রমজানে হঠাৎ বাড়ল চালের দাম

অর্থনীতি

23 March, 2024, 11:55 am
Last modified: 23 March, 2024, 12:11 pm

রমজানে মাসে চালের চাহিদা বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় কম থাকে। এ কারণে রোজায় চালের বাজার স্থিতিশীল থাকে। কিন্তু এবার রমজানে ধানের সরবরাহ কম থাকার অজুহাতে হঠাৎ সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছেন মিলমালিক ও আড়তদাররা। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, খুচরা বাজারে চালের মজুত থাকায় চাহিদাও কম রয়েছে। তবু খুচরা বাজারে কেজিতে চালের দাম বেড়েছে ২ থেকে ৪ টাকা। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত ১৫ বছরে রমজানে চালের দাম বাড়ার রেকর্ড নেই। রোজায় ডালজাতীয় পণ্যের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চালের চাহিদা কমে। ফলে চালের বাজার স্থিতিশীল থাকে। 

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে একবার চালের দাম বেড়েছিল। পরে সরকারের হস্তক্ষেপে তা কিছুটা কমে। কিন্তু এখন আবার বাড়ল চালের দাম। 

রাইসমিল মালিক, মোকাম মালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাইকারি বাজারে মোটা চাল (স্বর্ণা ও চায়না ইরি) সপ্তাহখানেক আগেও ৪২-৪৩ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছিল। বর্তমানে তা ৩-৪ টাকা বেড়ে বর্তমানে পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৪৬-৪৭ টাকায়। মাঝারি মানের চালের (পাইজাম, বিআর-২৮, বিআর-২৯ ও বিআর-৪৯) কেজি ৪৮-৫০ টাকা থেকে বেড়ে পাইকারিতে ৫৩-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

চট্টগ্রামের মোটা আতপ চাল কেজিপ্রতি ৪২-৪৩ টাকা থেকে বেড়ে ৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট ও নাজিরশাইলের মতো সরু চালের কেজিপ্রতি দাম ৬৫-৬৭ টাকা থেকে বেড়ে ৭০-৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পাইকারিতে। 

এদিকে রমজান মাসে চালের চাহিদা তুলনামূলক কম থাকায় খুচরা বিক্রেতারা কম চাল কিনছেন। এ কারণে খুচরা পর্যায়ে এর প্রভাব তুলনামূলক কম পড়েছে। খুচরা 

ব্যবসায়ীরা জানান, দোকানে প্রয়োজনীয় চাল মজুত রয়েছে। এ কারণে পাইকারিতে দাম বৃদ্ধির খবর শুনে খুচরা বিক্রেতারা চাল কিনছেন না। 

চট্টগ্রাম নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারে সপ্তাহখানেক আগে যে মোটা চালের (স্বর্ণা ও চায়না ইরি) কেজি ৫০-৫১ টাকা ছিল, তা এখন খুচরা বাজারে ৫২-৫৩ টাকা। মাঝারি মানের চালের (পাইজাম, বিআর-২৮, বিআর-২৯ ও বিআর-৪৯) কেজি ৫৪–৫৫ টাকা থেকে বেড়ে ৫৫-৫৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

আর মিনিকেট ও নাজিরশাইলের মতো সরু চালের কেজিপ্রতি দাম ৬২-৭৮ টাকা থেকে বেড়ে ৬৪-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। 

রিয়াজউদ্দিন বাজারের আল ফারুক অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী সৈয়দ হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'কিছু চাল কেনার জন্য পাইকার ও আড়তদারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। চালের দাম কেজিপ্রতি ২-৬ টাকা পর্যন্ত এবং বস্তাপ্রতি ৫০-১৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দাম চাচ্ছেন তারা। এজন্য আর নতুন করে চাল কেনা হয়নি।'

মিলমালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ধানের সরবরাহ কম থাকার পাশাপাশি দামও কিছুটা বেশি। এজন্য মজুত থাকার পরও এক শ্রেণির ব্যবসায়ী চালের দাম বাড়িয়েছেন। 

এছাড়া রমজানে চাহিদা বেশি থাকায় আলু ও পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো থেকে। এজন্য পরিবহন সংকটে চালের পরিবহন ব্যয়ও কিছুটা বেড়েছে। সবমিলে এসব প্রভাব চালের বাজারে পড়েছে বলে দাবি করেন তারা। 

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের বি. বাড়িয়া অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী ফরিদ উদ্দিন আহমদ টিবিএসকে বলেন, 'আমরা মূলত দিনাজপুর, ময়মনসিংহ থেকে ধান এনে এখানে ভাঙাই। ধানের দাম বেড়েছে মণপ্রতি ৫০-১৫০ টাকা পর্যন্ত। এর প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে।' 

তিনি বলেন, 'বাজারের ধানের সরবরাহ তুলনামূলক কম। ভালো মানের ধান মণপ্রতি ১ হাজার ৩৫০ টাকা থেকে বেড়ে ১ হাজার ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটা ধান মণপ্রতি ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে বেড়ে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাসের মধ্যে নতুন ধান আসবে। এর আগে এমন সংকট আমাদের কাছেও অপ্রত্যাশিত।'

পরিবহন খাতেও বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে উল্লেখ করে ফরিদ উদ্দিন বলেন, 'ময়মনসিংহ থেকে চট্টগ্রামে আগে একটি ট্রাকের ভাড়া ছিল ১৬-১৭ হাজার টাকা। এখন তা বেড়ে ২৩-২৪ হাজার টাকা হয়ে গেছে। দিনাজপুর থেকে চট্টগ্রামে আগে একটি ট্রাকের ভাড়া ছিল ২৫-২৭ হাজার টাকা। এখন তা ৩৫ হাজার টাকা হয়েছে। অর্থাৎ পরিবহন ব্যয়ও ট্রাকপ্রতি ৫-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এর প্রভাবও চালের বাজারে পড়ছে।'

খাতুনগঞ্জের জেদ্দা অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী আব্দুল গণি পেয়ার বলেন, 'আমরা দিনাজপুর, কুষ্টিয়া ও হবিগঞ্জের মোকাম থেকে চাল সংগ্রহ করে থাকি। তারা বলছে, ধান নেই। তাই চাল নেই। বাড়তি দামে চাল কিনতে হচ্ছে। অনেক মোকামে চাল নেই বলে জানাচ্ছে।'

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.