রিহ্যাব ফেয়ার: মোহাম্মদপুরের দিকেই ফ্ল্যাট বেশি খুঁজছেন ক্রেতারা    

অর্থনীতি

25 December, 2021, 10:55 am
Last modified: 25 December, 2021, 11:26 am
অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, মেলায় গ্রাহকের উপস্থিতি অন্য বছরের চেয়ে বেশি না হলেও কম নয়। গ্রাহক যারা আসছেন তাদের অধিকাংশই ফ্ল্যাট ক্রয়ের উদ্দেশ্যেই মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে ঘুরে প্রকল্পগুলো দেখছেন।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চলমান রিহ্যাবের আবাসন মেলায় ক্রেতারা মোহাম্মদপুরের দিকের রেডি ফ্ল্যাটগুলোই বেশি খুঁজছেন। মোহাম্মদপুরের পাশাপাশি মিরপুর, ধানমন্ডি, উত্তরার দিকের ফ্ল্যাটেরও চাহিদা রয়েছে বেশ। ফ্ল্যাটগুলোর মধ্যে ১২০০-১৬০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটগুলোর চাহিদা শীর্ষে।  

শুক্রবার রিহ্যাবের আবাসন মেলার দ্বিতীয় দিনে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলোর স্টল পরিদর্শন করে এবং ক্রেতাদের সাথে কথা বললে তাদের অধিকাংশই এ মতামত দিয়েছেন। 

সরেজমিনে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, শুক্রবার দুপুরের পর থেকেই ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। প্রিয়জনের জন্য কিংবা পরিবারের জন্য ফ্ল্যাট খুঁজতে এক স্টল থেকে অন্য স্টলে ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন ক্রেতারা। অনেকে আবার পছন্দের জায়গায় ফ্ল্যাট পেলে তাৎক্ষণিক বুকিং দিয়ে রাখছেন। 

মেলায় রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলোর ফ্ল্যাট ও প্লট বুকিং দিলে দিচ্ছে নগদ অর্থ ছাড়, তাৎক্ষণিক পুরস্কার, অল্প সময়ে ফ্ল্যাট হস্তান্তরসহ নানা সুবিধা। অন্যদিকে ফ্ল্যাট ও প্লট কেনার জন্য কম সুদে ঋণ সহায়তা এবং ঋণ প্রক্রিয়ার ব্যয়ে ছাড় দিচ্ছে মেলায় অংশ নেওয়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। নির্মাণসামগ্রীর বিভিন্ন কোম্পানিও স্টল দিয়েছে মেলায়।

মেলায় ক্রেতাদের সব থেকে বেশি ভিড় দেখা যায় মিডিয়াম রেঞ্জের ফ্ল্যাটের স্টলগুলোর দিকে। তবে উচ্চভিলাসীদের জন্য ফ্ল্যাট বিক্রির রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলোর স্টলেও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, মেলায় গ্রাহকের উপস্থিতি অন্য বছরের চেয়ে বেশি না হলেও কম নয়। গ্রাহক যারা আসছেন তাদের অধিকাংশই ফ্ল্যাট ক্রয়ের উদ্দেশ্যেই মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে ঘুরে প্রকল্পগুলো দেখছেন এবং প্রসপেক্টাস নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ মোবাইল ফোন নম্বরসহ ঠিকানা লিখে নিয়েছেন, কেউ কোম্পানির ঠিকানা নিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকে বুকিংও দিয়ে যাচ্ছেন তবে এ সংখ্যাটি খুব বেশি নয়। 

রূপায়ন গ্রুপের সিনিয়র ম্যানেজার (মার্কেটিং অ্যান্ড মিডিয়া) মোঃ শরিফুল ইসলাম বলেন, "ব্যাংকগুলোতে সরকার নির্দেশিত সহজ কিস্তিতে লোন দেওয়া ও সুদের হার কমিয়ে দেওয়ায় মানুষ ফ্ল্যাট ক্রয়ের দিকে ঝুঁকেছেন। গত দুদিনে আমাদের স্টলে মধ্যবিত্তদেরই ভিড় বেশি ছিল। ক্রেতারা ১২০০-১৬০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট বেশি খুঁজছেন। মোহাম্মদপুর, মিরপুর, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, উত্তরা কেন্দ্রিক প্রকল্পগুলোতে মানুষের চাহিদা বেশি।"  

মেলায় তাদের প্রজেক্ট স্কাই ভিলায় কেউ বুকিং দিলে তাকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "আমরা কম্বোডিয়ান প্রজেক্টের মাধ্যমে সেবা দিচ্ছি। আমরা বর্গ ফিট বিক্রি করছি না, পুরো লাইফস্টাইল দিচ্ছি গ্রাহকদের। আমাদের প্রজেক্টগুলোতে গ্রাহক সকল সুবিধা পাবেন।"  

