আজ জার্মান নির্বাচন: কে হবেন চ্যান্সেলর!
জার্মানিতে আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে পার্লামেন্ট নির্বাচন।
২০০৫ সাল থেকে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা মের্কেল এবার স্বেচ্ছায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফলে ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্য এ নির্বাচন একটি যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
জার্মানিতে এবারের ২০তম সংসদ নির্বাচনে ৫৯৮ জন সংসদ সদস্য বেছে নেওয়ার জন্য মোট ছয় কোটি চার লাখ ভোটার ভোট দেবেন। দুইকক্ষ বিশিষ্ট সংসদে সাধারণ ভোটাররা ভোট দেন শুধু নিম্নকক্ষ বুন্দেস্টাগ এর জন্য। পরবর্তীতে প্রত্যেক ভোটারকে আবার ২ উপায়ে সাংসদ নির্বাচিত করতে হয়। প্রথম ভোটে ২৯৯ জন সাংসদ নিজ নিজ এলাকা থেকে নির্বাচিত হন, ২য় ভোটটি দিতে হয় যেকোনো একটি দলকে। মোট ভোটের সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ পাওয়া দলগুলো থেকে হার অনুযায়ী বাকি ২৯৯ আসন বন্টন করা হয় এতে ব্যক্তির বাইরে দলগুলোর অবস্থানও নির্ধারণ করা হয়ে যায়।
প্রথা ভেঙে এবারের নির্বাচনে চ্যান্সেলর হওয়ার দৌড়ে আছেন তিনজন, যেটা সাধারণত গত কয়েক নির্বাচনে দুইয়ে সীমাবদ্ধ ছিল। মের্কেলের ক্ষমতাসীন ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নর্থ রাইন-ওয়েস্টফ্যালিয়ার বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী আরমিন লাশেট, যিনি একইসাথে সিডিইউর চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন। সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসপিডি) থেকে লড়ছেন জার্মানির বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলর ও অর্থমন্ত্রী ওলাফ শলৎস। আর পরিবেশবাদী গ্রিন পার্টি থেকে আছেন দলটির প্রধান ও একমাত্র নারী প্রার্থী আনালেনা বেয়ারবক।
নেতৃস্থানীয় এ দলগুলো আনুষ্ঠানিক জোটের আলোচনায় যাওয়ার আগে কয়েক মাস সময় নিতে পারে। এমতাবস্থায় আপেক্ষিকভাবে মের্কেল থাকছেন তত্ত্বাবধায়কের ভূমিকায়।
এদিকে, মের্কেলের সাথে তার নিজ নির্বাচনী এলাকা আচেনে প্রচারণা চালানো কনজারভেটিভ প্রার্থী আরমিন লাশেট শনিবার বলেন, গ্রিনস এবং হার্ড-লেফট লিঙ্কে পার্টির সাথে এসপিডির নেতৃত্বে বামপন্থী জোট ইউরোপকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলবে।
৬০ বছর বয়সী লাশেট বলেন, "তারা আমাদেরকে ন্যাটো (উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট) থেকে সরিয়ে আনতে চায়, তারা এই জোট চায় না, তারা আরেকটি প্রজাতন্ত্র চায়, আমি চাই না লিঙ্কে পরবর্তী সরকারে থাকুক"।
লাশেটের বিরুদ্ধে লড়ছেন এসপিডি'র ওলাফ শলৎস। মের্কেলের ডান-বাম জোটের অর্থমন্ত্রী ওলাফ নেতৃস্থানীয় প্রার্থীদের মধ্যে তিনটি টেলিভিশন বিতর্কেই জিতেছেন।
৬৩ বছর বয়সী ওলাফ 'দ্য লেফট' এর সঙ্গে বামপন্থী জোটের কথা অস্বীকার না করলেও ন্যাটোর সদস্যপদকে এসপিডির জন্য একটি 'রেডমার্ক' হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
জার্মানির বর্তমান বিভক্ত রাজনৈতিক দৃশ্যপটের জেরে একটি ত্রিমুখী জোটের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জনগণের চূড়ান্ত মতামত জরিপে সোশ্যাল ডেমোক্রেটরা পিছিয়ে থাকলেও কনজারভেটিভরা সাম্প্রতিক দিনগুলোতে এগিয়ে এসেছে।
এ অবস্থায় এসপিডি বা কনজারভেটিভ সিডিইউ/সিএসইউ ব্লক, গ্রিনস এবং লিবারেল ফ্রি ডেমোক্রেট (এফডিপি)-এর সাথে সম্ভাব্য জোট গঠন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে বার্লিনের কাছে পসডামে তার নিজস্ব নির্বাচনী এলাকায় সমর্থকদেরকে ওলাফ শলৎস বলেছেন, এসপিডি এবং গ্রিনস তৃতীয় কোনো অংশীদার ছাড়া একা শাসন করার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে বলে এখনও আশা করছেন তিনি।
তিনি বলেন, "এসপিডি যত শক্তিশালী হবে, জোট গঠন করা তত সহজ হবে। আমি জানি না আদতে কী সম্ভব। কিন্তু, উদাহরণস্বরূপ একটি এসপিডি-গ্রিনস জোট গঠন করা সম্ভব। আমি বিশ্বাস করি এটা সম্ভব"।
কনজারভেটিস এবং এফডিপি উভয়ই একটি ইউরোপীয় "ডেবট ইউনিয়ন" এর বিকল্প প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা চায় করোনাভাইরাসের ক্ষয়ক্ষতি পূরণের প্যাকেজের অর্থায়নের জন্য যৌথ ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্যোগ যাতে সফল হয়। অপরদিকে, এসপিডি আর্থিক ইউনিয়নের দিকে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছে।
পরিবেশ, গবেষণা, অবকাঠামো এবং শিক্ষায় বিনিয়োগকে সমর্থন করার জন্য একটি সাধারণ ইউরোপীয় আর্থিক নীতি সমর্থন করে গ্রিনস।
- সূত্র- রয়টার্স