সামাজিক নিরাপত্তা বেড়েছে, সত্যি?

অর্থনীতি

09 June, 2022, 11:40 pm
Last modified: 10 June, 2022, 02:59 pm
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপনের সময় মোট ২৯ বার ‘মূল্যস্ফীতি’ শব্দটি উচ্চারণ করেছেন। একইসময়, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে বাজেটে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।’

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার (৯ জুন) ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপনের সময় মোট ২৯ বার 'মূল্যস্ফীতি' শব্দটি উচ্চারণ করেছেন। একইসময়, 'মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে বাজেটে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।'

বাজেট বক্তৃতার পর পরই প্রতি-লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৭ টাকা বাড়িয়ে ২০৫ টাকা নির্ধারণের ঘোষণা দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

অথচ বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী মূল্যস্ফীতি ৫.৬ শতাংশে ধরে রাখার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, 'আগামী অর্থবছরে আমাদের প্রধান কৌশল হবে সরবরাহ বৃদ্ধির পাশাপাশি চাহিদা বৃদ্ধিকে কমিয়ে আনা।'

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর ফলে সাধারণ মানুষের পরিবর্তে ব্যবসায়ীরাই বেশি উপকৃত হবে।

বাংলাদেশ একটি আমদানিনির্ভর দেশ হওয়ায় মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে আমদানি শুল্ক কমানো হবে বলে আশা ছিল। কিন্তু, এ ধরনের শুল্ক কমানো হয়নি।

এমনকী মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এর ক্ষেত্রেও, যা গত তিনটি বাজেটে ব্যাপক বেড়েছে, হ্রাস শুধুমাত্র একটি বা দুটি খাতে দেখা গেছে যা সরাসরি ভোক্তাদের ব্যয়কে সহায়তা করবে না।

স্থানীয় পর্যায়ে মোবাইল ও রেফ্রিজারেটর উৎপাদনে ৫% ভ্যাট আরোপ করা হলে এসব পণ্যের দাম বাড়বে। তার উপর সরকার রেলওয়ের টিকিট, ওয়াটার পিউরিফায়ার, ল্যাপটপসহ ২০টি পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে।

রেস্তোরাঁর খাবারে ২.৫% ভ্যাট কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে; তবে এটিও সাধারণ জনগণের জন্য সহায়ক নাও হতে পারে।

করদাতারা করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর ফলে কিছু প্রত্যাহার আশা করেছিলেন। কিন্তু, তাও পূরণ হয়নি। 

একই সময়ে, মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রায় ৪ কোটি মানুষকে করের আওতায় আনার পদক্ষেপ বিবেচনা করা হচ্ছে, যাদের অনেকেই কর দেন না। 

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বাজেটে সৎ করদাতারা কোনো ছাড় পাচ্ছেন না।  'বরং ধনীদের কর্পোরেট কর কমানো কিংবা বিদেশে থাকা টাকা সুবিধা দিয়ে দেশে আনার সুযোগ দেওয়া হয়েছে'।

তিনি আরও বলেন, সরকারের চাহিদা কমানোর ইচ্ছা জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যের পরিপন্থী।

ভোক্তাদের পাশাপাশি- যেসব মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাজেট তাদের জন্য সহায়ক হবে- এমন একটি বড় প্রত্যাশাও ছিল। কিন্তু, সে আশাপূরণ অধরাই রয়ে যেতে পারে। 

সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কেবল কাগজে-কলমে

প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ ২ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে শুধু পেনশনের বরাদ্দ বেড়েছে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। তাই বাস্তবে এ খাতে বরাদ্দ কমেছে ৩ হাজার কোটি টাকা।

সরকারের খোলাবাজারে পণ্য বিক্রির (ওপেন মার্কেট সেল বা ওএমএস) বরাদ্দ ২২৩ কোটি টাকা কমে গেছে, এখান থেকে নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ সরাসরি উপকৃত হতেন। কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং খাদ্য কর্মসূচির মতো যেসব পদক্ষেপ থেকে দরিদ্ররা উপকৃত হতেন-সেগুলির বরাদ্দও কমেছে।

এক কথায়, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর জন্য প্রস্তাবিত সামগ্রিক বরাদ্দ ২ শতাংশের বেড়েছে, সে তুলনায় পেনশনভোগীদের জন্য বরাদ্দ বেড়েছে ২১.৪৮%।

নতুন অর্থ বছরে, এমনকী ৫৭ লাখ বয়স্ক এবং বিধবা যারা বর্তমানে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা ভাতা পাচ্ছেন- তাদের উপবৃত্তির কোনো বৃদ্ধি দেখতে পাবেন না।

সাত বছর আগে নির্ধারিত এই ভাতায় যেসব পণ্য কেনা যেত, এখন তার দাম হবে ৬৯১ টাকা।

প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতিবন্ধীদের ভাতা ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা করা হলেও অন্য কোনো ভাতা বাড়ানো হয়নি। একই সঙ্গে ৩ লাখ ৬৫ হাজার নতুন প্রতিবন্ধীকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া, মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ২.০৯ লাখ উপকারভোগী যুক্ত করা হয়েছে।

বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য ত্রাণ বরাদ্দ ১০০ কোটি টাকা কমানো হয়েছে, পাশাপাশি ভিক্ষুকদের বিকল্প কর্মসংস্থান এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য কল্যাণ ট্রাস্টের বরাদ্দ হ্রাস পেয়েছে।

তবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ভর্তুকি বরাদ্দ ২,২০০ কোটি টাকা থেকে ৫,০০০ কোটি টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেছেন, বাজেটের অংশ হিসেবে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে আনুপাতিক হারে বরাদ্দ কমেছে, তা ২.৭% থেকে ২.৩% এ নেমেছে। এটা আমার কাছে লক্ষণীয় মনে হয়েছে।

'আরেকটা বিষয় খাদ্যের ব্যাপারে। বলা হচ্ছে ৫০ লাখ মানুষকে পাঁচ মাস ধরে ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হবে। তাতে আমাদের লাগবে আট লাখ ২৭ হাজার টন। এখন আমাদের কাছে মজুদ আছে ২০ লাখ টন এবং তার মধ্যে চার লাখ টন সব সময়ের জন্য মজুদ রাখতে হবে। তাহলে থাকল ১৬ লাখ টন। এর মধ্য থেকেই ৮ লাখ ২৭ হাজার টন চলে যাবে এই ৫০ লাখ মানুষের জন্য।'

বিনায়ক সেন তাই সরকারি খাদ্য মজুত সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে বলেন, এটা না করতে পারলে আমরা এই সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলি বিশেষত যেগুলো খাদ্য সহায়তার সেগুলি চালাতে পারব না। 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.