ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি জার্মানি বাম-শাসিত হলে কী হবে?

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক
26 September, 2021, 09:35 pm
Last modified: 27 September, 2021, 11:33 am
প্রাক-নির্বাচনী জরিপগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে, ক্ষমতার পালাদবদলের ধূলিঝড় থিতু হলে বামঘেঁষা সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এসপডি’র নেতা ওলাফ শুলৎজের চ্যান্সেলর হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

১৬ বছর জার্মানির চ্যান্সেলর পদে থাকার পর চলতি নির্বাচনের পর অবসরগ্রহণ করছেন অ্যাঞ্জেলা মেরকেল। গণতন্ত্রকে সম্মান জানিয়ে তাঁর এ বিদায়ের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতিতে হতে পারে নতুন যুগের সূচনা।

আজ রোববারে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল আন্দাজ করাটা সহজ নয়। কোয়ালিশন সরকারও হতে পারে, সেক্ষেত্রে জোট গঠনে লাগতে পারে আরও কয়েক সপ্তাহ বা মাস। প্রাক-নির্বাচনী জরিপগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে, ক্ষমতার পালাদবদলের ধূলিঝড় থিতু হলে বামঘেঁষা সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এসপডি'র নেতা ওলাফ শুলৎজের চ্যান্সেলর হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

মেরকেল সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে জার্মান অর্থনীতিকে মহামারির মধ্যে পরিচালনার ভার ছিল শুলৎজের কাঁধেই।

নির্বাচনে নতুন দল গ্রিন পার্টির পার্লামেন্ট আসন সংখ্যাও দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ব্যবসা সহযোগী ফ্রি ডেমোক্রেটিক পার্টির সাথে জোট গঠন করতে পারে শুলৎজের এসপিডি ও গ্রিন পার্টি। এতে তারা দেশের অর্থনৈতিক এজেন্ডা বামধারায় চালিত করার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে।

উভয় দলের নেতারাই ক্ষমতায় গেলে ডিজিটাইজেশন ও জলবায়ু নীতিকে দ্বিগুণ গুরুত্ব সহকারে নেবেন, তবে একইসঙ্গে তাদের অধীনে সরকারি দেনা বৃদ্ধির আশঙ্কাও রয়েছে।

এ ব্যাপারে ডাচ বহুজাতিক ব্যাংক ও আর্থিক সেবাদানকারী কোম্পানি আইএনজি গ্লোবালের বৈশ্বিক সামষ্টিক অর্থনীতি গবেষণা বিভাগের প্রধান কার্সটেন বারজেস্কির মন্তব্য, "উদারপন্থী ও গ্রিনরা একসঙ্গে জোট গঠন করলে জার্মান সরকার ব্যবস্থায় সবচেয়ে নতুনতম ও উদ্ভাবনী শক্তির নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা হবে, যা বিগত সময়ে তেমন একটা চোখে পড়েনি।"

আগে খরচ, পরে ভাবনা?

জার্মানি শুধু ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি নয়, বরং অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি বা ভরকেন্দ্র। তাই বৈশ্বিক ব্যাংকগুলোর তীক্ষ্ম নজরে রয়েছে এবারের নির্বাচন। মেরকেল পরবর্তী সরকার কাঠামো তারা বেশকিছু বিশ্লেষণও করেছে।

অধিকাংশের মতে, নির্বাচন পরবর্তী সময়ে দলগুলোর জোট গঠনের প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে বিনিয়োগকারীদের তারা দুই ধরনের সম্ভাব্য পরিস্থিতি সামনে রেখে প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে: প্রথমটি হলো- এসপিডি, গ্রিন ও এফডিপির জোট সরকার। আর দ্বিতীয় সম্ভাবনা আর্মিন ল্যাসচেটের নেতৃত্বে মেরকেলের নিজ দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ)- এর সামান্য ব্যবধানে জয়। কিন্তু, অল্প আসনের ব্যবধানে জিতলে সিডিইউ'কে এফডিপি বা গ্রিন পার্টির সাথে কোয়ালিশন গঠন করতে হবে। 

প্রথম সম্ভবনাটি বাস্তব হলে তারা বামঘেঁষা নীতির দিয়ে ঝুঁকবে, তবে এসপিডি, গ্রিন ও কট্টর বাম ডাই লিঙ্ক- এর মধ্যে জোট হলে যতোটা নাটকীয় হতো, তার চেয়ে কম হবে। আর যদি ডাই লিঙ্কে জোটে স্থান পায়- তাহলে সম্পদ পুনঃবণ্টন ও কর রেয়াতের নতুন উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা দেখা যাবে। বিশ্লেষকরা এমন সম্ভবনা খুব কম থাকার আভাস দিলেও, সত্যিই যদি তা হয়-তাহলে বিনিয়োগকারীরা অপ্রস্তুত অবস্থার মধ্যে পড়বেন।

