কর্মকর্তাদের পরিশ্রম এবং স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সমন্বয়ই অর্জনে ভূমিকা রেখেছে: চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান
সুদীর্ঘ লকডাউন এবং কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও চট্টগ্রাম বন্দর তার সার্বিক কার্যক্রম সফলভাবে সম্পাদনের পাশাপাশি গত বছর কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে রেকর্ড করেছে।
২০১৬ সালে একটি কন্টেইনার জাহাজের চট্টগ্রাম বন্দরের বার্থে ভিড়ে পণ্য আনলোড এবং জাহাজীকরণ করে ফিরে যেতে সময় (টার্ন এরাউন্ড টাইম) লেগেছিলো ২.৮৭ দিন বা ৬৮.৮৮ ঘণ্টা।
এবার ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন সময় লেগেছে ২.৪৬ দিন বা ৫৯.০৪ ঘণ্টা।
চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গর থেকে জেটিতে এসে পণ্য খালাসের সময় কমে যাওয়ায় আগের যেকোন সময় থেকে বেড়েছে বন্দরের গতিশীলতা। দেশের এই প্রধান সমুদ্র বন্দরের গতিশীলতা বাড়ায় সুবিধা পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অধিক সময় জাহাজকে জেটিতে অপেক্ষা করতে হয় নি। ফলে অধিক কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের সুযোগ হয়েছে।
বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান এই প্রশংসনীয় অর্জনের বিষয়ে এবং বন্দরের উন্নয়নে তাদের নানা পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সাথে।
করোনার সময়েও কিভাবে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে রেকর্ড হলো?
রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান: জীবন এবং জীবিকার সাথে সমন্বয় করে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিলো। এটি একটি চমৎকার এবং যুগান্তকারী সিন্ধান্ত ছিলো। আমরা সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করেছি। এতে সফলতা অর্জন করতে পেরেছি বিধায় কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং, কার্গো হ্যান্ডেলিং, বন্দরে জাহাজ আসার পরিমাণ, টার্ন এরাউন্ড টাইম সহ সব ক্ষেত্রে ২০২১ সালে চট্টগ্রাম বন্দর রেকর্ড অর্জন করতে পেরেছে।
বন্দরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের একাগ্রতা, দূরদর্শিতা, পরিকল্পনা এবং তাদের কঠোর পরিশ্রম এবং স্টেকহোল্ডারদের সাথে সমন্বয়ের কারণে করোনাকালীন সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম ২৪/৭ সচল ছিলো। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন বন্দর বন্ধ হয়ে গেলেও আমরা ন্যূনতম জনবল দিয়ে পুরো বন্দরকে সচল রেখেছি। বন্দর সচল রাখতে গিয়ে আমরা ৫৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে হারিয়েছি।
এই অর্জন আমাদের একার নয়, এই কৃতিত্বের অংশীদার আমাদের সব স্টেক হোল্ডারের। বন্দর সচল রাখতে স্টেকহোল্ডার ছাড়াও হাইওয়ে পুলিশ, জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রে আমরা সমন্বয় করেছি।
বন্দরের এই অর্জন ধরে রাখার জন্য ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?
রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান: প্রতিনিয়ত বন্দরের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। আমরা ইয়ার্ড স্পেস বাড়াচ্ছি। বন্দরে আসা জাহাজগুলো যাতে পণ্য খালাস শেষে দ্রুত বন্দর ত্যাগ করতে পারে তা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে বন্দর।
বর্তমানে জাহাজের ওয়েটিং টাইম শূন্যতে চলে এসেছে। কমে গেছে টার্ন এরাউন্ড টাইম। ডেমারেজ ডিটেনশন কমে গেছে। পোর্টের ইন্সুরেন্স প্রিমিয়াম কমে গেছে। এসব কারণে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হচ্ছে। তাদের ফিক্সড অপারেটিং কস্ট কমে যাচ্ছে।
বন্দরের সামগ্রিক অর্জনের বিষয়ে আপনার অনুভূতি কি?
রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান: করোনার মধ্যেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বন্দরের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী বন্দরের কার্যক্রম শতভাগ সচল রাখে। বিশ্বের অন্যান্য বন্দরে কন্টেইনার ও জাহাজ জট সৃষ্টি হলেও বন্দর সংশ্লিষ্ট সকল স্টেক হোল্ডারদের সমন্বয়ে আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখেছি। এর সুফল পাওয়া গেছে কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়েও। এজন্য আমি অফডক মালিক, শিপিং এজেন্ট, সিএন্ডএফ এজেন্ট, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার, টার্মিনাল অপারেটর, বার্থ ও শিপ হ্যান্ডেলিং অপারেটর সহ সকল পর্যায়ের স্টেক হোল্ডার প্রতিনিধিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরে পাইরেসি শূন্যের কোটায় আনতে কাজ করছে নৌ বাহিনী ও কোস্ট গার্ড। তাদের প্রতিও আমি কৃতজ্ঞতা জানাই।
তবে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে কন্টেইনার ও জাহাজ জটের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার পৌঁছাতে বিলম্ব হয়েছে। এটি না হলে চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের পরিমাণ আরো বাড়ত।
বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে চলমান প্রকল্পগুলো কি কি?
রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান: পতেঙ্গা এলাকায় নির্মিত হচ্ছে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল। ২০২২ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বছরে এই টার্মিনালে বছরে প্রায় ৪ লাখ ৪৫ হাজার কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং করা যাবে।
বর্তমান চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে আকারে চেয়ে প্রায় ৪ গুণ বড় বে টার্মিনাল প্রকল্প নির্মাণের কাজও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে এই প্রকল্পে জাহাজ ভেড়ানো যাবে।
এছাড়া কক্সবাজারের মাতাবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পের কাজও চলমান রয়েছে। ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে নির্মাণ কাজ শেষ হলে মাতারবাড়ি বন্দরের টার্মিনালে ভিড়তে পারবে ১৮ দশমিক ৫ মিটার গভীরতার জাহাজ। তখন এই বন্দরে ৮ থেকে ১০ হাজার কন্টেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারবে।