তৈরি পোশাক খাতে নজর এখন ব্র্যান্ডিংয়ে
দেশের রপ্তানি আয়ের শীর্ষ খাত তৈরি পোশাক খাতের সামনে আগামীতে আরো বিপুল রপ্তানির হাতছানি দেখা দিয়েছে। বিদেশি ক্রেতারা এখনো বাংলাদেশকে তাদের ভালো সোর্সিং হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে আমদানি আরো বাড়ানোর কথা বলছেন।
এছাড়া, পোশাকের রপ্তানি বাজারে চীনের একক আধিপত্যও কমছে।
এ পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করার মাধ্যমে ক্রেতাদের বাংলাদেশমুখী করতে গুরুত্ব দিতে চাইছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।
তারা মনে করছেন, গত কয়েক বছরে কমপ্লায়েন্সের মানদন্ডে বাংলাদেশের যে বিপুল অগ্রগতি হয়েছে, সে তথ্য এখনো বিশ্বের পোশাক খাত সংশ্লিষ্টদের কাছে সঠিকভাবে যাচ্ছে না। তাদের মনে গেঁথে আছে রানা প্লাজা কিংবা তার পূর্ববর্তী সময়ের বাংলাদেশের পোশাক খাতের চিত্র। ফলে এ খাতে দরাদরিতে এখনো পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আগামী নভেম্বরে বিশ্বের পোশাক খাতের ব্র্যান্ড, বায়ার, ফ্যাশন জায়ান্টসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে নিয়ে ঢাকায় সপ্তাহব্যাপী বড় আকারে 'মেইড ইন বাংলাদেশ উইক-২০২২' আয়োজন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।
পাঁচ দিনের মূল অনুষ্ঠান চার দশকে বাংলাদেশের পোশাক খাতের অগ্রগতির গল্প তুলে ধরা হবে। বিশেষত ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর কীভাবে এ খাত নন-কমপ্লায়েন্ট থেকে বিশ্বের অন্যতম কমপ্লায়েন্ট ও গ্রিন কারখানার হাব হয়ে উঠছে, তা তুলে ধরা হবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনের খাত সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের ওইসব কারখানা ঘুরিয়ে দেখানো হবে।
একই সময়ে বিজিএমইও এবং বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহযোগিতায় ৩৭তম আন্তর্জাতিক অ্যাপারেল ফেডারেশন (আইএএফ) আয়োজন করবেআন্তর্জাতিক অ্যাপারেল ফেডারেশন (আইএএফ) ।
অনুষ্ঠিত হবে আইএএফ কনভেনশন, বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সপো, ডেনিম এক্সপো, ঢাকা অ্যাপারেল সামিট, ওয়ার্কশপ, সেমিনার, ফ্যাশন শো, এনবিআর ও ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ডের মতো আরো অনেক অনুষ্ঠান।
মেড ইন বাংলাদেশ উইক এর প্রায় পাঁচ মাস আগেই ঢাকায় শনিবার বাংলাদেশ সফররত ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপারেল ফেডারেশনের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলন করতে যাচ্ছে বিজিএমইএ।
বিজিএমইএর সহ-সভাপতি মোঃ শহীদুল্লাহ আজিম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বাংলাদেশের পোশাক খাতের বিশ্বব্যাপী যথাযথ ব্র্যান্ডিংয়ে এখনো ঘাটতি রয়ে গেছে। এ কারণে একই পোশাকের তুরস্কের মত দেশ যেখানে আট থেকে সাড়ে আট ডলার পায়, দেশের রপ্তানিকারকরা পান সাত ডলার।
"কিন্তু আমাদের অগ্রগতি, উচ্চ মূল্যের পোশাক তৈরিতে সক্ষমতার চিত্র তাদের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরা গেলে দরের ক্ষেত্রেও আমরা আরো ভালো অবস্থানে থাকতে পারি।
"আমরা এখন বাংলাদেশের পোশাক খাতের প্রকৃত চিত্র বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার মাধ্যমে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করতে চাই। এ লক্ষ্যেমেড ইন বাংলাদেশ উইকের মাধ্যমে এযাবতকালের সবচেয়ে বড় আকারের অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছি আমরা।"
বিজিএমইএ'র সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তারা আশা করছেন অনুষ্ঠানটি প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর সময় চেয়ে দুই দফায় চিঠিও দিয়েছে বিজিএমইএ।
এছাড়া বানিজ্য মন্ত্রীর কাছে সম্প্রতি বিজিএমইএ'র সভাপতি ফারুক হাসান চিঠি দিয়ে আয়োজনটি সফল করতে মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চেয়েছেন।
চিঠিতে সম্ভাব্য বেশকিছু প্রোগ্রাম আয়োজনের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণকারীদের দেশের পোশাক খাতের পরিবর্তন দেখার সুযোগ করে দিবে এ অনুষ্ঠান।
"এসব কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের উন্নয়নের চিত্র, পাশাপাশি আরও বড় সুযোগের জন্য আমাদের কৌশলগত দিকনির্দেশনা কেমন হওয়া উচিৎ তা তুলে ধরব", বলা হয় চিঠিতে।

বাংলাদেশের রপ্তানির ৮০ শতাংশের বেশি আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে।
সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে প্রায় ৩১.৪৫ বিলিয়ন ডলারের। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসেই আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে এ খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি। খাত সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, জুন শেষ নাগাদ তা ৪২ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এছাড়া পোশাকের মূল রপ্তানিকারক চীন ধীরে ধীরে পোশাক রপ্তানি থেকে বেরিয়ে আসায় বাংলাদেশের সামনে আগামী দিনগুলোতে অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
গত মঙ্গলবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাস্টেইনেবল অ্যাপারেল ফোরামে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সুইডিশ রেটেইল জায়ান্ট এইচ&এমের বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ইথিওপিয়া অঞ্চলের প্রধান জিয়াউর রহমান বলেন, ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রায় সব আইটেম উৎপাদন করতে সক্ষম হওয়ায় পোশাক সামগ্রীর জন্য অনুকূল সোর্সিং গন্তব্য থাকবে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, আগামী ১০ বছরের মধ্যে পোশাক খাত থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব।
বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বাড়ার সম্ভাবনা আঁচ করে এ খাতের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ হিসেবে টেক্সটাইল খাতেও বড় বিনিয়োগ আসছে। ২০২৪ সাল নাগাদ স্থানীয় টেক্সটাইলে নতুন করে ২.৫ মিলিয়ন স্পিন্ডিল যুক্ত হতে যাচ্ছে, যাতে নতুন বিনিয়োগ হবে প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলার।