‘পদ্মা ব্যাংককে কোনো ছাড় দেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক’

অর্থনীতি

টিবিএস রিপোর্ট
10 January, 2022, 10:00 am
Last modified: 10 January, 2022, 12:36 pm
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যাংক ডেলমর্গান অ্যান্ড কোম্পানি পদ্মা ব্যাংকে ৭০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ, অর্থাৎ ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দিয়েছে।

বেসরকারি পদ্মা ব্যাংককে নিয়ম -কানুন মেনে ও গবেষণা করে আন্তর্জাতিক অ্যাকাউন্টিং মানদণ্ড মেনে বিদেশি বিনিয়োগের অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, এমন দাবি করছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এহসান খসরু।

রোববার (৯ ডিসেম্বর) পদ্মা ব্যাংকের গুলশান হেড অফিস থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এহসান খসরু এমন দাবিকরেন।

তিনি বলেন, "পদ্মা ব্যাংককে আরও ভালো কাজ করতে ও কর্তৃপক্ষের উদ্যোগের পথকে সুগম করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো ছাড় দেয়নি। সব কিছু স্বচ্ছতার সঙ্গে হয়েছে."

বিদেশি বিনিয়োগ পেতে পদ্মা ব্যাংকের আর্থিক বিবরণী থেকে লোকসানের তথ্য গোপনে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্মতি দিয়েছে- সম্প্রতি এমন একটি প্রতিবেদন কিছু সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

প্রেস বিজ্ঞপিতে টিআইবির বিবৃতির প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, "একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন এমন একটি স্বচ্ছ উদ্যোগকে 'প্রতারণামূলক সুবিধা' বলে আখ্যায়িত করে বিবৃতি দেয়ায় আমি হতবাক হয়েছি। কোনো ধরনের গবেষণা না করে, ভালোভাবে বিচার-বিশ্লেষণ, যাচাই-বাচাই না করে শুধু গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে কোনো আন্তর্জাতিক সংগঠনের এমন বিবৃতি দেওয়া বিস্ময়কর ঘটনা। এটাকে আমি স্বচ্ছ একটি প্রতিষ্ঠানের অস্বচ্ছ বিবৃতি বলছি। এ ধরনের উদ্ভট বিবৃতি টিআইবি কোনোভাবেই দিতে পারে না।''

পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, "নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পদ্মা ব্যাংককে যে সহায়তা করছে, সেটা বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। এর আগে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংককে একই ধরনের সহায়তা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।"

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যাংক ডেলমর্গান অ্যান্ড কোম্পানি পদ্মা ব্যাংকে ৭০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ, অর্থাৎ ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দিয়েছে। এর অর্ধেক বিনিয়োগ হবে মূলধন হিসেবে। বাকি অর্ধেক হবে বন্ড বা অন্য উপায়ে। এই বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতিসহ সব ধরনের নিয়ম-কানুন মেনে পদ্মা ব্যাংক কাজ করছে।

এহসান খসরু বলেন, "পদ্মা ব্যাংকের ২০২০ সালের আর্থিক বিবরণী ভালোভাবে দেখে ও বিশ্লেষণ এবং গবেষণা করে ডেলমর্গান পদ্মা ব্যাংকে বিনিয়োগ করতে রাজি হয়েছে। ব্যাংকটির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। এখান থেকে তারা ভালো মুনাফা পাবে। এ সব বিচার-বিশ্লেষণ করেই ডেলমর্গান এই ব্যাংকে বিনিয়োগের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। এখানে কোনো ধরনের অস্বচ্ছ তথ্য দেওয়া হয়নি। কোনো ধরনের প্রতারণারও আশ্রয় নেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, "সদ্য শেষ হওয়া ২০২১ সালের আর্থিক বিবরণী আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবে পদ্মা ব্যাংক। যা স্বচ্ছতা-জবাবদিহির সঙ্গে তৈরি করা হচ্ছে। এখানে প্রতারণার প্রশ্ন কেন আসছে, আমি বুঝতে পারছি না।"

তিনি বলেন, "সাবেক ফারমার্স ব্যাংক থেকে নতুনভাবে পদ্মা ব্যাংক তার কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে কোনো ধরনের প্রতারণা হয়নি; সবকিছু স্বচ্ছতা-জবাবদিহির সঙ্গে হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম-কানুন, বিধি-বিধান মেনেই হয়েছে।"

ফারমার্স ব্যাংক নাম থাকাকালে ঋণ বিতরণে নানা অনিয়মের কারণে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংকটিরঋণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরবর্তীতে গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে ব্যাংকটিরমালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন ঘটে। সরকারের উদ্যোগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্থতায় সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) মিলে ৭১৫ কোটি টাকার মূলধনের জোগান দেয়। ফলে ব্যাংকটির মোট মূলধনের ৬৬ শতাংশই এখন সরকারি ব্যাংকের হাতে।

এহসান খসরু বলেন, "গত চার বছরে আমরা ব্যাংকটির অনেক উন্নতি করেছি। গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করেছি, আমানত বেড়েছে। ঋণ বিতরণও করছি আমরা এখন। বাংলাদেশ ব্যাংকও আমাদের কাজে খুশি; আমাদের ওপর আস্থা রেখেছে। ডেলমর্গানও বিশ্লেষণ করে দেখতে পেরেছে, এই ব্যাংকে বিনিয়োগ করলে তারা ভালো রিটার্ন পাবে।"

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.