‘বিশ্বের বৃহত্তম’ ফ্লাওয়ার মিল চালু করলো সিটি গ্রুপ
আটা, ময়দা, সুজি উৎপাদনে নারায়ণগঞ্জে বিশ্বের বৃহত্তম ফ্লাওয়ার মিল চালু করেছে সিটি গ্রুপ। রূপসী বাংলা ফ্লাওয়ার মিল নামে অত্যাধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির এই কারখানায় দৈনিক ৬১৫০ টন ভোগ্যপণ্য উৎপাদন হবে।
রূপসী বাংলা ফ্লাওয়ার মিলের নির্মাতা ও যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সুইজারল্যান্ডের বুহলার গ্রুপ মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) সিটি গ্রুপের কাছে কারখানাটি হস্তান্তর করে। সেদিনই এর পূর্ণ কার্যক্রম শুরু হয়।
বুহলার এবং সিটি গ্রুপের মধ্যে ২০১৯ এর ডিসেম্বরে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এর আগে ২০২১ সালের মার্চে স্বল্প পরিসরে কার্যক্রম শুরু হয় এ কারখানার।
সিটি গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক বিশ্বজিত সাহা বলেন, "২৩ একর জমিতে নির্মিত এ ফ্লাওয়ার মিলটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় বলেই আমরা জানি। এ কারখানায় ভূমি উন্নয়ন ছাড়াই এখন পর্যন্ত ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ হয়েছে। কর্মসংস্থান হয়েছে দেড় হাজারের বেশি মানুষের।"
তিনি বলেন, সুইজারল্যান্ডের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান 'বুলার' থেকে আনা হয়েছে কারখানার যাবতীয় মেশিন ও সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি। এ কারখানায় কাঁচামাল থেকে পণ্য উৎপাদন এমনকি ট্রাকে পণ্য লোড দেওয়াসহ সবকিছুই হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে।
ফুড পার্কে বর্তমানে ৩৯টি সাইলো (কাঁচামাল রাখার জায়গা) রয়েছে যার স্টোরেজ ক্ষমতা ৩ লাখ ৫ হাজার টন। গম, সয়া, ভুট্টা এবং মসুর ডালের মতো উপাদানগুলো খাদ্য পার্কে প্রতিদিন পাঠানো এবং অফলোড করা হয় এবং তাদের নিজস্ব প্ল্যান্টে ব্যবসা বা প্রক্রিয়াকরণের জন্য ব্যবহার করা হয়।
কীভাবে গুণগতমান ঠিক রেখে স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্বাস্থ্যসম্মত পণ্য উৎপাদিত হবে তার বিবরণও দিয়েছে সিটি গ্রুপ।
সিটি গ্রুপ বলছে,, কারখানার সাইলো থেকে কাঁচামাল প্রথমেই যাবে ম্যাগনেটিক সেপারেশন মেশিনে। যেখানে গমে লোহাজাতীয় উপাদান থাকলেও তা আলাদা করা হবে। এরপর বাছাইকৃত কাঁচামাল যাবে টাচ মেশিনে। যেখানে প্রাথমিকভাবে গম পরিষ্কার করা হয়। এরপর সেটি বিন হয়ে চলে যায় ভেগা সেপারেটর মেশিনে। এই মেশিন চালুনি হিসেবে কাজ করে। গমের চেয়ে বড় কিংবা ছোট দানাগুলোকে আলাদা করে ভেগা সেপারেটর। চার স্তরে চলে এই কার্যক্রম। একেকটি মেশিনের দৈনিক সক্ষমতা ৬২৫ মেট্রিক টন।
এরপর গমে থাকা পাথর বের করে দেয় ডি স্টোনার মেশিন। আটটি মেশিনের প্রতিটির দৈনিক সক্ষমতা ৬২৫ মেট্রিক টন। এরপর এসপারেটর মেশিনে বাতাসের মাধ্যমে গমের চেয়ে পাতলা দানা আলাদা করে নেয়। স্কোরার গমের গায়ের ময়লা পরিষ্কার করে। এরপর সেই গম কালার সটার মেশিনে পাঠানো হয়। এই মেশিন ৩০টি ক্যামেরার মাধ্যমে গমে থাকা ভুট্টা, সয়াবিন ও ডাবরিসহ অন্যান্য উপদান শনাক্ত করে এবং বাছাই করা হয়। আদ্রতা নিয়ন্ত্রণ করা হয় এমওয়াইএফডি মেশিনে। এরপর গমগুলোকে ২৪ ঘণ্টা বিনে রেখে পণ্য উৎপাদনের জন্য ক্রায়িংয়ে পাঠানো হয়।
বিশ্বজিত সাহা বলেন, গমের পুষ্টিগুণ পরিমাপ করার জন্য রয়েছে অত্যাধুনিক এনআইআর মেশিনে। এই মেশিনের ডিসপ্লেতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গমের পুষ্টিগুণের তথ্য ভেসে উঠে। এছাড়া কারখানার মেঝে পরিষ্কার করার জন্য রয়েছে। অটোমেশন হাউস কিপিং সিস্টেম। মেঝেতে ময়লা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টেনে নেবে এই মেশিন।
সিটি গ্রুপ বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় কনগ্লোমারেট কনজ্যুমার পণ্য প্রস্তুতকারকদের মধ্যে একটি। দেশের মোট চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ সরবরাহ করে তারা। বর্তমানে তাদের ৪০টি সিস্টার কনসার্ন রয়েছে, যেখানে কাজ করছে ২৫ হাজারেরও বেশি লোক।
১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সিটি গ্রুপ। তখন কোম্পানিটি মূলত সরিষার বীজ প্রক্রিয়াজাত করে তেল উৎপাদন করতো। বছরের পর বছর ধরে সিটি গ্রুপ তার কার্যক্রম সম্প্রসারিত করেছে, বিশেষ করে খাদ্য খাতে।
ঢাকার বাইরে ৩০ কিলোমিটার দূরে বিশাল উৎপাদন কেন্দ্র থেকে কাজ করে কোম্পানিটি। সেখানে সরিষা, সূর্যমুখী, সয়াবিন তেল, ময়দা, মসুর ডাল ও চাল উৎপাদন হয়। সিটি গ্রুপ তীর ব্র্যান্ডের অধীনে ময়দা উৎপাদন করে এবং স্থানীয় ভোক্তা, বেকারি এবং রেস্তোরাঁকে সরবরাহ করে।
দেশে আটা, ময়দা, সুজির ব্যবসার পরিধি নিয়ে তথ্য নেই কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কাছে। তবে ইউএসএআইডির তথ্যমতে, ২০২১ সালে ফ্লাওয়ার মিলে ব্যবহৃত গমের চাহিদা ছিল ৬৪ লাখ টন।
সিটি গ্রুপের পরই দেশে বৃহৎ ফ্লাওয়ার মিল রয়েছে মেঘনা, বসুন্ধরা, টিকে, আকিজ, এস আলম, সেনাকল্যাণ সংস্থাসহ কয়েকটি বড় শিল্প গ্রুপের। পাশপাশি সারাদেশে ছোট-বড় দুই শতাধিক কারখানা রয়েছে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।