করোনার বিরুদ্ধে বিজয় ঘোষণা যে প্রেসিডেন্টের

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক
22 October, 2020, 06:25 pm
Last modified: 22 October, 2020, 06:40 pm
তানজানিয়ায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর নাগরিকদের ঘরে থাকার পরিবর্তে গির্জা ও মসজিদে গিয়ে প্রার্থনা করার নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্ট জন ম্যাগুফুলি। মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখারও বিরোধিতা করেন।

করোনাভাইরাস মহামারি সংক্রান্ত নীতি ও বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছেন তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট জন ম্যাগুফুলি। পূর্ব আফ্রিকান দেশটিতে করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ঘরে থাকার পরিবর্তে নাগরিকদের গির্জা ও মসজিদে গিয়ে প্রার্থনা করার নির্দেশ দেন তিনি।

২২ মার্চ দেশটির রাজধানী দোদোমার একটি গির্জায় দেওয়া এক বক্তব্যে করোনাভাইরাসকে তিনি 'শয়তান' বলে অভিহিত করে বলেন, যিশু খ্রিস্টের সান্নিধ্যে থাকলে এ ভাইরাস আক্রান্ত করতে পারবে না। পরবর্তীকালে তিনি মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখারও বিরোধিতা করেন।

তানজানিয়ার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকবে না- ঘোষণা দিয়ে লকডাউন জারি করায় পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সমালোচনা করেন ম্যাগুফুলি।

২০১৫ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সৎ ও যোগ্য হিসেবেই সুনাম ছিল তার। দায়িত্বগ্রহণের কিছুদিনের মধ্যেই সরকারি চাকরিজীবীদের দুর্নীতি রোধে পদক্ষেপ নেন। প্রথমবারের মতো দেশটির স্বাধীনতা দিবস উদযাপন বাতিল করে সেই অর্থ দিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালান। তবে ধীরে ধীরে তার নেতৃত্বে গণতন্ত্রবিরোধী আচরণও প্রকাশ পেতে থাকে।

তানজানিয়ান গায়ক নায় ওয়া মিতেগো

র‍্যাপ গানের কথাই যখন বাস্তবতা

তার ক্ষমতা গ্রহণের দুই মাসের মধ্যেই রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলে সংসদীয় অধিবেশন প্রচার বন্ধের ঘোষণা আসে। বিরোধী দল এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করলে এ সংক্রান্ত আন্দোলন নিষিদ্ধ করা হয়।

২০১৭ সালে একটি গানের জন্য গ্রেপ্তার হন জনপ্রিয় তানজানিয়ান গায়ক নায় ওয়া মিতেগো। ফলে, 'কথা বললেই যদি গ্রেপ্তার হতে হয়'- গানটির বাণীতে থাকা এমন আশঙ্কাই সত্য হয়। প্রেসিডেন্টকে অপমান ও সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনার অভিযোগ আনা হয় ওই গায়কের বিরুদ্ধে।

স্কুলগামী কোনো শিক্ষার্থী গর্ভবতী হলে, সন্তান জন্মদানের পর তারা পুনরায় শিক্ষাজীবন শুরু করতে পারবে না- এমন আদেশ জারি করা হয়। ২০১৮ সালে কোনো নাগরিক প্রশাসনিক তথ্যের ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করলে শাস্তির বিধান রেখে আইন জারি করা হয়।

কয়েক সপ্তাহ বন্ধ রেখে আবারও খুলে দেওয়া হয় স্কুল। ছবি: গেটি ইমেজ

মহামারির তথ্য গোপন

বিগত মাসগুলোতে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত কার্যক্রমের কারণে আন্তর্জাতিক মহলে জন ম্যাগুফুলির সমালোচনা শুরু হয়। ১৬ মার্চ দেশটিতে প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার পর শুধু শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়।  
খেলাধুলার কার্যক্রম এবং সীমান্ত বন্ধ করতে সময় তার সরকার নেয় আরও এক মাস।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আফ্রিকা অঞ্চলের পরিচালক মাতশিদিসো মোয়েতি জানান, সংক্রমণ রোধে তানজানিয়া খুবই ধীর গতিতে পদক্ষেপ নিচ্ছে। মার্কেট, অফিস, প্রার্থনাগৃহ- সবই স্বাভাবিক সময়ের মতো খোলা ছিল। 

