ডিসেম্বর পর্যন্ত মোরাটোরিয়াম সুবিধা চায় ব্যবসায়ীরা

ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের ফলে বিশ্ববাজারে সকল ধরণের পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে ব্যবসায়ীদের আমদানি করতে অতিরিক্ত মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে। এই বিবেচনায় ব্যবসায়ীদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত কোন ধরণের পেমেন্ট ছাড়া খেলাপি থেকে মুক্তির সুবিধা চাচ্ছে তারা। ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে বাস্তবতার নিরিখে চিন্তা করবেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার কারণে ২০২০ সালে কেউ ঋণের কিস্তি না দিলেও খেলাপি করেনি ব্যাংকগুলো। পরের বছর সকল ধরণের ঋণের ১৫ শতাংশ পরিশোধ করলে খেলাপি না হওয়ার সুযোগ ছিল। যার মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর।
চলতি বছরে কয়েকদফায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এ সুবিধা বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারাই ধারবাহিকতায় বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দায় ফের এই সুবিধা চেয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সভাপতিত্বে ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা ও এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনসহ সংগঠনের পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন এতে।
এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, "কোভিড পরবর্তিতে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে বিশ্ববাজারে সকল ধরণের পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এরই প্রভাবে আমাদের আমদানি ব্যয় ব্যাপক বেড়েছে। ক্যাপিটাল মেশিনারি, তেল, গ্যাসের দাম বেড়েছে। আমাদের যে ক্যাপাসিটি রয়েছে, সে অনুযায়ী এডজাস্ট হয়ে গেছে। এখন আমাদের ব্যবসা খারাপের দিকে যাচ্ছে। তাই সার্বিক বিবেচনায় ঋণ পরিশোধের বিশেষ সুবিধা (মোরাটোরিয়াম ফ্যাসিলিটি) আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানিয়েছি।"
যদিও এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, "ব্যবসায়ীরা আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত পেমেন্ট না করে ঋণ খেলাপি থেকে মুক্তির সুবিধা চেয়েছে। তবে আমাদের বাস্তবতার নিরিখে ব্যাংকগুলোর দিকেও তাকাতে হবে। ইতিপূর্বে কোভিডের কারণে এ সুবিধা দেয়া হয়েছিল, এখন তো আমরা কোভিড থেকে বাইরে চলে আসতে পেরেছি। তাই এ বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সার্বিক পর্যালোচনা করে দেখা হবে।"
এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ লিমিটেডের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর. এফ. হোসেন টিবিএসকে বলেন, "বাংলাদেশ ব্যাংক সার্বিক দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিবেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সার্বিক ব্যাংকগুলোর অবস্থা ও দেশের অর্থনীতির উপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত নেবে বলে মনে করি।"
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, "বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বেড়ে গেলে ব্যবসায়ীরাও পণ্যের দাম দেশের বাজারে বাড়িয়ে দিচ্ছে, এতে তো তাদের ব্যবসার কোন ক্ষতি হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা যে ধরণের সুবিধা চাচ্ছে এটা হাস্যকর।"
তিনি আর বলেন, "ব্যাংকগুলো গত দুই বছর যাবত প্রফিটে নেই। গ্রাহকের আমানতের মুনাফা দিতে হচ্ছে কিন্তু এ সুবিধা দিলে ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। অনেক আমানতকারী ব্যাংকগুলো থেকে তাদের আমানত তুলে নিবেন। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন সুবিধা না দেয়াই উচিত।"
ব্যবসায়ীদের বৈঠকের পর সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, "আগে খেলাপি হওয়ার ঋণ দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্টে দশ বছরের জন্য একবার পুনর্গঠনের সুবিধা ছিল। সেই সুবিধার সময় শেষ হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা দাবি জানিয়েছে নতুন করে ডাউন পেমেন্ট নিয়ে ঋণগুলো পুনঃতফসিল করা যায় কিনা।"
"এছাড়া পরিবহন খাতসহ আরও কিছু খাত কোভিডকালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারা যেন পুনঃতফসিলের সুবিধা পায় সে বিষয়েও আবেদন জানিয়েছেন। গভর্নর বলেছেন এটা পর্যালোচনা করে দেখবেন।"
তিনি বলেন, "ব্যবসায়ীরা রেমিট্যান্সের প্রণোদনা হার আরও বৃদ্ধি করা যায় কিনা সে বিষয়ে দাবি জানিয়েছেন। সরকারকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দিয়েছেন। এছাড়া এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইডিএফ) বৃদ্ধির বিষয়েও আবেদন জানিয়েছেন, সেটাও পর্যালোচনা করে দেখবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।"