বাংলাদেশের ইপিজেড শ্রম আইনের দ্রুত সংশোধন চায় ইইউ

অর্থনীতি

15 May, 2022, 10:25 am
Last modified: 15 May, 2022, 11:54 am
কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শ্রম বিধি এবং ইপিজেড শ্রম বিধি সংশোধনের মতো কাজগুলোর নির্দিষ্ট সময়সীমা ইতোমধ্যেই পার হয়ে গেছে। আর অন্যান্য ক্ষেত্রে ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যানে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে পূরণ করতে পারবে না, এমন ইঙ্গিতও দিয়েছে বাংলাদেশ।

'এভ্রিথিং বাট আর্মস' সুবিধা ধরে রাখতে ট্রেড ইউনিয়ন ব্যবস্থা চালু করে দ্রুত ইপিজেড শ্রম আইন সংশোধন করতে তাগিদ দিয়েছে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের প্রধান গন্তব্যস্থল ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

২০১৯ সালে বাংলাদেশ ইপিজেডের জন্য নতুন আইন প্রণয়ন করেছে। বর্তমানে ওই আইন অনুযায়ী বিধিমালার খসড়া তৈরি করে তা ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। নতুন এই বিধিমালা কার্যকর করার পর সৃষ্ট অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নতুন আইন প্রণয়ন করতে চায় বাংলাদেশ।      

কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডিরেক্টর জেনারেল অব ট্রেড ইওয়া সাইনোভিক, ডিরেক্টর জেনারেল অব এমপ্লয়মেন্ট জর্ডি কিউরেল এবং এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর পাওলা পামালোনি স্বাক্ষরিত এক যৌথ চিঠিতে বলা হয়েছে, আমরা আবারও ইপিজেড শ্রম আইন সংশোধনের তারিখ ত্বরান্বিত করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করছি; বিষয়টি বিগত বছরগুলোতে এবং ঢাকায় আমাদের সাম্প্রতিক সকল বৈঠকে স্পষ্টভাবে উত্থাপিত হয়েছিল।

এর আগে বাংলাদেশকে দেওয়া ইইউর ৯ দফা অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়নে ২০২৬ সাল পর্যন্ত একটি রোডম্যাপ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে জমা দিয়েছে সরকার, যা ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান (এনএপি) নামে পরিচিত। ওই প্ল্যানে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে ইপিজেড লেবার অ্যাক্ট বা শ্রম আইন সংশোধনের কথা বলা হলেও ট্রেড ইউনিয়ন চালুর বিষয়ে আপত্তির কথা জানিয়েছে সরকার।

 "ইপিজেড শ্রম বিধিমালা বাস্তবায়নের জন্য অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। আমরা ইপিজেড শ্রম আইন সংশোধনের জন্য একটি নির্দিষ্ট সামঞ্জস্যপূর্ণ সময়সীমার অপেক্ষায় রয়েছি", বলেছেন ইইউর তিন কর্মকর্তা। 

গত মার্চে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইবিএ মনিটরিং মিশন বাংলাদেশ সফর শেষে ফেরার পর সম্প্রতি পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনকে পাঠানো চিঠিতে ইইউ বলেছে, শ্রম উন্নয়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে, এই প্রতিশ্রুতিগুলো জাতীয় কর্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে এবং সময়মতো পূরণ করার কথা রয়েছে।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শ্রম বিধি এবং ইপিজেড শ্রম বিধি সংশোধনের মতো কাজের নির্দিষ্ট সময়সীমা ইতোমধ্যেই কয়েক মাস আগে পার হয়ে গেছে। আর অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যানে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে পূরণ করতে পারবে না, এমন ইঙ্গিতও দিয়েছে। শ্রম পরিদর্শক মোতায়েন করা সেসব প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে অন্যতম।

ইইউ বলছে, ডিজিটাল স্পেসসহ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে উদ্বেগ মোকাবেলা করা এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং নারী ও প্রান্তিক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নির্যাতন ও সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ।

ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নতুন জিএসপি প্রবিধানের জন্য কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছে, যেখানে বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যেই আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এক্ষেত্রেও ইইউর উত্থাপিত বিষয়গুলো বিবেচনা অত্যন্ত জরুরি।

