ক্ষমতার অতিকেন্দ্রীকরণ থেকে দারিদ্র্যের জন্ম: অভিজিৎ ব্যানার্জি

অর্থনীতি

টিবিএস রিপোর্ট
13 January, 2022, 09:35 pm
Last modified: 14 January, 2022, 05:26 pm
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের মুখোমুখি হয়েছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ ব্যানার্জি। সেখানে তিনি কথা বলেছেন ‘পাবলিক পলিসিজ: হোয়াট ওয়ার্কস অ্যান্ড হোয়াট ডাজ নট’ নিয়ে।

অতিকেন্দ্রীকরণ থেকে জন্ম নেয় জবাবদিহিহীনতা। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক অভিজিৎ ভি ব্যানার্জির আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল এটি।

'পাবলিক পলিসিজ: হোয়াট ওয়ার্কস অ্যান্ড হোয়াট ডাজ নট' নিয়ে এই আলোচনার সঞ্চালনায় ছিলেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর সম্পাদক ইনাম আহমেদ এবং বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। 

 

 

অতিকেন্দ্রীকরণের সমস্যা

একটা সমস্যা অন্তত ভারতবর্ষে আমি দেখেছি, ওভারসেন্ট্রালাইজেশন (অতিকেন্দ্রীকরণ)। ধরুন, পাঁচ বছরে একটা ভোট হবে এবং সেই ভোটে ১০ বা ২২ কোটি লোকের কে কর্ণধার হবে এটা নির্ণয় হবে। কিন্তু আপনি কোনোদিনই পারবেন না ২২ কোটি লোকের উন্নতি করতে। সুতরাং আপনি বলবেন যে, আমি তো যা পারছি করছি। এবং বিচার করা খুব শক্ত।

যদি আমার দশ হাজার লোকের দায়িত্ব থাকত, তাহলে আমি বলতে পারতাম না যে, আমি খুব চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। বা হয়নি বা যতটা হতে পারত ততটা হয়েছে, তার বেশি হয়নি।

 সুতরাং আমার মনে হয় একটা গোড়ার সমস্যা হচ্ছে এই ওভারসেন্ট্রালাইজেশন। ওভারসেন্ট্রালাইজেশনের ফলে জবাবদিহি ভীষণ কমে যায়। জবাবদিহিকে বটম লাইন বলব না, তবে জবাবদিহিকে ছাড়া এগোনো খুব শক্ত।

উপায়টাই মুখ্য ব্যাপার, ইচ্ছা গৌণ

হ্যাঁ, লোকে বলে ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। অনেক লোকই দেখেছি যাদের শিক্ষার অভাব নেই, কিন্তু এত বাধা আছে যে সেগুলোর সবকটা টপকানো বড্ড শক্ত। ইচ্ছা থাকে, কিন্তু তাদের কোনো টাকা নেই, তাদের কোনো চেনাজানা নেই, তাদের কোনো লেখাপড়া নেই। তাদের গ্রামে রাস্তা নেই, তাদের শহরে কোনো থাকার জায়গা নেই।  তাদের বাড়ির কাছে জলের ভেতরে আর্সেনিক আছে। তাদের বাচ্চাদের  অসুখ হয়; সে দায় নিয়ে পাঁচ রকমের মাথা ঘামানো। তাদের চারদিকে পাবলিক হেলথের অভাব। যদি সবকটাকে দেখেন, তাহলে যারা পারেন তারা অসামান্য। এই জায়গা থেকে যারা উঠে আসতে পারেন, তারা অসামান্য। আর যারা পারেন না, তাদের আমি দোষ দিই না। কারণ আমার মতো লোক পারত না। 

রাজনৈতিক সদিচ্ছার কথা যদি আসি; আমাদের প্রশ্ন করতে হবে, কেন হবে না। রাজনীতিবিদরা জানেন যে নির্বাচনে জিততে হলে ভালো ফল দিতে হবে। গণতন্ত্রের লজিকটা খুবই সহজ। সেই লজিকটা কেন কাজ করে না, তা নিয়ে আমিও অনেক বছর ধরে কাজ করেছি। সেটা আমার কাছে বড় প্রশ্ন। খানিকটা বৈধতা সমস্ত সিস্টেমেরই দরকার। এমনকি অত্যন্ত অকেজো সরকাররাও চায় খানিকটা বৈধতা পাক। এবং সেই বৈধতা পাওয়ার জন্য তারা কিছুটা করতেও প্রস্তুত।

