শীঘ্রই এফটিএ স্বাক্ষরের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন করবে বাংলাদেশ-চীন

অর্থনীতি

টিবিএস রিপোর্ট
29 March, 2024, 09:45 am
Last modified: 24 April, 2024, 05:39 pm

চীনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরের লক্ষ্যে খসড়া সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন বিনিময় করেছে বাংলাদেশ। 

অতিদ্রুত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চূড়ান্ত করতে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ ঢাকায় মিলিত হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক অনুষ্ঠানে এ সমীক্ষা প্রতিবেদন বিনিময় করে দুই দেশ। এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ ও বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনসহ উভয়পক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বাণিজ্য সচিব বলেন, চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ এবং বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার। বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য চীন একটি বাণিজ্য সম্ভাবনাময় এলাকা।

তিনি বলেন, পণ্য ছাড়াও সেবা ও বিনিয়োগ খাতেও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে। 

'এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে দুই দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।' 

এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২০১৬ সালের ১৪-১৫ অক্টোবর চীনের রাষ্ট্রপতির বাংলাদেশ সফরকালে দ্বিপাক্ষিক এফটিএ স্বাক্ষরের বিষয়ে যৌথ সম্ভাব্যতা যাচাই-সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয় বলে জানান বাণিজ্য সচিব।

তপন কান্তি ঘোষ বলেন, স্বাক্ষরিত এমওইউ বাস্তবায়নের পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে উভয় দেশের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা সংক্রান্ত দল (ওয়ার্কিং গ্রুপ) গঠন করা হয়। এই প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ২০-২১ জুন চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে বাংলাদেশ-চীন সম্ভাব্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের লক্ষ্যে যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা-সংক্রান্ত ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

এরই ধারাবাহিকতায় সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা-সংক্রান্ত দল খসড়া সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রণয়ন করে বলে জানান তিনি।

'পরবর্তীতে করোনা অতিমারির কারণে এ বিষয়ে অগ্রগতি না হলেও উভয় দেশ যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদনের নিজ নিজ অংশ প্রস্তুত করে।' 

খসড়া সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন বিনিময়কে ইতিবাচক উল্লেখ করে বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সেক্রেটারি জেনারেল আল মামুন মৃধা টিবিএসকে বলেন, 'বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ বাড়ছে। চীন থেকে বিপুল বিনিয়োগ পেতে হলে এফটিএ স্বাক্ষরের বিকল্প নেই।

'তাছাড়া চীনা বিনিয়োগ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানিও বাড়বে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন-পরবর্তী সময়ে চীনে শুল্কমুক্ত সুবিধা নিশ্চিত করতে এফটিএ স্বাক্ষরের বিকল্প নেই।'

মামুন আর অবলেন, 'এফটিএ আলোচনা সম্পন্ন করতে অনেক বছর লেগে যায়। কিন্তু বাংলাদেশের গ্র্যাজুয়েশন হতে সময় আছে আড়াই বছরের মতো। তাই সম্ভাবনাময় রপ্তানি বাজার ও বিনিয়োগকারী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের আরও আগে এফটিএ স্বাক্ষরের আলোচনা শুরু করলে ভালো হতো।'

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে চীন থেকে বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ ১৭.৮২ বিলিয়ন ডলার। যদিও চীনা কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, এর পরিমাণ ২৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বলে একাধিক অনুষ্ঠানে জানিয়েছে ঢাকার চীনা দূতাবাস।

অন্যদিকে, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে চীনে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৬৮৩ মিলিয়ন ডলার। যদিও দেশটি ৯৮ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা দিচ্ছে, তবু চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ছে না।  

অন্যান্য দেশের সঙ্গেও একই ধরনের চুক্তির উদ্যোগ

এলডিসি থেকে উত্তরণকে সামনে রেখে বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের সঙ্গে এফটিএ ও পিটিএ (অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি) স্বাক্ষরের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের আগে জাপান, কানাডা, ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এফটিএ স্বাক্ষরের উদ্যোগ রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ভারতের সঙ্গে কম্প্রেহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ ও জাপানের সঙ্গে ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরের লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু করেছে সরকার। ফলে চীনের সঙ্গে এফটিএ স্বাক্ষরের আগে এ দুটি দেশের সঙ্গে এফটিএ স্বাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছেন তারা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইইউসহ ১২টি দেশ ও অঞ্চলে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৯১.৩১ শতাংশ হয়।

এর মধ্যে দুটি দেশ ছাড়া—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত—বাকি সব দেশ বর্তমানে বাংলাদেশকে জেনারেলাইজড সিস্টেম অফ প্রেফারেন্স বা জিএসপি দেয়।

বাংলাদেশ ২০২৯ সাল পর্যন্ত ইইউ, তুরস্ক ও যুক্তরাজ্যে জিএসপি সুবিধা পাবে। বাংলাদেশের রপ্তানির প্রায় ৫৬ শতাংশ হয়েছে এই তিনটি বাজারে।

তবে বাকি সাত প্রধান রপ্তানি গন্তব্যে—ভারত, জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, চীন, রাশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া—বাংলাদেশের বিশেষ শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধার মেয়াদ ২০২৬ সালে দেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের পরই শেষ হয়ে যাবে। এ সাত গন্তব্যে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ১৭ শতাংশ হয়।

বাংলাদেশের আমদানির প্রধান উৎস চীন ও ভারত। এই দুটি দেশ বাংলাদেশের মোট আমদানির ৪০ শতাংশেরও বেশি হয়ে থাকে।

এছাড়া দেশের মোট রাজস্ব আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আসে চীন ও ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য থেকে আহরণ করা রাজস্ব থেকে। 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.