তবে জোট গঠনে যে সমীকরণই কাজ করুক, দিনশেষে নতুন ক্ষমতাসীনদের প্রধান দায়িত্ব হবে করোনাভাইরাস মহামারি থেকে দেশটির চলমান অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ব্যবস্থাপনার হাল ধরা।

অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট- ওইসিডি'র পূর্বাভাস অনুসারে, চলতি বছর জার্মান অর্থনীতি ২.৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে রয়েছে, যা অক্ষুণ্ণ রাখা গেলে আগামী বছর ৪.৬ শতাংশে উন্নীত হবে। মহামারির প্রথম বছর ২০২০ সালে ৪.৯ শতাংশ সংকোচনের পর ফের দেখা যাচ্ছে এই গতি।

কিন্তু, সাম্প্রতিক তথ্যাবলী দিচ্ছে বিপদের সংকেত, যেখানে প্রবৃদ্ধি গতি হারানোর দিকটি উঠে আসছে। জার্মানির ব্যবসায়ীক পরিবেশ বিশ্লেষণকারী ইফো সূচকের মতে, চলতি সেপ্টেম্বরে টানা তৃতীয় মাসের ন্যায় কমেছে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশ। গত শুক্রবার ইফো তাদের ইনডেক্স প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

জার্মানির উৎপাদিত ভারি বা মূলধনী যন্ত্রপাতির সবচেয়ে বড় ক্রেতা চীন। কিন্তু, চীনেও বিকাশের গতি কমায়, ব্যাহত হচ্ছে সরবরাহ চক্র। তার সঙ্গে জ্বালানি গ্যাসের দরের ঊর্ধ্বগতিতে বাড়তি মূল্য চুকাতে হচ্ছে জার্মানদের।

পেছনমুখী শক্তির এ টান নতুন নেতৃত্বকে জার্মানির অতি-সংযত বলে কুখ্যাত বার্ষিক বাজেট নীতি বর্জনে উৎসাহী করতে পারে। ফলে তারা স্থানীয় অর্থনীতিকে সহায়তা দেওয়ার বাড়তি সুযোগ পাবেন।

২০০৯ সালে সংবিধানে সরকারি দেনা সীমিত রাখার একটি আইনটি সংযোজিত হয়। বৈশ্বিক আর্থিক সংকট পরবর্তী সময়ে এর ফলে ব্যাপক মাত্রায় কমে যায় সরকারের ঋণ নেওয়ার প্রবণতা, বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে ছাড়া এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। তবে মহামারির কারণে দেনা সীমিত রাখার এ আইন ২০২৩ সাল পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়েছে। যেকারণে জার্মান সরকারের ঋণগ্রহণও প্রায় লাফ দিয়ে বেড়েছে, ২০২০ সালে দেশটির দেনার সাথে জিডিপি'র রেশিও ছিল প্রায় ৭০ শতাংশ। 

বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের দেনার তুলনায় এ অনুপাত অবশ্য কিছুই নয়, যুক্তরাষ্ট্রে এখন দেনা বার্ষিক জিডিপি'কে ছাড়িয়ে যাওয়ার অনুমান করা হচ্ছে। অর্থাৎ, বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে জার্মানির সামনে দেনা আরও বৃদ্ধির সুযোগ আছে।

কিন্তু, জার্মানির মধ্যপন্থী দলগুলো সরকারি অর্থায়নকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। অন্যদিকে, গ্রিন পার্টি চায় দেনা সংক্রান্ত আইনের শিথিলতা।

ইউবিএস ব্যাংকের কৌশলবিদ ডিন টার্নার ও ম্যাক্সিমিলান কুঙ্কেল অবশ্য মনে করেন, সরকারি দেনা নিয়ন্ত্রণের আইনটি বাতিল করা সহজ হবে না। কারণ এজন্য দুই-তৃতীয়াংশ সাংসদের সমর্থন প্রয়োজন হয়। 

এরপরও তারা মনে করেন, জার্মানির নতুন নেতারা অন্য উপায় খুঁজে নিয়ে ব্যয় বাড়াতে পারেন। যেমন- জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ব্যয় বৃদ্ধি। গত জুলাইয়ের ভয়াবহ বন্যার পর এই ইস্যুটি জার্মানদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

টার্নার ও কুঙ্কেল তাদের সাম্প্রতিক গবেষণা নোটে লিখেছেন, "জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার বিষয়ে সব দলই একমত হবে। তাই যে জোট সরকারই আসুক, সবুজ অর্থনীতির বিকাশ ও পরিবেশ সহযোগী প্রকল্পে বিনিয়োগ বাড়তে দেখা যাবে।"
 

  • সূত্র: সিএনএন

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.