্বাস্থ্য এবং মানব পরিষেবা মন্ত্রী অ্যালেক্স আজার বলেন, ''অনুমোদিত ওষুধ যেন মার্কিন নাগরিকদের নাগালে থাকে তা নিশ্চিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অসাধারণ এক কাজ করেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা চাই যেসব মার্কিন নাগরিকের রেমডিসিভির প্রয়োজন, তারা যেন সেটি পান। জীবনদায়ী এবং অনুমোদিত ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিতে ট্রাম্প প্রশাসন নিজ সক্ষমতার সবটুকু ক্ষমতার প্রয়োগ করবে।''

অ্যান্থনি ফাউচি। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

মূলত, আরেক প্রাণঘাতী ভাইরাস ইবোলা ঠেকাতেই এই ওষুধ আবিষ্কার করে জিলিয়াড, যার মেধাস্বত্ব অধিকার কোম্পানিটির রয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, চাইলেই যে কোনো ধনী দেশও এটি বৈধভাবে উৎপাদন করতে পারবে না। মার্কিন সরকারের বিবৃতি অনুসারে, রোগীপ্রতি রেমডিসিভিরের ছয়টি ডোজ প্রয়োজন হয়, যার মূল্য ধরা হয়েছে ৩,২০০ ডলার। 

যুক্তরাষ্ট্রে যখন মহামারি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে, ঠিক তখনই আনুষ্ঠানিকভাবে অধিকাংশ চালান কিনে নেওয়ার চুক্তিটি প্রকাশ করে ট্রাম্প প্রশাসন। 

এর আগে অ্যালার্জি ও সংক্রমক ব্যাধি প্রতিরোধ কেন্দ্রের প্রধান এবং হোয়াইট হাউসের শীর্ষ জনস্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ডা. অ্যান্থনি ফসি- দেশটিতে করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি উন্নতি না হয়ে বরং অবনতি হচ্ছে বলে জানান মার্কিন সিনেটকে।

এসময় ফসি বলেন, ''আমাদের উল্টোযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। গত এক সপ্তাহে দৈনিক ৪০ হাজারের বেশি নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নয়নে সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়া হলে, দৈনিক সংক্রমণ এক লাখে পৌঁছালেও আমি অবাক হব না।''

স্বম্ভাব্য মৃতের সংখ্যা নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ''সঠিক সংখ্যা অনুমান করা কষ্টকর, তবে সেটি যে ভয়ঙ্কর কিছু হতে চলেছে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই, যা আমি আপনাদের গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি।'' 

যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত ২৫ লাখ সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে। অর্থনীতিকে সচল করার চেষ্টায় আরোপিত কড়াকড়ি শিথিলের পরই কিছু কিছু রাজ্যে সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করে।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.