উচ্চমূল্যে স্থির নিত্যপণ্যের বাজার, আর দাম না বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি ব্যবসায়ীদের
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2022/04/03/4046630_syndicates_of_essential_commodities.jpg)
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যথেষ্ট মজুদ থাকার ফলে রমজানের মধ্যে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়বে না বলে আশ্বস্ত করেছেন এসব পণ্যের উৎপাদক ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। অথচ রোজার আগেভাগেই কিছু পণ্যের দাম এমনভাবে বেড়েছে যে তা আর কমার লক্ষণ নেই।
শনিবার সকালে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) আয়োজিত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর মজুত, আমদানি, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি বিষয়ক মতবিনিময় সভায় এ আশ্বাস দেন ব্যবসায়ীরা। এতে সভাপতিত্ব করেন মো. জসিম উদ্দিন।
ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়বে না বলে দাবি করলেও এবারের বাজারের চিত্রটা একটু ভিন্ন। সয়াবিন তেলের দাম আগেই বেড়েছে, যা ক্রেতাদেরকে ইতোমধ্যেই বাড়তি খরচের চাপে রেখেছে।
ঢাকার রামপুরা, বাড্ডা, কারওয়ানবাজার, মুগদা সহ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত ২০ মার্চ সরকার সয়াবিন তেলের যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে তা এখনো পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ও খুচরা ব্যবসায়ীদের তথ্য বলছে, প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৫৫ টাকায়, যেখানে সরকার নির্ধারিত দাম ১৩৬ টাকা। গত বছরের একই সময়ে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকায়। এখানে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবারে ২৩.৫৫ শতাংশ বেশি দামে খোলা তেল বিক্রি হচ্ছে। এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৭.৪৫ শতাংশ বেড়ে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ সরকার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ১৬০ টাকা।
টিকে গ্রুপের পরিচালক সফিউল আতহার তাসলিম বলেন, গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ীর বাজার কারসাজির কারণে গোটা ব্যবসায়ী সমাজকে দায় নিতে হচ্ছে। তবে রমজানে বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার কোন শঙ্কা নেই। মিলমালিকদের কাছে পর্যাপ্ত তেল রয়েছে এবং বাজারেও কোন সরবরাহ ঘাটতি হবে না।
এফবিসিসিআইয়ের সভায় মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. বশির উদ্দিন ও বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা বলেন, সরবরাহ ঠিক থাকলে বাজারে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল থাকবে।
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও দায়িত্ব আছে। যে কারণে ৪৬ সদস্য বিশিষ্ট বাজার মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে ৪৬টি পণ্য নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে কি না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারদর, সরবরাহ পরিস্থিতি, উৎপাদন ও আন্তর্জাতিক বাজারদর সংগ্রহ ও পর্যালোচনা এবং সরেজমিনে বাজার পরিদর্শন করবেন এই কমিটির সদস্যরা।
তিনি বলেন, সারাবিশ্বে উৎসবকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম কমান। বাংলাদেশেও এমন সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে।
এদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি বছরের মত এবারও বেগুনের দাম রোজা শুরু হওয়ার ঠিক আগের দিনই বেড়ে গেছে। প্রতি কেজি বেগুন ৮০ টাকায় কিনতে হচ্ছে ভোক্তাকে, যা একদিন আগেও বাজার ও মানভেদে ছিল ৫০-৬০ টাকার মধ্যে। রোজায় বেগুনি তৈরির উপাদন হিসেবে বাড়তি ব্যবহার হওয়ায় প্রতি বছরই পণ্যটির দাম বেড়ে যায়।
গরুর মাংসের কেজি পনের দিন আগে দু-একদিনের জন্য বেড়ে ৭০০ টাকায় উঠেছিল। কিন্তু সেটা আবার কমে গিয়ে ৬২০-৬৮০ টাকায় স্থায়ী হয়। কিন্তু রোজার ঠিক আগের দিন খুচরা বাজারগুলোতে দাম ৭০০ টাকায় উঠেছে।
মতবিনিময় সভায় অনলাইনে যুক্ত হয়ে রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধের আহ্বান করেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, পণ্য পরিবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজি বন্ধ হলে পণ্যের দাম আরও কমে যাবে। এসময় ভোক্তাকণ্ঠের সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নান অভিযোগ করেন, উৎপাদক পর্যায়ে কোন সরবরাহ ঘাটতি না থাকলেও খুচরা পর্যায়ে দামবৃদ্ধির অন্যতম কারণ চাঁদাবাজি। এসময় তিনি ভোক্তাদের 'প্যানিক বায়িং' না করার জন্য আহ্বান জানান।
চাঁদাবাজি বন্ধে অবশ্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামানও সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনির সহযোগিতা চেয়েছেন।
সপ্তাহখানেক আগেও ব্রয়লার মুরগির মাংস বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকায়, যা এখন বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকায়। রোজায় চাহিদা বৃদ্ধির কারণেই এই দাম বাড়ছে বলে জানান বিক্রেতারা।
জানা গেছে, টিসিবির তথ্যে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় খোলা আটা ১৪.৫২ এবং প্যাকেট আটা ২৫ শতাংশ বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আটার দাম বৃদ্ধির প্রবণতা তৈরি হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করেন।
বিশ্ববাজারে বিভিন্ন কাঁচামাল ও পণ্যের দাম বেড়েছে জানিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি দাবি করেন, সরকারকে কর ও শুল্কহার সমন্বয় করতে হবে। যেহেতু পণ্যের দাম ও শিপিং খরচ বেড়েছে, তাই শুল্ক ও করহার কমালেও সরকারের রাজস্বের ঘাটতি কমবে না, বরং সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়া যাবে।
এফবিসিসিআই সভাপতি জানান, কোভিড ও রাশিয়া-ইউক্রেন পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালসহ অন্যান্য পণ্যের দাম ও জাহাজ ভাড়া প্রতিনিয়ত বাড়ছে। দেশের উৎপাদন ও ব্যবসা বাণিজ্যের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
তবে প্রতি বছর যে পণ্যটি নিয়ে বেশি হইচই তৈরি হয়ে সেই পেঁয়াজের দাম এবার রোজা শুরুর আগ মুহূর্তে নিম্নমুখী। বাজারভেদে ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ঢাকার বিভিন্ন বাজারে।