ইন্দোনেশিয়ায় বিমান দুর্ঘটনায় নিখোঁজ যাত্রীদের সন্ধান পেতে স্বজনদের প্রতীক্ষা 

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক
11 January, 2021, 02:50 pm
Last modified: 11 January, 2021, 05:08 pm
মাত্র এক সপ্তাহ আগেই ২৯ বছর বয়সী আনগা প্রথমবারের মতো বাবা হন। আনগার মা জানান সে বড় কারগো জাহাজে নাবিকের কাজ করত। সন্তানের কথা ভেবে আনগা কাজে আরও বেশি সময় দেওয়া শুরু করেছিল। 

শ্রীবিজয়া এয়ারের বিধ্বস্ত উড়োজাহাজে অবস্থানরত ক্রু এবং যাত্রীরা কেউ বেঁচে নেই বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিপর্যস্ত স্বজনেরা মর্মান্তিক এই পরিণতি মেনে নিয়ে এখন উদ্ধার অভিযান সম্পন্ন হওয়ার অপেক্ষায় আছেন। 

শনিবার জাকার্তা থেকে উড্ডয়নের কয়েক মিনিটের মাঝেই বিমানটি ক্রুসহ ৬২ জন যাত্রী নিয়ে সমুদ্রে নিমজ্জিত হয়। এখন পর্যন্ত অফিশিয়ালি যাত্রীদের তালিকা প্রকাশ করা না হলেও স্বজন ও বন্ধুদের থেকে মিলছে যাত্রীদের পরিচয়।

বিবিসি ইন্দোনেশিয়ার দ্বিকি মারতা এবং উইদিয়ানিংসিহের প্রতিবেদনে মিলেছে বেশ কয়েকজন যাত্রীর পরিচয়।

ক্যাপ্টেন আফওয়ান- 'দয়ালু' ও 'বিজ্ঞ' পাইলট 

"আংকেল সবসময় পরিপাটি হয়ে ঘর থেকে বের হতেন। কিন্তু সেদিন তিনি শার্ট ইস্ত্রি করার সুযোগ পাননি। তিন সন্তানকে ফেলে যেতে হচ্ছে বলে বের হওয়ার আগে তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন।"   – বিমর্ষভাবে বলছিলেন পাইলট আফওয়ানের ভাগ্নে ফারজা মাহার্ধিকা।

৫৪ বছর বয়সী ক্যাপ্টেন আফওয়ান ইন্দোনেশিয়ার এয়ার ফোর্সে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৮৭ সালের পর তিনি বাণিজ্যিক পাইলট হিসেবে বিমান চালনা শুরু করেন। আফওয়ান শ্রীজয়া এসজে১৮২ ফ্লাইট পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন।

আফওয়ানের বন্ধু ও স্বজনদের থেকে জানা যায় তিনি একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম ছিলেন। যেকোনো বিপদ-আপদে সবার আগে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার প্রোফাইলে গিয়ে দেখা যা‍য়, সুপারম্যানের একটি কার্টু্ন ছবি দেয়া আছে। সেখানে লেখা- 

"তুমি যত উঁচুতেই উড়াল দেও না কেন, প্রার্থনা ব্যতীত স্বর্গে পৌঁছাতে পারবে না।"  

স্বজনরা আফওয়ানের এই মর্মান্তিক পরিণতি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না।

আনগা ফারনানদা আফ্রিয়ন- সদ্য পিতা হওয়া নাবিক 

মাত্র এক সপ্তাহ আগেই ২৯ বছর বয়সী আনগা প্রথমবারের মতো বাবা হন। আনগার মা জানান সে বড় কারগো জাহাজে নাবিকের কাজ করতেন। সন্তানের কথা ভেবে আনগা কাজে আরও বেশি সময় দেওয়া শুরু করেছিলেন। 

