বছরের পর বছর লোকসানের পর আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে ঢাকা ডাইং

অর্থনীতি

11 January, 2022, 12:00 pm
Last modified: 11 January, 2022, 02:25 pm
ধারাবাহিক লোকসানের পর কোম্পানির শেয়ার ৩ টাকায় নেমে গিয়েছিল। তবে, এখন ডিএসই-তে ২৩ টাকায় লেনদেন হচ্ছে কোম্পানিটির শেয়ার।

দেশের অন্যতম প্রাচীন হোম টেক্সটাইল উৎপাদনকারী দ্য ঢাকা ডাইং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি, সিকিউরিটিজ নিয়ন্ত্রকের তত্ত্বাবধান ও মালিকদের প্রচেষ্টায় আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। 

এর ফলে কিছুটা উদ্বেগ কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন বিনিয়োগকারীরা। গত বছরে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম সাড়ে ছয় গুণ বেড়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ২৩ টাকায় লেনদেন হয়েছে। তাই বিনিয়োগকারীরা আবারও ভালো রিটার্নের আশা করছেন। 

২০১৫-১৬ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত ধারাবাহিক লোকসানের পর কোম্পানিটির শেয়ার ৩ টাকায় নেমে গিয়েছিল, যেখানে শেয়ারের ফেস ভ্যালুই ১০ টাকা। বর্তমানে ডিএসই-তে এই কোম্পানির শেয়ার ২৩ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।

২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত চার বছরে কোম্পানির মোট লোকসান হয়েছিল ১৩৬ কোটি টাকা। মূলত গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং বিদ্যুৎ সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠানটির কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই লোকসান হয়েছে। 

এছাড়া, সোনালি ব্যাংক এবং অগ্রণী ব্যাংকের ঋণ খেলাপী হয়ে গিয়েছিল কোম্পানিটি। পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ঋণ খেলাপী হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি অনেক বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

এই অবস্থা থেকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং কোম্পানির পরিচালকদের চেষ্টায় আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পেরছে কোম্পানিটি।

এ বিষয়ে কোম্পানির কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে বিএসইসি'র একাধিক কর্মকর্তারা সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নিয়েই কোম্পানির পরিচালকদের সঙ্গে সভা করেছে। সভায় কোম্পানির গ্যাস সংযোগ ফিরে পেতে উচ্চ আদালতে আবেদন করতে পরামর্শ দেওয়া হয়। পাশাপাশি ২০১৬ সাল থেকে বন্ধ থাকা বার্ষিক সাধারণ সভার আয়োজনও করতে বলা হয়।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে কোম্পানির এক পরিচালক বলেন, "উচ্চ আদালতের আদেশে গ্যাস সংযোগ পুনরায় স্থাপন হয়েছে। পাশাপাশি খেলাপী ঋণগুলোও রিশিডিউলের মাধ্যমে নিয়মিত করা হয়েছে। তাছাড়া সরকারের স্টিমুলাস প্যাকেজ থেকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে কোম্পানিটির কারখানাও পুরোদমে চলছে।"

সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৬২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পর কোম্পানিটির বার্ষিক নিট মুনাফা হয়েছে ৫.২২ কোটি টাকা। এছাড়া, এই অর্থবছরের প্রথম তিনমাসে ১৩৮ প্রবৃদ্ধির পর, তাদের নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ২.৭০ কোটি টাকা।

কোম্পানিটি ২০২১ অর্থবছরে এর শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশও ঘোষণা করেছে।

১৯৬৩ সালে যাত্রা শুরু করা কোম্পানিটি বর্তমানে কিউসি গ্রুপ্রের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। এর পরিচালনা পর্ষদে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, সমীর কাদের চৌধুরী, সামিহা কাদের চৌধুরী ও সাজিয়া কাদের চৌধুরী কোম্পানিটির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তারা সবাই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সাবেক নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আত্মীয়।

১৯৯৬ বা ১৯৯৭ সালের দিকে প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা নেন তারা। এর আগে কোম্পানিটি সরকারি ব্যাংকের অধীনে ছিল। 

এছাড়াও এর পর্ষদে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের একজন প্রতিনিধি রয়েছেন। কোম্পানির ১২.৪৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে ব্যাংকটির কাছে।

দ্য ঢাকা ডাইং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি বর্তমানে হোম টেক্সটাইল যেমন- বেডশিট, টাওয়াল ইত্যাদি রপ্তানির পাশাপাশি স্থানীয় বাজারেও এসব পণ্য সরবরাহ করছে। 

২০০৯ সালে কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে ১.৭ কোটি শেয়ার ছেড়ে তালিকাভুক্ত হয়েছিল। এরপর ২০১৩ সালে একটি স্পিনিং কারখানা তৈরির জন্য রাইট শেয়ারের আবেদন করে। কিন্তু সিকিউরিটিজ কমিশনের অনুমোদন এবং ব্যাংক ঋণ না পাওয়ায় তারা এই পরিকল্পনা বাস্তাবায়ন করতে পারেনি।
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.