ইইউর তিন কর্মকর্তা আরও বলেন, "আমরা আবারও বলতে চাই, জিএসপির বর্তমান ইবিএ ব্যবস্থার অধীনে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত আমদানি আন্তর্জাতিক শ্রম এবং মানবাধিকারের সঙ্গে সম্মতির ব্যাপারে শর্তসাপেক্ষ।"

ইইউ বলছে, আমরা ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যানের কিছু মূল বিষয় তালিকাভুক্ত করেছি, যা ইতোমধ্যে মিশন চলাকালীন আমরা উত্থাপন করেছি। আমরা স্বীকার করি, মহামারির সময়ে এই সমস্যাগুলো আরও জটিল। তবে তা সত্ত্বেও, বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিগুলো যথাসময়ে পূরণ করতে পারছে কিনা, এ বিষয়টি আমাদের অংশীদারদের (ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এবং ২৭ সদস্য রাষ্ট্র) দেখানোও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

"জাতীয় কর্ম পরিকল্পনার প্রতিশ্রুতি সময়মত পূরণ করার বিষয়টি গত ২০ এপ্রিল ২০২২ তারিখে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক কমিটির অধিবেশনেও মূল বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে", যোগ করেন তারা। 

বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ফারুক হোসেন গত বৃহস্পতিবার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেওয়া অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য সরকার আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে যে টাইমলাইন দিয়েছিল, তার কিছু কিছু জিনিস ওই সময়ের মধ্যে হয়নি।"

"এখন আবার নতুন করে একটি সময়সীমা দেওয়া হচ্ছে। সেই সময়সীমার মধ্যে সবগুলো কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করি", যোগ করেন তিনি।

ইপিজেড শ্রম আইন সংশোধন বিষয়ে তিনি বলেন, ইপিজেডে ট্রেড ইউনিরয়ন করাসহ বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভূক্ত করে এই আইন সংশোধনের কথা বলছে ইইউ। ইপিজেডে যেসব বিদেশি বিনিয়োগকারী আছে, তাদের আপত্তি থাকার কারণে সরকার সাথে সাথে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। আশা করি, সরকার স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।

মানবাধিকারের বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যেসব শর্ত আরোপ করছে, তা বাস্তবায়নে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নে ফারুক হোসেন বলেন, "সব জিনিস সঙ্গে সঙ্গে হয়ে যায় না, সময় লাগে। সারা বিশ্বে বছরের পর বছর ধরে আলোচনা চলে। কোনো একটি সিদ্ধান্ত নিতে গেলে অন্যান্য সেক্টরেও এর প্রভাব পড়ে। সরকার দেশের সার্বিক অবস্থার কথা চিন্তা করে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আমরা সরকারের সঙ্গে আছি, সরকারের সঙ্গে থাকবো।"

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম টিবিএসকে বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যা কিংবা মানবাধিকার বিষয়ে ইইউ যে চাপ দিচ্ছে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের একটি স্বার্থান্বেষী মহলের হাত রয়েছে।

"নতুন জিএসপি পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের অবশ্যই কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে হবে, না হলে ইউরোপে শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়ে আমাদের ভোগান্তির মুখে পড়তে হবে", যোগ করেন তিনি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে টিবিএসকে বলেন, বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধরে ইইউর কাছে জিএসপি প্লাস পাওয়ার ইচ্ছার কথা প্রকাশ করা হলেও তারা কখনও এ বিষয়ে মৌখিক কিংবা লিখিতভাবে কোনোকিছু বলেনি।

"বাংলাদেশ যে জিএসপি প্লাস পেতে আগ্রহী এবং এটি পাওয়ার জন্য বাংলাদেশকে কী কী করতে হবে, তা এই চিঠির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে জানালো ইইউ। এটিকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি। সরকার ন্যাশনাল অ্যাকশন প্লানে যে রোডম্যাপ তৈরি করেছে, সেগুলো সময়মত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে ২০২৪ সালের পর ইবিএ অব্যাহত থাকার পাশাপাশি এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পর জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়া সহজ হবে বলে মনে হচ্ছে", যোগ করেন তিনি।   
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.