সারা পৃথিবীতে গত ২০ বছরে যদি দেখেন, শিশু মৃত্যুর হার অনেক কমে গেছে। এবং সেগুলোর অনেকটাই কমেছে আফ্রিকার নানা দেশে যেখানে গণতন্ত্র হয়তো নামেই আছে। তা-ও কমেছে [শিশু মৃত্যুর হার], কারণ কিছু কিছু না করে দেখালে একসময় বৈধতায় সমস্যা আসে।

সম্পদের মিসঅ্যালোকেশন ও দারিদ্র্য

রিসোর্স মিসঅ্যালোকেশন একটা বর্ণনা। এর কারণে ঢুকতে গেলে তখন দারিদ্র্যের কথাটা প্রথম ওঠে। মিসঅ্যালোকেশন বলতে কাঁচা বাংলায় ধরুন, একজনের কর্মক্ষমতা আছে, আরেকজনের কাছে সম্পদ আছে। যার কাছে কর্মক্ষমতা আছে, তার কাছে সম্পদ নেই। যার কাছে সম্পদ আছে, তার কাছে কর্মক্ষমতা নেই। সেজন্যেই একজনের ব্যবসা করার ইচ্ছা আছে, কিন্তু সে ব্যবসা করার ঋণ পেতে পারে না। 

এর সাথে দারিদ্র্য কথাটার খুব সহজ একটা যোগ আছে। সেটা হচ্ছে দরিদ্র মানুষের ভেতরে অনেকেরই অনেক কর্মক্ষমতা থাকে, কিন্তু তারা সর্বদা সেই কর্মক্ষমতাগুলো ব্যবহার করতে পারে না। আমি বলব, অন্তত অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হয়তো পারে না। যতটা লড়াই করে তাদের একটু একটু এগুতে হয়, সেই লড়াইটা এত শক্ত এবং এত সময় সাপেক্ষ যে তারা শেষ অবধি সেটা করে উঠতে পারে না।

সুতরাং প্রধান একটা কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের যত দরিদ্র মানুষ আছে, তাদের দুহাজার-চার হাজার হয়তো বিল গেটস, ওয়ারেন বাফেট হতে পারত। তারা হয়নি। তারা সবাই মিসঅ্যালোকেটেড। যে সুযোগগুলো তারা পেতে পারত, তা পায়নি। নিশ্চয়ই কয়েক লক্ষ আছে যারা কিছু একটা করে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারত, কিন্তু তারা সুযোগ পায়নি।  তারা লেখাপড়ার সুযোগ পায়নি। যে সমস্ত কার্যক্ষমতা শেখার সুযোগগুলো আছে, সেগুলোও পায়নি। যে পুঁজি দরকার সেটা পায়নি। যে ধরনের মানসিক স্থিরতা দরকার একটা বড় কাজ করতে, সেটা পায়নি। নানা কারণেই তারা যে কর্মক্ষমতাগুলো ছিল সেগুলোকে ব্যবহার করার সুযোগ পায়নি।

কাজেই এখানে শুধু সম্পদের অপচয় হচ্ছে না, সুযোগেরও প্রচুর অপচয় হচ্ছে।

সম্পদ থাকলে সুযোগটা একটু সহজে আসে। ভারতবর্ষে দেখেছি, যে ছেলে লেখাপড়া করে না, স্কুলে পড়াশোনায় এগোতে পারে না, কিন্তু তার বাবা-মায়ের যদি পয়সা থাকে তবে চারটে টিউটর দিয়ে তাকে কোনোরকমে পাশ করানো হয়। আর যদি সেই ছেলের বাবা মা'র হাতে কোনো পয়সা না থাকে তাহলে তাকে বলা হয় যে, তোর দ্বারা হবে না, তুই ছেড়ে দে। এখন রিক্সা টান, বা যা করার কর। 

তো সুযোগটা অনেকটা সম্পদ থেকেও আসে। যাদের সম্পদ আছে তাদের অনেক সময় সামাজিক ধরনের সুযোগও থাকে। যেমন আমার কাকা, মাসি, পিসেমশাইয়ের হয়তো কিছু আছে; তারা কাউকে ফোন করে বলে দিলেন। তিনি আমাকে একটা চাকরি দিয়ে দিলেন। আর যাদের সম্পদ নেই, তাদের সেই সম্পর্কগুলোও নেই।

