ডিসেম্বর পর্যন্ত মোরেটোরিয়াম সুবিধা চায় ব্যবসায়ীরা

অর্থনীতি

টিবিএস রিপোর্ট
01 June, 2022, 10:45 am
Last modified: 01 June, 2022, 10:49 am
ব্যাংককাররা বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন সুবিধা দেওয়া উচিত হবে না। 

ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে সকল ধরনের পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসায়ীদেরকে পণ্য আমদানিতে অতিরিক্ত মুল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে। 

এই বিবেচনায় ব্যবসায়ীদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো ধরনের পেমেন্ট ছাড়া খেলাপি থেকে মুক্তির সুবিধা চাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের দাবি বাস্তবতার নিরিখে চিন্তা করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার কারণে ২০২০ সালে কেউ ঋণের কিস্তি না দিলেও খেলাপি করেনি ব্যাংকগুলো। পরের বছর সকল ধরনের ঋণের ১৫ শতাংশ পরিশোধ করলে খেলাপি না হওয়ার সুযোগ ছিল; এই সুযোগের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর।

চলতি বছরে কয়েকদফায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এ সুবিধা বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা। তারই ধারবাহিকতায় মঙ্গলবার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ফের এই সুবিধা চেয়েছেন। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সভাপতিত্বে ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা ও এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনসহ সংগঠনের ডিরেক্টররা উপস্থিত ছিলেন এই আলোচনায়।

এফবিসিসিআই এর সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, "কোভিডের পর ইউক্রেন-রশিয়ার যুদ্ধের ফলে বিশ্ববাজারের সকল ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এরই প্রভাবে আমাদের ইমপোর্ট ব্যয় ব্যপক বেড়েছে। ক্যাপিটাল মেশিনারি, তেল, গ্যাসের দাম বেড়েছে। আমাদের যে ক্যাপাসিটি রয়েছে সে অনুযায়ী এডজাস্ট হয়ে গেছে। এখন আমাদের বিজনেস খারাপের দিকে যাচ্ছে।"

"তাই সার্বিক বিবেচনায় লোন ঋণ পরিশোধের বিশেষ সুবিধা (মোরেটোরিয়াম) চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানিয়েছি," বলেন তিনি।

যদিও এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, "ব্যবসায়ীরা আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত পেমেন্ট না করে ঋণ খেলাপি থেকে মুক্তির সুবিধা চেয়েছে। তবে আমাদের বাস্তবতার নিরিখে ব্যাংকগুলোর দিকেও তাকাতে হবে।"

"ইতোপূর্বে কোভিডের কারণে এ সুবিধা দেওয়া হয়েছিল, এখন তো আমরা কোভিড থেকে মুক্তি পেয়েছি। তাই এ বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সার্বিক পর্যালোচনা করে দেখবে," যোগ করেন তিনি।

এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেড এবিবি এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যান সেলিম আরএফ হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বাংলাদেশ ব্যাংক সার্বিক দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সার্বিক ব্যাংকগুলোর অবস্থা ও দেশের ইকোনোমির উপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত নেবে বলে মনে করি।"

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, "বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বেড়ে গেলে ব্যবসায়ীরাও পণ্যের দাম দেশের বাজারে বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে তো তাদের ব্যবসার কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা যে ধরনের সুবিধা চাচ্ছে তা হাস্যকর।"

তিনি আরও বলেন, "ব্যাংকগুলো গত দুই বছর যাবৎ তেমন প্রফিটে নেই। গ্রাহকের আমানতের মুনাফা দিতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের এই সুবিধা দিলে ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। অনেক আমানতকারি ব্যাংকগুলো থেকে তাদের আমানত তুলে নিবেন। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন সুবিধা না দেওয়াই উচিত।"

ব্যবসায়ী নেতা জসিমউদ্দিন বলেন, তারা রপ্তানিকে আরও তরান্বিত ও বিস্তৃত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইডিএফ) এর সুবিধা ৭.৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ১০ বিলিয়ন ডলার করার আবেদন জানিয়েছেন। 

তিনি বলেন, "আমাদের রপ্তানি পণ্যের পেমেন্ট আসতে বিলম্ব হচ্ছে। যার কারণে এ ফান্ডের ঋণ সুবিধার পরিমাণ বাড়ানোর জন্য বলেছি।"

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইডিএফ এর প্রণোদনা ঋণের চিত্র অনুযায়ী দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জন্য এ খাতে ২৯ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ঋণ সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। যার মধ্যে চলতি বছরের ১৫ মার্চের মধ্যে প্রায় ৯৩.৩ শতাংশ বিতরণ হয়েছে।

ব্যবসায়ীদের নেতা বলেন, "আমাদের শিল্পখাতের ঋণের জন্য শিল্প ব্যাংকসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছিল। এখন আমরা দীর্ঘমেয়াদি ঋণের জন্য স্কিমের আবেদন করেছি। কারণ সামনে লিস্ট ডেভেলপমেন্ট কান্ট্রি (এলডিসি) থেকে উত্তরণের জন্য সামনে বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি করা দরকার।"

তিনি বলেন, "বর্তমানে ব্যাংকগুলো থেকে শিল্প ঋণ নিয়ে পাঁচ/সাত বছরের মধ্যে পরিশোধ করা কঠিন হয়ে যায়। আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বলেছি রিফাইনেন্সিং ফান্ড দেওয়ার জন্য। যার মাধ্যমে ব্যাংকগুলো লংটার্ম ঋণ দিতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পজেটিভলি দেখবেন বলে জানিয়েছে।"

"আমরা গভর্নরকে বলেছি তফসিলি ব্যাংকগুলো তাদের মোট লিকুইডিটির ১০-১৫ শতাংশ লংটার্ম হিসেবে দেওয়ার জন্য। যা রিফাইনেন্সিং করবে বাংলাদেশ ব্যাংক," যোগ করেন তিনি।

ব্যবসায়িদের বৈঠকের পর সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, আগে খেলাপি হওয়ার ঋণ দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্টে দশ বছরের জন্য একবার পুনর্গঠনের সুবিধা ছিল। সেই সুবিধার সময় শেষ হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা দাবি জানিয়েছে নতুন করে ডাউন প্রেমেন্ট নিয়ে ঋণগুলো পুনঃতফসিল করা যায় কিনা।

এছাড়া পরিবহন খাতসহ আরও কিছু খাত কোভিডকালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেক্ষেত্রে তারা যেন পুনঃতফসিলের সুবিধা পায় সে বিষয়েও আবেদন জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। 

সিরাজুল ইসলাম বলেন, "ব্যবসায়ীরা রেমিট্যান্সের প্রণোদনা হার আরও বৃদ্ধি করা যায় কিনা সে বিষয়ে দাবি জানিয়েছেন। সরকারকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দিয়েছেন। এছাড়া ইডিএফএর ফান্ড বৃদ্ধির বিষয়েও আবেদন জানিয়েছে সেটাও পর্যালোচনা করে দেখবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।" 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.