শেলটেকের সিনিয়র সহকারী মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয়) এ কে এম রফিউল ইসলাম বলেন, "করোনার মধ্যে আবাসন খাত যে ধাক্কা খেয়েছে তা দ্রুতই আশা করি কেটে যাবে। এবারের মেলায় গ্রাহকদের উপস্থিতি ও চাহিদাই এমনটা ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে ফ্ল্যাটের দাম কিছুটা বেড়েছে। র' ম্যাটারিয়ালসের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ প্রভাব। মোহাম্মদপুর, মিরপুর, মালিবাগ, উত্তরা মিডজোনে কাস্টমার বেশি। ৯০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকার মধ্যে রেডি ফ্ল্যাট কিনতে পারছে আমাদের কাছ থেকে। মধ্যবিত্তের চাহিদা বেশি রেডি এপার্টমেন্টে। প্রজেক্টভেদে মেলায় বুকিং দিলে ৩-৭ লাখ টাকা ডিসকাউন্ট দিচ্ছে শেলটেক।"   

নাভানা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয়) মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, "মিরপুরের দিকের কাস্টমার বেশি পাচ্ছি। অধিকাংশ গ্রাহকই রেডি ফ্ল্যাট খুঁজছেন। আমাদের প্রজেক্টের ফ্ল্যাট মেলায় বুকিং দিলে দেড় লাখ টাকার ফার্নিচার গিফট পাচ্ছেন গ্রাহক।" 

ক্রিডেন্স হাউজিং লিমিটেডের ম্যানেজার এবং টিম লিডার (পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ) রেজাউল করিম বলেন, "মোহাম্মদপুর ইকবাল রোডে, হুমায়ুন রোড, বাবর রোডের রেডি ফ্ল্যাটগুলো গ্রাহকরা বেশি দেখছেন। মেলাতে আমরা আপাতত কোনো ছাড় দিচ্ছি না। আমাদের বর্তমান মোট প্রজেক্ট ৬৫টি; এর মধ্যে সেলসে আছে ৩৩টি। গ্রাহকদের সাড়া ভালো পাচ্ছি।"  

তবে গ্রাহকরা বলেছেন, তারা সাধারণত মেলাতে এসে ফ্ল্যাট দেখে বুকিং দিচ্ছেন না। তারা চান সরেজমিনে প্রকল্প দেখে ফ্ল্যাট বা প্লট কিনবেন। তাদের অধিকাংশই খুঁজছেন এক কোটি টাকার মধ্যে রেডি ফ্ল্যাট। 

ফ্ল্যাট বা প্লট কিনতে ঋণের প্রয়োজন বিবেচনায় মেলায় ঋণ সুবিধা দিচ্ছে ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং ১৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। কেউ ঋণ সুদে ছাড় দিচ্ছে, কেউ আবার ঋণ প্রক্রিয়া ফি মওকুফ করার ঘোষণা দিয়েছে। মেলায় আবেদন করলে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ সুদ কম নেবে ব্র্যাক ব্যাংক।  

ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানেজার মো. রাইসুল আলম টিবিএসকে জানান, ঋণের জন্য মেলায় আবেদন করে ফরম পূরণ করলে সাড়ে সাত শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হবে। এছাড়াও চলমান বিভিন্ন সুবিধাগুলোও গ্রাহকরা পাবেন।

বিদেশনির্ভরতা কমাতে চীনের আদলে সিরামিক পণ্য তৈরি করা হচ্ছে পা-ওয়াং সিরামিক কোম্পানিতে। মেলায় টাইলসসহ নানা ধরনের সিরামিক প্রদর্শন করছে কোম্পানিটি। 

মেলায় অংশ নেওয়া আকিজ প্লাস্টিকস লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজার মো. শরিফুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, মেলা উপলক্ষ্যে আকিজের ফিটিংসের উপর ১০% ছাড় দিচ্ছে। এখানে আমাদের বিভিন্ন প্রডাক্ট প্রদর্শনীরও ব্যবস্থা রেখেছি।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার থেকে এক ছাদের নিচে সব সেবা দিতে ২২তম রিহ্যাব মেলার উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্রেতা-দর্শনার্থীরা মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন। টিকেট মূল্য রাখা হয়েছে ৫০ ও ১০০ টাকা যেখান থেকে প্রাপ্ত সম্পূর্ণ টাকা দুস্থদের মাঝে ব্যয় করবে রিহ্যাব। এবারের মেলায় ২২০টি স্টল রয়েছে যার মধ্যে দুটি ডায়মন্ড প্যাভিলিয়ন, ছয়টি গোল্ড স্পন্সর, ২২টি কো-স্পন্সর, ১৫টি বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস ও ১৩টি অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.