পলিসি প্লাম্বিং

প্লাম্বিংয়ের দুটি বিশেষ কথা বলব। একটা হচ্ছে, যে জায়গায় আমি প্লাম্বিংটা করব, যেখানে আমি পাইপটা লাগাব, সেখানে জায়গাটা কী রকম, তার মাটিটা কীরকম ভিজে, এগুলো একটুখানি যাচাই করে নিতে হয়। অনেক সময় যেটা আমার মনে হয় যে ভুল হয় একটা কারণে, সেটা হচ্ছে মানুষ তড়িঘড়ি করে এগিয়ে যায়। 

দুটো স্টেপ। একটা স্টেপ হচ্ছে যাচাই করা যে, এখানে কি মানুষের এই অভাবটা আছে? আমরা যে অভাবটা পূরণ করছি সেই অভাবটা আছে? এইটা যদি দিই লোকেদের, তারা কি বলছে যে এটা পেলে একটু এগোতে পারব? 

আর দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, অনেকসময় আমাদের যে কথাগুলো মনে হয় যে হ্যাঁ, এটা নিশ্চয়ই এভাবেই হবে, ওটা ভুল হয়। এক ধরনের খোলা মন এবং যাকে আমরা বলি এক্সপেরিমেন্টাল অ্যাপ্রোচ, সেটা দরকার। যে, এটা চেষ্টা করে দেখি।  এক্ষুনি এক্ষুনি এটাই করব ধরে না নিয়ে, যদি না হয় তাহলে আরেকটা জিনিস করব। শেষ অব্দি আমরা দেখি যে অনেক কিছুতেই দুই তিন চার বার করে হয়তো চেষ্টা করতে হয়। কিন্তু শেষ অবধি সমাধান একটা পাওয়া যায়। কিন্তু সমাধান পেতে খানিকটা সময়, খানিকটা ধৈর্য, খানিকটা প্রশ্ন করার এবং প্রশ্নের উত্তরটা বোঝার ক্ষমতা লাগে। 

স্কুল গভর্নেন্স ও অপটিমাল মিক্স

শিক্ষাকে একটু উন্নত করতে হবে—কথাটা বলা খুব সোজা, কিন্তু কার্যত কী করতে হবে বোঝা খুব শক্ত। এর এক হাজার রকম উপায় আছে। বিভিন্নভাবে আমরা একটা করার চেষ্টা করতে পারি। এবং সবকটা এক নয়।

যেমন ইন্দোনেশিয়াতে একটা এক্সপেরিমেন্ট হয়েছিল। প্রায় সেরকম এক্সপেরিমেন্ট অন্য জায়গায়ও দেখেছি। সেটা হচ্ছে যে টিচারদের মাইনে দ্বিগুণ করে দেওয়া হয়েছিল। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের এক্সপেরিমেন্ট। তারপর দেখা হলো এতে পড়াশোনার উন্নতি হয় কি না। কোনোভাবে পড়াশোনার উন্নতি হয়নি তাদের। আমি বলছি না যে টিচারদের মাইনে বন্ধ করে দেওয়া উচিত, কিন্তু মাইনে বাড়িয়ে আর অন্য কিছু না বাড়িয়ে পড়াশোনার কতটা উন্নতি করা যায় আমি জানি না। 

আরেকটা বলব যে, স্কুলে বাড়ি, স্কুলে বাথরুম, এরকম আরো বহু র‍্যান্ডমাইজড কন্ট্রোল ট্রায়াল আছে। প্রত্যেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে খুব বেশি কোনো উন্নতি হয় না। এখানে একটা জিনিসই আমরা দেখেছি যে সিস্টেমেটিক্যালি বড় উন্নতি হয়, সেটা হচ্ছে পড়ানোর ধরনের উন্নতি হয়, পেডাগোজি।

