চাহিদা কমায় দাম কমেছে রড, সিমেন্টের

অর্থনীতি

30 April, 2022, 02:20 pm
Last modified: 30 April, 2022, 02:57 pm
গত একমাসে নির্মাণ পণ্য এমএস রডের দাম কমেছে টনে ৬-৮ হাজার টাকা। সিমেন্টের দাম কমেছে বস্তায় ২০-৪০ টাকা। 

নিমার্ণ সামগ্রীর চাহিদা কমায় প্রধান দুই নির্মাণ পণ্য রড ও সিমেন্টের দাম কমেছে, স্বস্তি ফিরে পেয়েছে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে নিয়োজিত ঠিকাদাররা।

মহামারির প্রভাব কাটিয়ে অর্থনীতি যখন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছিল নির্মাণ সামগ্রীর অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধির কারণে স্থবির হয়ে পড়ে নির্মাণ কাজ। 

অনেকেই নির্মাণ কাজ বন্ধ করে রাখে, রড-সিমেন্টের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছানোয় কাজ চালিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছিল অনেকে। 

গত একমাসে নির্মাণ পণ্য এমএস রডের দাম কমেছে টনে ৬-৮ হাজার টাকা। সিমেন্টের দাম কমেছে বস্তায় ২০-৪০ টাকা। 

গত এক মাসে ইস্পাতের বাজারে ৬-৮ হাজার টাকা পর্যন্ত কমেছে ৭৫ গ্রেডের (৫০০ টিএমটি) রডের দাম। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ব্রান্ডের প্রতিটন ৭৫ গ্রেডের রড বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৮৬ হাজার টাকা। যা এক মাস আগে ৮৭-৯২ হাজার টাকা দামে বিক্রি হয়েছে।

কেআর স্টিলের চেয়ারম্যান সেকান্দার হোসেন টিংকু বলেন, সরবরাহ সংকটের কারণে গত দেড় বছর ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। এতে দেশের বাজারে গত দেড় বছরের ব্যবধানে রডের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়। কিন্তু অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির ফলে রডের চাহিদা ও বিক্রি কমে যায়। 

চাহিদা কমে আসায় গত দেড়মাস ধরে রড ও স্ক্র্যাপের বাজার আবার কমতে শুরু করেছে, বলেন তিনি। 

রড ও সিমেন্ট তৈরির কাঁচামালের দাম কমার সঙ্গেও দাম কমার সম্পর্ক আছে, বলছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। 

ইস্পাতের পাশাপাশি ইস্পাত তৈরির কাঁচামাল বিলেট, প্লেট ও স্ক্র্যাপের দামও কমে এসেছে গত এক মাসে। বর্তমানে প্রতিটন স্ক্র্যাপ ৫৬ হাজার ৫০০ টাকায়, প্লেট ৬৩ হাজার টাকায় এবং বিলেট ৭১ হাজার টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগে স্ক্র্যাপ ৬৫ হাজার টাকা, প্লেট ৭১ হাজার টাকা এবং বিলেট ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।

সিমেন্টের দামও আগের চেয়ে ২০-৪০ টাকা কমেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার আমদানি ব্যাহত হওয়ায় পণ্যটির দাম বেড়ে বস্তায় ৮০ টাকা পর্যন্ত দাঁড়ায়। 

বিভিন্ন ব্রান্ডের সিমেন্টের মধ্যে বর্তমানে বাজারে প্রতি বস্তা রুবি ৪৭৫ টাকা, রয়েল ৪৫৫ টাকা, সেভেন রিং ও এনজিএস ৪৪৫ টাকা ও এস আলম ৪৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের মহরম শিপ রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামাল পাশা বলেন, ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত প্রায় দেড় বছর টানা ঊর্ধ্বমুখী ছিল রডের বাজার। এ সময় দফায় দফায় বেড়ে পণ্যটির দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

রডের বিক্রি কমে যাওয়ায় কমে এসেছে দামও, বলেন তিনি। 

চট্টগ্রামের রড ব্যবসায়ী মেসার্স বাগদাদ স্টিলের স্বত্বাধিকারী আইয়ুব আলী বলেন, রডের দাম ৮৮ থেকে ৯২ হাজার টাকায় পৌঁছার পর থেকে বাজারে পণ্যটির বিক্রি কমে গেছে। এতে গত এক মাসে রড বিক্রি ৭০-৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে।

স্বস্তিতে প্রকল্প ঠিকাদাররা 

এদিকে নির্মাণ সামগ্রীর দাম কিছুটা কমে আসায় স্বস্তি ফিরে পেয়েছে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ঠিকাদাররা। 

সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা বলেন, নির্মাণ পণ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে গত কয়েকমাস কাজের গতি কমিয়ে দিতে হয়েছে। এখন দাম কিছুটা কমে আসায় পুরোদমে কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন তারা। 

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান বিশ্বাস বিল্ডার্সের প্রকল্প ম্যানেজার প্রকৌশলী সোহেল রানা বলেন, "গত এক-দেড় বছরে নির্মাণ সামগ্রীর দাম ২০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের প্রকল্পগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কারণ দাম বৃদ্ধির ফলে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে আমাদের লোকসান গুনতে হয়েছে।"

"গত দুই-তিন সপ্তাহ ধরে রড ও সিমেন্টের দাম কিছুটা কমায় আমরা আবার পুরোদমে কাজ শুরু করেছি। এর আগে গত দুই-তিন মাস কাজ স্থবির হয়ে পড়েছিল", বলেন তিনি। 

সড়ক ও জনপথের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে নিয়োজিত মেজবাহ এসোসিয়েটস'র স্বত্বাধিকারী মেজবাহ উদ্দিন বলেন, "নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধির কারণে কাজ বাস্তবায়ন করতে বিশাল অংকের লোকসান গুনতে হয়েছে। এখন দাম কিছুটা কমায় লোকসান কাটিয়ে কোনভাবে কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি।" 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.