মাগফুলি তার ঘোষণায় জানান, 'আমরা এইডস, হামসহ অনেক সংক্রামক রোগ মোকাবেলা করেছি। অর্থনীতি সচল রাখাই আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার। আফ্রিকার অন্য দেশগুলো অর্থনীতির গতিরোধের কারণে বিপর্যয়ের সম্মুখীন এবং সামনের দিনগুলোতে খাদ্যের জন্য তানজানিয়ার দ্বারস্থ হবে।'

সামাজিক দূরত্ব মানার ব্যাপারেও আপত্তি ছিল প্রেসিডেন্টের। ছবি: গেটি ইমেজ

জুনের প্রথমদিকেই মাগফুলি এক ঘোষণায় তানজানিয়াকে করোনামুক্ত দাবি করেন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনাভাইরাস চিকিৎসা ও দেশের বিভিন্ন স্থানের আইসোলেশন কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। মে মাসেই তানজানিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রকাশ বন্ধ করে দেয়; ২৯ এপ্রিলের সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী দেশটিতে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫০৯।

তানজানিয়ার বিশ্লেষক আইডান ইয়াকুজ জানান, তথ্যের গোপনীয়তার মধ্যমে দেশটির কার্যক্রম পরিচালিত হয়। গণমাধ্যম ও দাতব্য সংস্থাগুলোকে হাসপাতালের অবস্থা পরিদর্শনের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

বিরোধিতা ও প্রতিবাদকারীদের হতে হয়েছে নিপীড়নের শিকার। ছবি: গেটি ইমেজ

প্রতিবাদ ও নির্যাতন 

বিরোধী দলের ওপর অত্যাচার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের জন্য রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী, সুশীল সমাজ ও পশ্চিমা দেশগুলোর কঠোর সমালোচনার মুখেই দ্বিতীয় মেয়াদের নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন জন ম্যাগুফুলি। দেশটির খুব কম মানুষই তার কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা বলেছেন। যারা প্রতিবাদ করেছেন, পরবর্তীকালে তার ফল ভোগ করতে হয়েছে তাদের।

বিরোধী দলীয় নেতা জিটো কাবউই জানান, প্রেসিডেন্টের ঘোষণাই এখানে চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়।

২০১৬ সাল থেকে জিটো অন্তত ১২ বার গ্রেপ্তার হন। জুলাইয়ে সংবাদ সংস্থা এপি-কে তিনি বলেন, 'রাষ্ট্র চায় আমরা চুপ থাকি। মুখ বন্ধ রাখতে আমাদের হুমকি দেওয়া হয়। প্রতিবাদ করাই আমাদের জন্য সর্বোত্তম পন্থা।'

নির্বাচনে জন ম্যাগুফুলির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চাদেমা পার্টির টুন্ডু লিসু। ২০১৭ সালে হত্যার উদ্দেশ্যে তার ওপর আক্রমণ চালানো হয়। প্রাণে বেঁচে গেলেও দীর্ঘ তিন বছর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। এখনো ওই হামলা মামলার রায় দেওয়া হয়নি। পুলিশের তদন্তের অগ্রগতির ব্যাপারেও কোনো তথ্য জানানো হয়নি আর। 

কিছুদিন আগেই প্রেসিডেন্টকে অসম্মানের অভিযোগ এনে সাতদিনের জন্য লিসুর নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধের আদেশ দেওয়া হয়।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কখনো হারেননি জন ম্যাগুফুলি। ছবি: গেটি ইমেজ

ক্ষমতাসীন থাকায় আসন্ন নির্বাচনে বাড়তি সুবিধা পাবেন ম্যাগুফুলি। তার দল ইতোপূর্বে কখনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হারেনি। বিরোধী দলের টুন্ডু লিসু অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানবাধিকার সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নির্বাচনী প্রচারণায়। আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী এসিটি-ওয়াজালেন্দো পার্টির বার্নার্ড মেমবে।

দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হলে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ম্যাগুফুলি। তবে তার সরকার পরিচালনার নীতি পরিবর্তিত না হওয়া পর্যন্ত ভবিষ্যতের ব্যাপারে ভীতি প্রকাশ করেন কিছু বিরোধী দলীয় নেতা, সাংবাদিক ও সমালোচক।

  • সূত্র: বিবিসি

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.