আফগানিস্তান: রাষ্ট্রপতি ভবনে তালেবান নেতাদের ধস্তাধস্তি

আন্তর্জাতিক

টিবিএস ডেস্ক
15 September, 2021, 12:55 pm
Last modified: 15 September, 2021, 10:24 pm
সরকার ব্যবস্থায় বারাদার তার নিজের মতের সঙ্গে মেলে, এমন লোকদের নিয়ে কূটনীতি পরিচালনার উপর জোর দিয়েছেন; অন্যদিকে, তালেবানের সিনিয়র ব্যক্তিত্ব দ্বারা পরিচালিত হাক্কানি গোষ্ঠীর  সমর্থকরা মনে করেন, এই বিজয় যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে।

আফগানিস্তানে নতুন সরকার গঠনকে কেন্দ্র করে তালেবানের নেতাদের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। তালেবানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিবিসি নিউজকে এ বিরোধের খবর নিশ্চিত করেছেন।

রাষ্ট্রপতি ভবনে বৈঠক চলাকালে দলের যুগ্ম-প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদার এবং মন্ত্রিসভার একজন সদস্যের মাঝে বাকবিতণ্ডা হয়েছিল বলে জানান তারা।

গত কয়েকদিন ধরে মোল্লা বারাদার জনসম্মুখে না আসায় দলের মাঝে কোন্দল তৈরি হওয়াসহ বারাদারের মৃত্যুর গুঞ্জনও শোনা গিয়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

তবে, আনুষ্ঠানিকভাবে সেসব গুঞ্জন অস্বীকার করা হয়েছে।

গতমাসে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ দখলের পর তালেবান গোষ্ঠী দেশটিকে "ইসলামিক আমিরাত" হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। তাদের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভা সম্পূর্ণভাবে পুরুষতান্ত্রিক এবং দায়িত্ব প্রাপ্তসিনিয়র তালেবান কর্মকর্তাদের মাঝে এমন কয়েকজন ব্যক্তিও রয়েছেন, যারা গত দুই দশক ধরে মার্কিন বাহিনী ও বেসামরিক লোকেদের উপর হামলা চালানোর দায়ে অভিযুক্ত।

তালেবানের একটি সূত্র বিবিসি-কে জানিয়েছে, শরণার্থী মন্ত্রী এবং জঙ্গি সংগঠন হাক্কানি নেটওয়ার্কের  বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, খলিল উর রহমান হাক্কানির সঙ্গে মোল্লা বারাদারের বাকবিণ্ডার প্রেক্ষিতে তাদের অনুসারীরাও একে অপরের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়ে।

ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাতারভিত্তিক একজন সিনিয়র তালেবান সদস্য, গত সপ্তাহের শেষের দিকে দলের মাঝে মতবিরোধ ও বাকবিতাণ্ডার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

সূত্র জানায়, নতুন উপ -প্রধানমন্ত্রী বারাদার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাঠামো নিয়ে অসন্তুষ্ট হওয়ার জের ধরে এ কোন্দল শুরু হয়।

বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে তালেবান বিজয়ের কৃতিত্ব কাদের হওয়া উচিত তা নিয়ে দলের মাঝে এ ভাঙন দেখা দিয়েছে।

তালেবানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা

সরকার ব্যবস্থায় বারাদার তার নিজের মতের সঙ্গে মেলে, এমন লোকদের নিয়ে কূটনীতি পরিচালনার উপর জোর দিয়েছেন; অন্যদিকে, তালেবানের সিনিয়র ব্যক্তিত্ব দ্বারা পরিচালিত হাক্কানি গোষ্ঠীর  সমর্থকরা মনে করেন, এই বিজয় যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে।

প্রথম তালেবান নেতা হিসেবে মোল্লা বারাদার ২০২০ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি টেলিফোনালাপ করেছিলেন। এর আগে, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার সংক্রান্ত দোহা চুক্তিতেও সাক্ষর করেন তিনি।

এদিকে, শক্তিশালী হাক্কানি নেটওয়ার্ক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আফগান বাহিনী এবং তাদের পশ্চিমা মিত্রদের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানে সংঘটিত সবচেয়ে হিংস্র আক্রমণগুলোর সঙ্গে জড়িত। এই গোষ্ঠীকে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবেই চিহ্নিত করেছে।

হাক্কানি নেটওয়ার্কের অন্যতম নেতা সিরাজউদ্দিন হাক্কানি নতুন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

গত সপ্তাহের শেষের দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মোল্লা বারাদের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে তালেবান সূত্র বিবিসিকে জানায়, জনাব বারাদার কাবুলে নয়, কান্দাহার শহরে আছেন।

সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) মোল্লা বরাদারের কথিত একটি অডিও রেকর্ডিং থেকে জানা যায়, তিনি "সফরে ছিলেন"।

রেকর্ডিংয়ে তিনি বলেন, "এই মুহূর্তে আমি যেখানেই আছি, আমরা সবাই ভালো আছি।"

তালেবানের কয়েকটি অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সেই আডিও ক্লিপ আসলেই মোল্লা বারাদারের কিনা সে বিষয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি।

তালেবান প্রতিষ্ঠা মোল্লা ওমরের মৃত্যুর খবরও দলটি দুই বছর পর, ২০১৫ সালে নিশ্চিত করেছিল এবং সেই দুই বছর তার নামে বিবৃতি দেওয়াও অব্যাহত রেখেছিল; ফলে এখন অনেক আফগানের মনেই এ সন্দেহ জেগেছে, মোল্লা বারাদারের মৃত্যুর গুঞ্জন আসলেও সত্যি কিনা।  

তালেবান সূত্র বিবিসি-কে আরো জানিয়েছে, মোল্লা বারাদার শীঘ্রই কাবুলে ফিরে আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে এবং তার মৃত্যুর গুজবকে মিথ্যা প্রমাণিত করতে ক্যামেরার সামনেও তিনি হাজির হতে পারেন।

তালেবানের রাজনৈতিক, সামরিক ও ধর্ম বিষয়ক সর্বোচ্চ কমান্ডার হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদাকে নিয়েও জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে; কারণ তাকে কখনই জনসম্মুখে দেখা যায়নি।

এদিকে, আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক দাতাদের প্রতি পুনরায় সাহায্য চালু করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাদের সহায়তা নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়।'

এর আগে, জাতিসংঘ আফগানিস্তানে "আসন্ন বিপর্যয়ের" হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর, সোমবার দেশটির জন্য ১ বিলিয়ন ডলার সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।

  • সূত্র: বিবিসি

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.