রাখাইনে সংঘাত তীব্র হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সীমান্ত বাণিজ্য 

অর্থনীতি

08 February, 2024, 10:15 am
Last modified: 08 February, 2024, 10:15 am
মিয়ানমার থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে আমদানি হয় আদা। অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে এই পণ্যের আমদানিও প্রায় দুই মাস ধরে বন্ধ। 

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তা বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে তীব্র লড়াইয়ের প্রভাবে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে প্রায় সব ধরনের আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। 

টেকনাফ স্থলবন্দরের কার্যক্রম পরিচালনায় রয়েছে ইউনাইটেড টেকনাফ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, গত ১৩ নভেম্বর থেকে মিয়ানমারে লড়াই শুরু হলেও সম্প্রতি এর তীব্রতা বেড়েছে। এর প্রভাবে ডিসেম্বর থেকেই আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম কমতে থাকলেও বর্তমানে তা একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। 

তিনি জানান, মিয়ানমার থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে আমদানি হয় আদা—পণ্যটির আমদানি প্রায় দুই মাস ধরে বন্ধ। 

টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে নিয়মিত বাংলাদেশে আদা, রসুন ও পেঁয়াজ আমদানি হয়। এর বাইরে মাছ, কাঠ, আচার, মশলা, নারকেল, ইলেকট্রিক পণ্যসহ নানা পণ্য দেশে আসে। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে বছরে আদার চাহিদা ৪.৫ লাখ টন। স্থানীয় উৎপাদন ২ লাখ টনের কম। বাকি চাহিদা মেটানো হয় আমদানির মাধ্যমে। আমদানির বেশিরভাগই আসে চীন, ভারত ও মিয়ানমার থেকে। 

এর মধ্যে আবার আমদানির সিংহভাগ আদাই আসে মিয়ানমার থেকে। মিয়ানমার থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসেই ৮০ হাজার ২১৮ টন আদা আমদানি হয়। একই সময়ে প্রায় ৬০০ টন রসুন আমদানি হয় দেশটি থেকে। 

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে সাধারণত আলু, খেলনা, প্লাস্টিক সামগ্রী, পোশাক, চিপস, অ্যালুমিনিয়াম, ওষুধ, প্রসাধনী ও বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী রপ্তানি হয়। 

তবে রপ্তানির পরিমাণ সামান্য। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ০.০৪ লাখ টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ০.০৩ লাখ টন এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ০.১১ লাখ টন পণ্য রপ্তানি হয়েছে। 

এর বিপরীতে একই সময়ে যথাক্রমে ১.৯৮ লাখ টন, ০.৭৫ লাখ টন এবং ২.৩৩ লাখ টন পণ্য আমদানি হয়েছে মিয়ানমার থেকে। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈধ পথে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি হয়, চোরাচালানের মাধ্যমেও প্রায় সমপরিমাণ পণ্য দেশটি থেকে বাংলাদেশে ঢোকে। 

গত নভেম্বর থেকে রাখাইনের বিভিন্ন শহরে জান্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছে আরাকান আর্মি। এই লড়াইয়ের তীব্রতা বাড়ার কারণে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) অনেক সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। বুধবার ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট টেকনাফ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। এতে অনেক আমদানিকারককে লোকসান গুনতে হচ্ছে। কারণ অনেকে ব্যাংক ড্রাফট করলেও মিয়ানমারের অস্থিরতার কারণে পণ্যগুলো মিয়ানমারের ব্যবসায়ীরা রপ্তানি করতে পারছেন না। 

তিনি জানান, টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে ঋণপত্র (এলসি) ব্যবস্থায় আমাদনি-রপ্তানি কার্যক্রম হয় না। দুই দেশের সীমান্ত বাণিজ্য কার্যক্রম পরিচালিত হয় ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে। মিয়ানমারে এখন ব্যাংকগুলো বন্ধ থাকায় চাইলেও ব্যাংক ড্রাফট করা যাচ্ছে না। এজন্য দেশটি থেকে একেবারেই আমদানি করা যাচ্ছে না। তবে অনেক ঝুঁকি নিয়ে মিয়ানমারের ব্যবসায়ীরা মাঝেমধ্যে এক-দুটি ট্রলার পাঠাচ্ছেন, যা একেবারেই নামমাত্র। এর ফলে টেকনাফ বন্দর থেকে সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে গেছে।

সর্বশেষ গত ৬ ফেব্রুয়ারি নারিকেল, শুঁটকি মাছসহ অন্যান্য পণ্য নিয়ে একটি ট্রলার মিয়ানমার থেকে এ বন্দরে এসেছে বলে জানান জসিম। 

এই পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিয়ানমার থেকে যে পরিমাণ আদা আমদানি হয়, সেটি এখন বিকল্প দেশ থেকে আনতে হবে। তা না করতে পারলে বাজারে একটা বড় অস্থিরতা তৈরি হয়ে পারে। কারণ লম্বা সময় ধরেই আদার আমদানি বন্ধ। 

ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে আদার সরবরাহ, বাজারদর স্বাভাবিক রাখতে এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে দুই দেশের সীমান্ত বাণিজ্য। 

যদিও টিসিবির বাজার বিশ্লেষণের তথ্য বলছে, স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি দেশি আদা ২৫০-২৮০ টাকা এবং আমদানি করা আদা ২৫০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। 

টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, মাসখানেকের মধ্যে আদার বাজারে কোনো অস্থিরতা তৈরি হয়নি। 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.