"আনগা কাজের জন্য প্রায়ই ট্যুর দিতে হত। কিন্তু উড়োজাহাজের চাইতে সে সমুদ্রপথেই বেশি যাতায়াত করত। আনগার জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। জাহাজ সারাইয়ের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাকে জরুরি ভাবে ডেকে নেয়।"  

আনগা ফারনানদা আফ্রিয়ন ছবি হাতে তার মা।

আনগা ফারনানদার মা আফ্রিদা এখনও ছেলে ফিরে আসবে বলে আশা করেন। পশ্চিম সুমাত্রায় বসবাসরত এই নারী বিষাদভরা কন্ঠে জানান, "আমাদের জাকার্তার আত্মীয়রা আমার ছেলেকে খুঁজছে। মহামারির জন্য আমিও যেতে পারছি না।"   

"আমার ছেলে যদি বেঁচে নাও থাকে, আমি তবু ওর শরীরটা চাই। ঘরে ফিরিয়ে এনে ওকে অন্তত যথাযথভাবে দাফন করব।"  -  ছেলের ইউনিফর্ম পরিহিত ছবি হাতে  নিয়ে আর্তনাদ করছিলেন এই মা।

ইহসান আদলান হাকিম ও পুত্রী ওয়াহিউনি-  নব বিবাহিত দম্পতি 

কালিমান্তানে আত্মীয়ের বিয়েতে অংশ নিতে যাচ্ছিলেন নববিবাহিত দম্পতি ইহসান আদলান হাকিম ও পুত্রী ওয়াহিউনি।

"আগামী শনিবার বিয়েতে অংশ নিতে তারা সবরকম পরিকল্পনা করেছিল। বিমান বন্দর থেকে ইহসান ফোন দিয়ে জানায় খারাপ আবহাওয়ার জন্য ফ্লাইটে দেরী হবে।"   –বলেন ইহসানের ছোট ভাই আরউইন আমরু হাকিম। 

"কিন্তু এখন সব শেষ। আমরা পুরো পরিবার মিলে কেবল প্রার্থনা করছি।"   

ইনদাহ হালিমা পুত্রী, মুহাম্মাদ রিজকি ওয়াহিউদি ও তাদের সন্তান- সদ্য মা-বাবা হওয়া দম্পতি ও তাদের সন্তান 

শ্রীজয়া এয়ার এসজে১৮২ বিধ্বস্তের খবর শুনে অজ্ঞান হয়ে যান ইউরিলানিতা। সন্তানসহ ফ্লাইটে ছিল মেয়ে ইনদাহ হালিমা পুত্রী ও তার স্বামী মুহাম্মদ রিজকি ওয়াহিউদি। 

ইনদাহ সন্তানের জন্ম দিতে মায়ের বাড়িতে এসেছিল। পনটিয়ানাকে ইনদাহ স্বামী-সন্তানসহ ঘরে ফিরে যাচ্ছিল। স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিমান উড্ডয়নের পূর্বে ইনদাহ হোয়াটস অ্যাপে পরিবারের কাছে বিমানের ছবি পাঠান। তীব্র বৃষ্টিপাতের জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনাও করেন তিনি।

এদিকে কর্তৃপক্ষ পনটিয়ানাক বিমানবন্দরে নিখোঁজ যাত্রীদের চিহ্নিত করতে স্বজনদের ডিএনএ সংগ্রহের জন্য বিশেষ কেন্দ্র স্থাপন করেছে।

পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট সিনিয়র কমিশনার ইয়ানি পারমানা জানায়, "ভিক্টিমদের স্বজনদের কাছ থেকে ডিএনএ সংগ্রহে সহায়তার জন্য আমরা ৫১ জন কর্মী নিয়োগ করেছি।"   

অনেক পরিবারকে দূর থেকে আসতে হচ্ছে। এ কার্যক্রম শেষ হতে তাই আরও অন্তত দুইদিন সময় লাগবে বলে জানা যায়। 

  • সূত্র: বিবিসি 
     

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.