করোনাভাইরাসের দক্ষিণ আফ্রিকার ধরন ফাইজার ভ্যাকসিনের সুরক্ষা ব্যবস্থা ভাঙতে পারে: গবেষণা

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক
11 April, 2021, 02:30 pm
Last modified: 11 April, 2021, 02:57 pm
ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ নেওয়া রোগীদের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার ভাইরাসের ধরনের সংক্রমণ ভ্যাকসিন না নেওয়া রোগীদের চেয়েও আট গুণ বেশি ছিল। দুটি ডোজ নেওয়া রোগীদের মধ্যে এ হার ছিল ৫.৪ শতাংশ, অন্যদিকে ভ্যাকসিন না নেওয়া রোগীদের মধ্যে এ হার ছিল ০.৭ শতাংশ। 

দক্ষিণ আফ্রিকার করোনার ধরন ফাইজার/বায়োএনটেকের ভ্যাকসিনের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে বলে জানা গেছে সাম্প্রতিক প্রকাশিত এক ইসরায়েলি গবেষণা থেকে। যদিও খুব বেশি মানুষের ওপর গবেষণা চালানো হয়নি এবং গবেষণাপত্রটি এখনো পিয়ার রিভিউড নয়। 

শনিবার প্রকাশিত গবেষণাটিতে ভ্যাকসিনের প্রথম বা দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ১৪ দিন বা এর বেশি সময় পর কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়া প্রায় ৪০০ জনের সাথে ভ্যাকসিন না নেওয়া একই সংখ্যক রোগীর তুলনামূলক পর্যালোচনা করা হয়। 

গবেষণায় অংশ নেওয়া রোগীদের ১ শতাংশ রোগী B.1.351 নামের দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ধান পাওয়া করোনাভাইরাসের এ ধরনটি দ্বারা আক্রান্ত ছিলেন। তেল আবিব ইউনিভার্সিটি এবং ইসরায়েলের বৃহত্তম স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ক্লাইটের সমীক্ষায় এসব তথ্য জানা যায়। 

তবে ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ নেওয়া রোগীদের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার ভাইরাসের ধরনের সংক্রমণ ভ্যাকসিন না নেওয়া রোগীদের চেয়েও আট গুণ বেশি ছিল। দুটি ডোজ নেওয়া রোগীদের মধ্যে এ হার ছিল ৫.৪ শতাংশ, অন্যদিকে ভ্যাকসিন না নেওয়া রোগীদের মধ্যে এ হার ছিল ০.৭ শতাংশ। 

এ ফলাফল থেকে গবেষকদের মত, করোনাভাইরাসের অন্যান্য ধরনের তুলনায় দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনটি কম কার্যকর।  

তেল আবিব ইউনিভার্সিটির আদি স্টার্ন বলেন, "ভ্যাকসিন না নেওয়া মানুষের তুলনায় ভ্যাকসিনের দুটি ডোজই নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে আমরা দক্ষিণ আফ্রিকার সংক্রমণ বেশি লক্ষ করেছি। অর্থাৎ, দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনটি ভ্যাকসিনের প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা হলে নষ্ট করতে সক্ষম।"

তবে ইসরায়েলে দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনের আক্রান্তের সংখ্যা খুবই কম হওয়া স্বল্প সংখ্যক নমুনা নিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছে বলে সতর্ক করেন গবেষকরা। 

তারা আরও জানান, কোনো নির্দিষ্ট ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনের সার্বিক কার্যকারিতার হার জানতে গবেষণাটি করা হয়নি। শুধু যারা ইতোমধ্যে আক্রান্ত ছিলেন তাদের ওপর গবেষণাটি চালানো হয়, তা সার্বিক সংক্রমণ হারের ব্যাপারে ধারণা দিতে পারে না। 

এব্যাপারে এখন পর্যন্ত ফাইজার ও বায়োএনটেকের মন্তব্য জানা যায়নি। 

প্রতিষ্ঠান দুটি গত ১ এপ্রিল জানায়, কোভিড-১৯ প্রতিরোধে তাদের ভ্যাকসিন ৯১ শতাংশ কার্যকর, ৬ মাস আগেই ভ্যাকসিন নেওয়া ট্রায়ালের অংশগ্রহণকারীদের নতুন তথ্য সংযোজন করে এ ফলাফল জানানো হয়।

দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনের ব্যাপারে তারা জানায়, দক্ষিণ আফ্রিকায় ভ্যাকসিন নেওয়া ৮০০ জন স্বেচ্ছাসেবীর মধ্যে নয়জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তবে তাদের সবাইকে প্লাসিবো শট দেওয়া হয়।  নয়জনের মধ্যে ছয়জনের শরীরে দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনের উপস্থিতি পাওয়া যায়।  

এর আগের কিছু গবেষণায় দেখা যায়, করোনাভাইরাসের অন্যান্য ধরনের তুলনায় দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনের বিরুদ্ধে ফাইজারের ভ্যাকসিন কম কার্যকর, তবে তাও সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখে। 
এ গবেষোণার ফলাফলকে ঘিরে উদ্বেগ তৈরি হলেও, খুব বেশি না ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারটি আশাব্যঞ্জক বলে জানান আদি স্টার্ন।

"দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনটি ভ্যাকসিনের সুরক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কিছুটা প্রতিরোধী হলেও এটি ব্যাপক পরিসরে ছড়িয়ে পড়েনি," 

হয়তো ব্রিটিশ ধরনটি এ ধরনের অধিক সংক্রমণ রোধ করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।  

ইসরায়েলের ৯৩ লাখ মানুষের ৫৩ শতাংশই ফাইজারের ভ্যাকসিনের দুটি ডোজই গ্রহণ করেছেন। সম্প্রতি বড় পরিসরে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গতি ফিরেছে দেশটির। দেশটিতে মহয়ামারির প্রাদুর্ভাবও কমে আসছে। সংক্রমণ হার, গুরুতর অসুস্থ হওয়া ও হাসপাতালে ভর্তির হারও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। ইসরায়েলের এক-তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠীর বয়সই ১৬ বছরের কম। অর্থাৎ এখনই ভ্যাকসিন নিতে পারবেন না তারা। 

  • সূত্র: রয়টার্স 
     

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.