বড় গ্রাহকদের জন্য আর থাকছে না ঋণ স্থগিতাদেশ

অর্থনীতি

টিবিএস রিপোর্ট
29 December, 2021, 10:35 am
Last modified: 29 December, 2021, 10:37 am
তবে, সিএমএসএমই উদ্যোক্তারা ঋণের ১৫ শতাংশ পরিশোধ করে এই সুবিধা পাবেন আগামী বছরের জুন পর্যন্ত।

কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব থেকে অর্থনীতি ফিরে আসার মুহূর্তে বাংলাদেশ ব্যাংক বড় ঋণগ্রহীতাদের জন্য ঋণ স্থগিতকরণ সুবিধা পুনরায় না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মঙ্গলবার তফসিলি ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, গ্রাহকের ঋণের মাত্র ২৫ শতাংশ পরিশোধ করলে কেউ খেলাপি হবেন না, এমন সুবিধা নতুন করে আর বাড়াচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে সিরাজুল ইসলাম বলেন, "কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন তফসিলি ব্যাংকগুলো দীর্ঘদিন ধরে ঋণ আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে এখন মহামারি পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আবারও শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বড় ঋণগ্রহীতাদের জন্য আর স্থগিতকরণ সুবিধা দেওয়া হবে না, যেন ব্যাংকগুলো আরও বাড়তে পারে।"

তিনি বলেন, "তবে কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সিএমএসমই ঋণের ক্ষেত্রে আগামী জুন পর্যন্ত ১৫ শতাংশ ঋণ পরিশোধ করলে খেলাপি হবে না, এ বিষয়ে শীঘ্রই সার্কুলার ইস্যু করা হবে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্বের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর চলতি বছরের ২৫ শতাংশ আদায়ি ঋণের ২ শতাংশ প্রভিশন বহাল রাখা হয়েছে।"

মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই ব্যাংর্কাস সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সময় ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, কাজী ছাইদুর রহমান, এ কে এম সাজেদুর রহমান খান, আবু ফরাহ মো. নাছেরসহ সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, সিএমএসএমই প্রণোদনা প্যাকেজের (প্রথম পর্যায়ে) লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ বাস্তবায়নকারী ১৩টি ব্যাংক ও ৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে প্রশংসাপত্র দেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো হলো- ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, প্রিমিয়াম ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি ব্যাংক, কমার্শিয়াল ব্যাংক অফ সিলন। এছাড়া চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হলো- আইডিএলসি ফাইন্যান্স, লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, ইউনাইটেড ফাইন্যান্স। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে সিএমএসএমই ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২০ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে জুলাই থেকে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪ হাজার ১ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২১ শতাংশ। মাত্র তিনটি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ বিতরণ করতে সক্ষম হয়েছে।

কোভিড-১৯ প্রভাবের কারণে গত বছরজুড়ে সকল গ্রাহকদের সুবিধার্থে, ঋণ পরিশোধ না করেও তারা খেলাপি হবেন না এমন ঢালাও সুযোগ দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে চলতি বছরে নীতিমালায় কিছুটা পরিবর্তন এনে ঋণের মাত্র ২৫ শতাংশ পরিশোধে এই সুবিধা জুন পর্যন্ত দেওয়া হয়। 

এরপর মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনরুদ্ধারের ব্যাপারটি বিবেচনা করে আবারও সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই সুবিধা বাড়ানো হয়। এই মেয়াদ শেষ হওয়ার কিছুদিন আগে ফের ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সুবিধা বহাল রাখে।

এরপরও খেলাপি ঋণ বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। বর্তমানে তা ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। সব শেষ ব্যাংকিং খাতের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ৮.১২ শতাংশ। সে হিসেবে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১২ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা। 

এদিকে, করোনার মধ্যে ব্যাংকগুলোর আয় বেশি দেখানোর বিশেষ এক সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১৪ ডিসেম্বর তফসিলি ব্যাংকগুলোর অনাদায়ী সুদের আয় মুনাফা হিসেবে দেখানোর অনুমতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

তবে ২৫ শতাংশ আদায় করে নিয়মিত দেখানো ঋণের বিপরীতে অতিরিক্ত ২ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হবে বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এমন নির্দেশনায় একদিন পরে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংঠন ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই), করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা এখনো ভয়াবহ অবস্থা পার করছে এমন চিত্র সামনে এনে ঋণ শ্রেণীকরণ সুবিধা আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বরাবর চিঠি দেয়।

চিঠিতে এফবিসিসিআই সভাপতি জসীমউদ্দিন, বিনাশর্তে বাংলাদেশ ব্যাংককে যত দ্রুত সম্ভব ঋণ শ্রেণীকরণ সুবিধার মেয়াদ বৃদ্ধি সংক্রান্ত ঘোষণা দেয়ার আহ্বান জানান। 

একইসঙ্গে তিনি বলেন, "ঋণ শ্রেণীকরণের মেয়াদ বাড়ালে ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসবে এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার দ্রুত সম্ভব হবে।"
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.