পেডাগোজি সাহায্য করে। কিন্তু এটি খুব সহজ নয়। কারণ এটা শিখতে হয়। আরেক দিক থেকে খুব সস্তা। কারণ, বলা হচ্ছে না যে বড় বড় কম্পিউটার এনে সেই কম্পিউটার দিয়ে পড়ান। বলা হচ্ছে, যে ছাত্ররা এখনো ভালো করে পড়তে শেখেনি, তাদের যদি ইতিহাস শেখান তাতে কিছু লাভ হবে না। আগে পড়তে শেখান, তারপর ইতিহাস পড়াবেন। সে যদি যোগ বিয়োগ করতে না পারে, তাকে ক্যালকুলাস শিখিয়ে লাভ নেই।

এ কথাটা তো শক্ত কথা নয়। কিন্তু ভারতবর্ষে দেখেছি, এবং অন্যান্য দেশেও দেখেছি, পড়াতে গিয়ে অনেক ধরনের সমস্যা আসে। এ তো সোজা কথা—যে ছাত্র যেটা জানে না, তাকে সেটা পড়ান। কিন্তু এটা করতে গিয়ে নানা রকমের ফ্যাচাং আসে। একটা হলো, শিক্ষকরা বলেন যে, না, আমাদের সিলেবাস কী করে শেষ হবে? দ্বিতীয় কথা, বাবা-মারা বলেন, আচ্ছা সিলেবাস শেষ না করে আমার ছেলে ম্যাট্রিক দেবে কী করে? তারপরে সে ইউনিভার্সিটি ঢুকবে কী করে?

হয়তো এসব স্কুল থেকে দু'চারজন ইউনিভার্সিটি তে ঢুকবে। কিন্তু অধিকাংশরা তো সেভেন-এইটে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে চাকরি নেবে। সুতরাং, এটাতো একটা লড়াই আছেই। কেন কি হয়েছে বাবা মারা ছেলেদের সম্পর্কে উচ্চাকাঙ্ক্ষী, তাদের সঙ্গে অন্যদের একটা লড়াই থাকে।

একটা খুব সোজা কথা, কিন্তু পড়তে গিয়ে অনেক ধরনের প্লাম্বিং এসে যায়। এটাকে কী করে করবে? কী করে লোকেদের বোঝাবে যে এটাই করার? কত তাড়াতাড়ি করা যায়, যাতে পুরো সিস্টেমে চেষ্টা না করতে হয়? ইত্যাদি ইত্যাদি। এই ধরনের নানা রকম প্রশ্ন আসে।

দরিদ্ররা প্রকৃতপক্ষে স্বাস্থ্যসেবার জন্য বেশি খরচ করে কিন্তু কম পায়

আমি যদি একটা হাসপাতালে যাই, আমি কিন্তু জানি যে সেই হাসপাতালে কী ধরনের ডাক্তার আছে। আমি ইন্টারনেটে দেখে যাই যে এই স্পেশালিস্ট আছে, স্পেশালিস্টের কী কোয়ালিফিকেশন। কিন্তু আমি দেখেছি, কাউকে যখন গিয়ে জিজ্ঞেস করি, আপনি যে ডাক্তারের কাছে গেলেন সে কি এমবিবিএস? তার কী কোয়ালিফিকেশন আছে? তখন সে বলে, আমি কী করে জানব? একটা [কোয়ালিফিকেশন] তো দেয়ালে টাঙানো থাকে। কিন্তু দেয়ালে টাঙানো অনেকসময় থাকে, যেগুলো হয়তো ভুয়া।

আবার রাজস্থানের কাছে দেখেছি গরিব লোকেরা ছুটে ডাক্তারের কাছে যায়। বাচ্চার একটু জ্বর হলেই ছুটে যায়। ডাক্তার তাকে সাতটা ওষুধ দেয়। সে ওষুধগুলো খাওয়ানোর কোনো কারণ নেই। …এইসব ডাক্তাররা অনেক সময় হয়তো দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে খানিকটা টাকার লোভে এসব ওষুধ দিয়ে দেয়। তার ফলে ক্ষতি বই লাভ হয় না।

সুতরাং, গরিব লোকেদের বেশি খরচা হয় কিন্তু কম পায়। এর একটা বিরাট কারণ হচ্ছে তাদের ওপরে যে ধরনের রেগুলেশন থাকা দরকার সেগুলো নেই। কলকাতায় আমি জানি, আমি যদি হাতে পর্চা দিয়ে কোনো ওষুধ লিখে দেই, এই ওষুধ দিয়ে দেবে। এগুলো তো হওয়ার কথা না। এগুলোতে তো নিয়ম আছে, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন লাগবে। কিন্তু আপনি যদি ডাক্তারখানায় যান কলকাতায়, যে কমপাউন্ডার আছে সে সাতটা ওষুধ লিখে দেবে। এইভাবে চলে। …ওষুধ যেকোনো জায়গায় পাওয়া যায়। …মুদির দোকানেও। এই অবস্থা হওয়ার কথা না। এটা রেগুলেশনের ইচ্ছের অভাব। সরকার যদি চেষ্টা করত, এটা বন্ধ করা এত শক্ত নয়

