টেক্সটাইল রপ্তানিতে যেভাবে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামকে ছাড়িয়ে যেতে চায় ভারত 

অর্থনীতি

টিবিএস ডেস্ক
10 January, 2022, 02:25 pm
Last modified: 10 January, 2022, 02:29 pm
ভারতের বস্ত্র মন্ত্রণালয় আগামী পাঁচ বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি রপ্তানি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

যুগ যুগ ধরে মানসম্মত ফেব্রিকের দেশ হিসেবে পরিচিত ভারতে টেক্সটাইল শিল্প একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক হাতিয়ার হলেও বিশ্ব বাণিজ্যে দেশটির সাম্প্রতিক চিত্র ভিন্ন। দেশটিকে টেক্সটাইল রপ্তানি ২০১৫-২০১৯ এর মধ্যে ৩ শতাংশ এবং ২০২০ সালে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে। এসময় এক্ষেত্রে বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনাম লাভ করেছে।

ভারতে টেক্সটাইল খাত উন্নয়নে রয়েছে বেশ কিছু সমস্যা। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের তুলনায় ভারতে বিদ্যুতের দাম ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি। পোশাকের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য এবং কানাডার মতো দেশ এবং কাপড়ের জন্য বাংলাদেশের প্রধান আমদানিকারকদের সাথে বিনামূল্যে বা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির অভাবে রপ্তানিকারকদের উপর মূল্যের চাপ সৃষ্টি করে। এছাড়া, মূলধনের উচ্চ ব্যয় এবং প্রায় সমস্ত টেক্সটাইল যন্ত্রপাতি আমদানি-নির্ভর হওয়ায় বিনিয়োগকৃত মূলধনের সঠিক রিটার্ন অর্জন করা কঠিন হয়ে পড়ে।

তবে, কোভিড-১৯ মহামারিতে বিশ্ব বাণিজ্যের ধরণ বদলে যাওয়ায় বর্তমানে ভারতীয় টেক্সটাইলগুলোর জন্য রয়েছে নতুন সুযোগ। এ অবস্থায় ভারতের উচিত ২০১৯-২০২৬ সালের মধ্যে কমপাউন্ড অ্যানুয়াল গ্রোথ রেটে ৮ থেকে ৯ শতাংশ রপ্তানি বাড়ানোর চেষ্টা করা উচিত। এতে করে ২০২৬ এর মধ্যে রপ্তানি আয় ৬৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।

এদিকে ভারতের বস্ত্র মন্ত্রণালয় আগামী পাঁচ বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি রপ্তানি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এই লক্ষ্যগুলো অর্জনের মাধ্যমে টেক্সটাইলে ৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন থেকে ১০ মিলিয়ন ব্যক্তির কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

তবে, ২০১৯ এ ৩৬ বিলিয়ন ডলার থেকে ৬৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ভারতকে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে জোর দিতে হবে। প্রথমত, তুলা বোনা থেকে শুরু করে টেক্সটাইলের অন্যান্য ক্ষেত্রের জন্য ভারতকে একটি আঞ্চলিক কাপড়ের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এতে করে ৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে এ শিল্প। এছাড়া, এমএমএফ (ম্যান-মেড ফাইবার) পণ্যগুলোতে অংশীদারিত্ব অর্জনের জন্য ২.৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ৩ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে।

এদিকে মিত্র, পিএলআই-এর মতো সাম্প্রতিক স্কিমগুলো ভারতীয় সরকারের গুরুত্বেরই প্রতিচ্ছবি।

তবে, এর সাথে দরকার আরও অনেক কিছুই। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ২০ থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়া নতুন বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য সেই বিনিয়োগে আকর্ষণীয় রিটার্ন নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, ভারতকে যন্ত্রপাতির আমদানি শুল্ক কমানো বা ক্যাপেক্সের খরচ কমিয়ে আনার জন্য দেশিয় উৎপাদনের প্রচার করতে হবে। এসব ছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হলো মূল আমদানিকারকদের সাথে মুক্ত-বাণিজ্য বা প্রেফারেনশিয়াল-ট্রেড চুক্তিগুলি চালিয়ে যাওয়া।

এছাড়া, টেক্সটাইল রপ্তানি যাতে কার্যকরভাবে বৃদ্ধি পায় এবং লাভজনকভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম হয় তা নিশ্চিত করার জন্য ভারতকে পরিষেবার মাত্রা অপ্টিমাইজ করা, ডিজিটাইজেশন গ্রহণ, ডিজাইনের ক্ষমতা তৈরি করা এবং টেকসইতা এবং ট্রেসেবিলিটিতে বিনিয়োগ করতে হবে। সেইসাথে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে হবে তাদেরকে।

ভারত যদি বিশ্বব্যাপী ভোক্তাদের কাছে সত্যিই নিজেকে আলাদা করতে চায়, তাহলে তাদের অবশ্যই দেশের টেক্সটাইল শিল্পকে ওয়ান-স্টপ গন্তব্য হিসেবে উন্নীত করতে হবে।

  • সূত্র: দ্য ইকোনমিক টাইমস 
     

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.