ক্রয় প্রক্রিয়ার বিলম্বে এডিবির ৫৯৮ কোটি ডলার ঋণ ছাড় হয়নি: প্রতিবেদন

অর্থনীতি

24 March, 2024, 12:10 pm
Last modified: 24 March, 2024, 12:24 pm
২০২৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, ছয়টি খাতের ৫৬টি প্রকল্পে ১ হাজার ৩৩১ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি রয়েছে এডিবির বাংলাদেশ পোর্টফোলিওতে।  

ইনফোগ্রাফিক্স: টিবিএস

বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পের ধীর গতির অন্যতম কারণ হচ্ছে ক্রয় প্রক্রিয়ায় বিলম্ব। ফলে অর্থ ছাড় না হওয়া এবং চুক্তি না হওয়ার দিক থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)-র যথাক্রমে ৫৯৮ কোটি ডলার এবং ৩১৫ কোটি ডলার দিতে পারেনি বলে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

এই পরিস্থিতি প্রকল্প বাস্তবায়নে অদক্ষতাই তুলে ধরে। উন্নয়ন কাজের প্রত্যাশিত ফলাফল, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও প্রকল্পের ওপর জনসাধারণের আস্থার ওপর যা নানান রকম বিরূপ প্রভাব ফেলছে বলে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।  

সংস্থাটির একটি নথি অনুসারে, ২০২৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশকে দেওয়া মোট প্রতিশ্রুত ঋণের মধ্যে ছাড় না হওয়া ঋণের স্থিতি বেড়ে ৪৪ দশমিক ৯ শতাংশ হয়েছে। ২০২২ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত যা ছিল ৪০ দশমিক ৩ শতাংশ বা ৪৭৯ কোটি ডলার। 

বাংলাদেশে এডিবির পোর্টফোলিও'র এক বিশ্লেষণে এসব কথা জানানো হয়েছে।  

একইভাবে, ২০২৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট অর্থায়নের পোর্টফলিও'র মধ্যে ২৩ দশমিক ৭ শতাংশের ক্রয়চুক্তি হয়নি। কারণ গত এক বছরে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো দরপত্র প্রক্রিয়ায় সামান্যই অগ্রগতি করেছে।  

এডিবির তথ্য বলছে, ২০২২ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত ক্রয় চুক্তিহীন ঋণের স্থিতি ছিল মোট পোর্টফোলিও'র ২০ শতাংশ বা ২৩৩ কোটি ডলার।  

প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রথম দুই বছরে, বাংলাদেশে সংস্থাটির সামগ্রিক ঋণের মাত্র ১৩ শতাংশের জন্য ক্রয়চুক্তি হয়েছে। অবকাঠামো খাত তাঁদের ঋণের মাত্র ১১ দশমিক ৫ শতাংশের জন্য ক্রয়চুক্তি সম্পন্ন করেছে। 

ঋণ ছাড়ের হিসাবে, এডিবির মোট ঋণের মাত্র ৬ দশমিক ৭ শতাংশ ছাড় করাতে পেরেছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে অবকাঠামো খাতের প্রকল্পগুলো তাদের মোট ঋণ প্রতিশ্রুতির মাত্র ২ দশমিক ৭ শতাংশই ছাড় করাতে পেরেছে।  

গত ৬ - ৭ মার্চ ঢাকায় বাংলাদেশে এডিবির অর্থায়নকৃত প্রকল্পগুলোর এক ত্রিপক্ষীয় পোর্টফোলিও পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থাপিত এক  প্রতিবেদনে বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি এসব তথ্য জানায়। 

এডিবির ওই নথি অনুসারে, তাদের সামগ্রিক পোর্টফোলিওর বেশিরভাগ প্রকল্পের– বিশেষত অবকাঠামো প্রকল্পগুলো প্রকৃত বাস্তবায়নের সময়কালের মধ্যে ঠিকমতো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না, বা সেগুলো ধীরগতিতে এগোচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্বল প্রস্তুতির অন্যতম কারণ হচ্ছে– ক্রয় প্রক্রিয়া বা দরপত্র আহবানে বিলম্ব।       

বেশিরভাগ প্রকল্পেরই বাস্তবায়ন শুরুর চার বছর পরে প্রকল্পের ক্রয়চুক্তির মাত্র ৩৩ দশমিক ৮ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। অবকাঠামো খাতের প্রকল্পগুলো তাদের মোট ঋণের মাত্র ২৯ দশমিক ৬ শতাংশের জন্য ক্রয়চুক্তি সম্পন্ন করেছে। ঋণ ছাড়ের হিসাবে, মোট ঋণের মাত্র ২২ শতাংশ ছাড় হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রথম চার বছরে অবকাঠামো খাত তাঁদের মোট ঋণ প্রতিশ্রুতির মাত্র ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ ছাড় করাতে পেরেছে।  

বাংলাদেশে এডিবির অর্থায়নের পোর্টফলিও

২০২৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, ছয়টি খাতের ৫৬টি প্রকল্পে ১ হাজার ৩৩১ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি রয়েছে এডিবির বাংলাদেশ পোর্টফোলিওতে।  

এসব খাতের মধ্যে– কৃষি, খাদ্য, পরিবেশ ও গ্রামীণ উন্নয়নের আটটি প্রকল্প রয়েছে; মানব ও সামাজিক উন্নয়নের রয়েছে ১০টি প্রকল্প; জ্বালানির ৯ প্রকল্প, পরিববনে ১১ প্রকল্প, পানি ও নগর উন্নয়নে ১১ প্রকল্প এবং অর্থায়ন, সরকারি খাত ব্যবস্থাপনা ও সুশাসনের প্রকল্প আছে সাতটি।  

জ্বালানি ও পরিবহন খাতে অর্থায়নই হচ্ছে মোট পোর্টফলিও'র ৪২ দশমিক ৪ শতাংশ। 

এছাড়া, ২০২৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কারিগরি সহায়তার চলমান ৩৭ প্রকল্পের আর্থিকমূল্য হলো ৫ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। 

গত এক দশকে বাংলাদেশে এডিবির অর্থায়নের পোর্টফলিও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০১৫ সালে তা ৬৫০ কোটি ডলার হলেও– ২০২৩ সালে উন্নীত হয় ১ হাজার ৩৮০ কোটি ডলারে। এক্ষেত্রে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার হচ্ছে ৯ শতাংশ। 

২০২৩ সালে মোট পোর্টফোলিও ছিল ১ হাজার ৩৮০ কোটি ডলার। ২০২৪ সালে এডিবি ৪৪ কোটি ৩০ লাখ ডলারের একটি ঋণ ছাড়ের কথা জানায়, এছাড়া বাতিল করা হয় ৩ কোটি ডলারের ঋণ। 

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.