শুধু অর্থ নয়, সেবাও দিতে হবে

আমি একটা উদাহরণ দিই। বাংলাদেশের উদাহরণ। ব্র্যাকের একটা প্রোগ্রাম, তার বাংলাদেশে এবং অন্যান্য জায়গায় র‍্যান্ডমাইজড ট্রায়াল কন্ট্রোল হয়েছে। আমরা বাংলাদেশে করেছিলাম এবং ঘানায় করেছিলাম। হতদরিদ্রদের জন্য। সে প্রোগ্রামের একটা গোড়ার কথা ছিল। সেটা হচ্ছে, এদের কনফিডেন্স, নিজেরা যা করতে চাইছে তার সম্বন্ধে এদের যে বিচারটা আছে, এগুলো সবকটাই একটু একটু করে গড়তে হবে। ব্র্যাক থেকে তাদের একটা পুঁজি বা অ্যাসেটও দেওয়া হতো। তার সাথে সাথে একটা লোক ছিল, যে মাঝে মাঝে গিয়ে বলত, তোমরাও পারবে। কেন পারবে না? উৎসাহ দেওয়া। তাদের মানুষ হিসেবে রেকগনাইজ করা। আমাদের দেশে দেখেছি অনেকেই যারা দরিদ্র তাদের কোনোদিন কেউ বলেনি যে, আপনারাও মানুষ, আপনাদেরও ক্ষমতা আছে আপনারাও করতে পারেন।

টিঙ্কারিং উইথ দ্য স্মল

অনেক কিছু পৃথিবীতে হয় যে গুলোর উপরে আমাদের কোনো হাত নেই। আমি দেখেছি যে কোথায় কখন কতটা গ্রোথ হয়, তাতে একটু হয়তো পলিসির ভূমিকা আছে; কিন্তু মোটামুটি আমি যদ্দূর দেখেছি, পলিসি দিয়ে খুব বেশি উনিশ-বিশ করা যায় না। সুতরাং এমন নয় যে অন্যান্য কিছু হবে না। আমাদের কাজটা অর্থনীতি হিসেবে বাট ডেভেলপমেন্ট প্রফেশনাল হিসেবে হচ্ছে, যে জিনিস গুলো নিজে থেকে হবে না, যেগুলোর ওপর আমাদের খানিকটা কন্ট্রোল আছে, সেগুলোকে খেয়াল করা। 

বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনের নীতি

যারা হতদরিদ্র, যারা কোনো সুযোগ জীবনে পায়নি, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। ব্র্যাকের প্রোগ্রামে আমরা অতি-দরিদ্রদের ওপর মনোযোগ দিতে দেখেছি। সুতরাং, আমরা কার উপর ফোকাস করছি, তার ওপর এটা নির্ভর করে। সমাজে কেউ কেউ কেন অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর হচ্ছে না, এই প্রশ্ন করতে হবে আমাদের। 

ধরুন, যদি ১০০টা লোক দেখেন, তাদের মধ্যে হয়তো ৪-৫ জন আছে যারা সত্যি সত্যি বড় ব্যবসা করতে পারে। এখন খানিকটা দেখছি যে তাদের আইডেন্টিফাই করারও খানিকটা উপায় আছে। এবং আইডেন্টিফাই করতে পারলে তাদের নিয়ে এগোতাম। তারা এগিয়ে নিয়ে যাবেন, তারা ব্যবসা তৈরি করবেন, তার থেকে চাকরি হবে, তার থেকে অন্যরা পাবে।

এই ৪-৫ জনকে যদি আইডেন্টিফাই করতে পারতাম, তাদের যদি একটা ঠ্যালা দিতে পারতাম, তাদের যদি একটা সুযোগ দিতে পারতাম, তাহলে হয়তো তার থেকে অনেক দূর যাওয়া যেত।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.