নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমডি নিয়োগে প্যানেল: ৪০ সাবেক ব্যাংকারের নাম সুপারিশ ৬ ব্যাংকের

অর্থনীতি

23 February, 2024, 10:20 am
Last modified: 24 February, 2024, 05:47 pm
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, কিছু কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের হার ৮০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

যোগ্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক পেতে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান– এনবিএফআইগুলোর জন্য প্যানেল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে অন্তর্ভুক্তির জন্য ৪০ সাবেক ব্যাংকারের নাম সুপারিশ করেছে ৬টি ব্যাংক।

এই পদক্ষেপের বিষয়ে অবহিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা, উত্তরা ও পূবালী ব্যাংক ইতোমধ্যে তাদের সাবেক ব্যাংকারদের নাম জমা দিয়েছে। অন্যান্য ব্যাংকও পাঠাবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণের কারণে এই খাতের ভাবমূর্তি এখন সংকটে। তাই এনবিএফআইগুলোর নেতৃত্বের গুণগত মান উন্নয়ন চায় দেশের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক– বাংলাদেশ ব্যাংক। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবেই ব্যাংকগুলোর কাছে এমডি নিয়োগ পুলের জন্য কর্মকর্তাদের নামের সুপারিশ চাওয়া হয়, যাতে এখন তারা সাড়া দিচ্ছে'- যোগ করেন তিনি।    

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, কিছু কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের হার ৮০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এরফলে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যবস্থাপনা পরিচালক পাচ্ছে না। বর্তমানে ১২টি এনবিএফআই এর নিয়মিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান  নির্বাহী কর্মকর্তা নেই। 

প্রতিষ্ঠানগুলো হলো: বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, এফএএস ফাইন্যান্স, ইউএই-বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি, জিএসপি ফাইন্যান্স কোম্পানি (বাংলাসদেশ), আভিভা ফাইন্যান্স, বে লিজিং, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ফনিক্স ফাইন্যান্স, স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্স, আইপিডিসি ফাইন্যান্স এবং অগ্রণী এসএমই ফাইন্যান্স।   

এবিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক টিবিএস'কে বলেন, "আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক উন্নয়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি, এবং এটা অব্যাহত থাকবে। ইতিমধ্যে একটি প্যানেল গঠন করা হয়েছে। খুব দ্রুতই এখান থেকে ভালো ফলাফল আসবে বলে আমরা আশাবাদী।"

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, ২০২৩ সালের নভেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ২১ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৩০ শতাংশ।

নভেম্বর মাসে খেলাপি ঋণ থেকে আদায় হয়েছে মাত্র ৮০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। বিপুল অঙ্কের খেলাপি থেকে এ পরিমাণ আদায় খুবই নগন্য বলে মত খাত সংশ্লিষ্টদের।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এর সাবেক চেয়ারম্যান এবং এফএএস ফাইন্যান্সের স্বতন্ত্র পরিচালক ও চেয়ারম্যান নূরুল আমিন টিবিএসকে বলেন, 'অন্যান্য খাতের মতোই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। এর প্রধান করাণ হলো– ব্যাংক যে ব্যবসা করে তার বাইরে বিশেষ কোনো কাজ করে না আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। ব্যাংকে যারা ঋণ পায় না– তারা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে আসে। এখান থেকে ঋণ নেয়। একটা সময় খেলাপি হয়ে পড়ে।" 

তাঁর মতে, এনবিএফআই প্রতিষ্ঠানগুলোর মার্চেন্ট ব্যাংক, সাবসিডিয়ারি ও পুঁজিবাজারের সঙ্গে যুক্ত হওয়া উচিত ছিল। এগুলো না করার কারণে খেলাপি সংস্কৃতির সাথে জড়িত হয়ে গেছে। তাছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মনিটরিং সিস্টেম দুর্বল, দক্ষ কর্মী সংখ্যার অভাবসহ বিভিন্ন কারণে তারা বিতরণ করা ঋণ আদায় করতে পারে না।"

এই খাতে অনিয়ম, দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "যেহেতু আমাদের দেশে অনিয়ম-দুর্নীতি আছে, তাই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনিয়মের কথা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু ব্যাংকের তুলনায় এখানে অনিয়মের পরিধিটা কম। অনিয়ম একেবারে যে নেই– সেটা বলা যাবে না। সেটা বোর্ডের তরফ থেকেও হতে পারে, আবার ম্যানেজমেন্টের তরফ থেকেও হতে পারে।"

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, বিআইএফসি'র খেলাপি ঋণের হার ৯৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ, বে লিজিংয়ে ৫২ দশমিক ৮২ শতাংশ, সিভিসি ফাইন্যান্স ৫৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ, ফার্স্ট ফাইন্যান্স ৯৪ দশমিক ৪১ শতাংশ, এফএএস ফাইন্যান্স ৮৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ, জিএসপি ফাইন্যান্স ৯২ দশমিক ৩৭ শতাংশ, হজ ফাইন্যান্স ৫৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ এবং আইআইডিএফসি'র খেলাপি হার ৫৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

অন্যান্যদের মধ্যে, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এর খেলাপি হার ৯৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স ৫৯ দশমিক ১৭ শতাংশ, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স ৫৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ, পিপলস লিজিং ৯৯ দশমিক ০২ শতাংশ, ফনিক্স ফাইন্যান্স ৫৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ, প্রিমিয়ার লিজিং ৬৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল ৪৩ দশমিক ১২ শতাংশ, এবং উত্তরা ফাইন্যান্স ৫০ দশমিক ৮২ শতাংশ।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.