ঢাকা ইনার রিং রোড প্রকল্প অর্থায়নে আগ্রহী এআইআইবি

অর্থনীতি

06 January, 2022, 03:50 pm
Last modified: 06 January, 2022, 10:18 pm
১২ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (আরএইচডি)।

 

ইনফোগ্রাফ: টিবিএস

শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে নির্বিঘ্নে যাতায়াত নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৮৮ কিলোমিটার ঢাকা ইনার রিং রোড প্রকল্প অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি)।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) একজন ডেপুটি সেক্রেটারি, কাওসার জাহান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা প্রকল্পের জন্য তহবিল চেয়ে একটি প্রস্তাব পাঠালে তাতে সম্মত হয় এআইআইবি।"

"তবে দেশের ব্যস্ততম নগরী ঢাকায় যানজট নিরসনে গুচ্ছ প্রকল্পের অর্থায়নের জন্য তহবিল চাওয়ার নতুন পরিকল্পনা করছে সরকার। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এ বিষয়টি পরিচালনা করছে। আমরা এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো আপডেট পাইনি।"

সড়ক ও জনপথ বিভাগ (আরএইচডি) ১২ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

আরএইচডি-এর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ সবুজ উদ্দিন খান বলেন, "২০১৮ সালে বিভাগটি একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন করে। এরপর অর্থায়নের জন্য ইআরডি-এর কাছে একটি প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (পিডিপিইপি) পাঠায়।"

"পরিকল্পনা কমিশন থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর এআইআইবির কাছে প্রস্তাব পাঠায় ইআরডি," যোগ করেন তিনি।

সবুজ উদ্দিন বলেন, আনুমানিকভাবে ৬১ দশমিক ৮৭ হেক্টর জমি অধিগ্রহণে খরচ হবে ৫ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা। বাকি ৭ হাজার ৫০ কোটি টাকা ব্যয় হবে নির্মাণ কাজে।

এদিকে, ২০১৬ সালের সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি)-এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। ঢাকা শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাতায়াতের জন্য শহরের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ ছাড়াই এবং টেলব্যাক এড়িয়ে দ্রুত সময়ে যাতায়াতের জন্য বাস্তবায়িত হবে এ প্রকল্প।

প্রকল্পটি মূলত দুই ভাগে বাস্তবায়িত হবে। প্রথম অংশের অন্তর্ভুক্ত শহরের ২৫ কিলোমিটার রাস্তা। ইস্টার্ন বাইপাস - ডেমরা থেকে শুরু করে বেরাইদ, পূর্বাচল এবং তেরমুখ হয়ে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত দীর্ঘ এ রাস্তা।

বাকি ৬৩ কিলোমিটার পথ দ্বিতীয় অংশের অন্তর্ভুক্ত। আবদুল্লাহপুর রেলগেট-ধুর-বিরুলিয়া-গাবতলী-সোয়ারীঘাট-বাবুবাজার-কদমতলী-তেঘরিয়া-পোস্তগোলা-চাষারা-শিমরাইল-ডেমরা রুট জুড়ে থাকবে এই প্রকল্প।

প্রকল্পের আওতায় দুটি ৮ লেনের সেতু এবং ৯টি ওভারপাস, ফ্লাইওভার ও ইউ-লুপ নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও, ২৯টি আন্ডারপাস, ৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ফুটপাত, ৬টি সুইচ-গেট এবং ৮৬ কিলোমিটার ড্রেন-কাম-ফুটপাত তৈরি করা হবে।

আরএসটিপির সাথে সামঞ্জস্য রেখে সরকার ঢাকা আউটার রিং রোড নির্মাণের জন্য আরেকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। দূরপাল্লার যানবাহনের জন্য রাজধানীর বাইরে ১৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হবে।

ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন অথরিটির (ডিটিসিএ) ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানার ও প্রকল্পের ইনচার্জ মোঃ রকিবুল হাসান জানান, বাইপাসের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলার যানবাহনগুলো শহরে না ঢুকেই অন্য জেলায় যেতে পারবে।

এই প্রকল্পটিও দুই ভাগে বাস্তবায়িত হবে।

৪৮ কিলোমিটার দক্ষিণাংশ হবে হেমায়েতপুর (ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক) থেকে মদনপুর (ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক) হয়ে কলাকান্দি (ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক) ও তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু পর্যন্ত।

২০২০ সালের এপ্রিলে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা ও এই অংশের একটি প্রাথমিক নকশা প্রস্তুত করতে একজন পরামর্শক নিয়োগ করে কর্তৃপক্ষ। এই কাজও প্রায় শেষের দিকে।

অন্যদিকে, অবশিষ্ট ৬৪ কিলোমিটারে একটি মাঠ পর্যায়ের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করার জন্য পরামর্শক নিয়োগ করছে ডিটিসিএ।

২০১৯ এর সেপ্টেম্বরে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সম্মতি দেয় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

বর্তমানে, পিপিপি কর্তৃপক্ষ এমন একটি সংস্থার সন্ধান করছে যা প্রকল্পের জন্য তহবিল সরবরাহ করতে পারে।

পিপিপি-এর পরিচালক বিনিয়োগ প্রচার বিষয়ক পরিচালক ডাঃ নাজমুস সায়াদাত টিবিএসকে জানান, "আমরা প্রকল্পের অর্থায়নের বিষয়ে জাপানের মারুবেনি কর্পোরেশনকে বিবেচনা করছি। ইতোমধ্যে প্রাথমিক আলোচনা চললেও একটি বিস্তারিত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা বাকি থাকায় আমরা আর এগোতে পারিনি।"

"তবে, অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতার উপর একটি সমীক্ষা পরিচালনা করার জন্য আমরা একটি লেনদেন উপদেষ্টা পরামর্শদাতা নিয়োগ করব। নিয়োগ প্রক্রিয়া দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে শুরু হতে পারে। আমরা আশা করছি ২০২৩ এর মাঝামাঝি সময়ে গবেষণাকাজ শেষ হবে।"

একটি মাঠ পর্যায়ের সমীক্ষা সম্পর্কে, ডিটিসিএ-এর রকিবুল হাসান বলেন, "আমরা একটি বিশদ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও নকশা প্রস্তুত করার জন্য অন্য একজন পরামর্শদাতা নিয়োগ করতে যাচ্ছি। নিয়োগ প্রক্রিয়া জানুয়ারিতে শুরু হবে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতেই একজন পরামর্শক নিয়োগ করা হতে পারে বলে আশা করছি আমরা।"

১২ মাসের মধ্যে এই সমীক্ষা শেষ করবে তারা। ফলে চূড়ান্ত সম্ভাব্যতা সমীক্ষাও ২০২৩ এ শেষ হতে পারে বলে জানান তিনি।

১৩২ কিলোমিটার আউটার রিং রোডের বাকি ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যকে কভার করবে বিদ্যমান ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক এবং ঢাকা-নরসিংদী মহাসড়ক।
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.