৫ মাসে সরকারের ব্যাংক ঋণ কমেছে ৮৮%

অর্থনীতি

13 December, 2023, 11:50 am
Last modified: 13 December, 2023, 11:56 am
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ৫ মাসে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ৩১,২৭৪ কোটি ধার নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ২৭,৬৩৫ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।
ইনফোগ্রাফ: টিবিএস

চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সরকারের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ৮৮ শতাংশ কমেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ৫ মাসে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ৩১,২৭৪ কোটি ধার নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ২৭,৬৩৫ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।

আগের অর্থবছরে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৩১,৩৭২ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ১,০৫৫ কোটি টাকা পরিশোধ করেছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ট্রেজারি বিল ও বন্ড বিক্রি করে সরকার ধার করছে। আগে এসব বিল ও বন্ডের একটি অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজে থেকে কিনে নিতো, এখন সেটি আর করা হচ্ছে না। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সরকারি বিল ও বন্ডে সুদের হার ভালো পাওয়ায় বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে। অবশ্য, ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করায় তাদের ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা কমছে এবং লিকুইডিটি স্ট্রেস হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য দেখায়, ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৮২ দিনের ট্রেজারি বিলের সুদের হার ১১.২০ শতাংশ এবং ৩৬৪ দিনের বিলের সুদহার ১১.৪০ শতাংশ, যা নভেম্বরের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ১০.৯৩ শতাংশ ঋণের সুদ হারের চেয়ে বেশি। এছাড়া, ব্যক্তিগত ঋণের সাথে সম্পর্কিত নানান ধরনের ঝুঁকি তো আছেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যেই রিজার্ভ থেকে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার নগদ করেছে, যার ফলে দেশের মুদ্রাবাজার থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে প্রায় ৬৬,০০০ কোটি টাকা স্থানান্তরিত হয়েছে। একইসঙ্গে, ব্যাংক ঋণ গ্রহণ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের ওপর সরকারের বেশি মাত্রায় নির্ভরতার কারণে তারল্যের চাপ তৈরি হচ্ছে।

এর ফলে, ব্যাংকগুলো তাদের নিয়মিত অপারেশনাল কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে আন্তঃব্যাংক কল মানি মার্কেটের মাধ্যমে ঋণ গ্রহণের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রিপারচেস অ্যাগ্রিমেন্টও (রিপো) করছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে সরকার মাত্র ৩,৬৩৮ কোটি টাকা ধার বাড়িয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময় শেষে সরকার ৩০,৩১৭ কোটি টাকা ধার করেছিল। নভেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে মূলত ওয়েজ অ্যান্ড মিনস এবং ওভারড্রাফটের মাধ্যমে লোন নিয়েছে। তবে কয়েক মাস আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কেনা কিছু ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ডেভলভমেন্ট প্রায় ২২,০০০ কোটি টাকা কমে এসেছে।

ঘাটতি বাজেট মেটাতে ব্যাংকখাত থেকে এক বছরে ১,৩২,০০০ কোটি টাকা ধার করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল সরকার। সে হিসাবে ৫ মাসে সরকার বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২.৭৬% ধার করেছে। 

নভেম্বর শেষে ব্যাংকখাত থেকে সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩.৯৭ লাখ কোটি টাকা, যা জুন শেষে ছিল ৩.৯৪ লাখ কোটি টাকা।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে অর্থ সরবরাহ কঠোর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চলতি অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারি ঋণ কমানোর পাশাপাশি নীতিগত হার ও ঋণের সুদহার বাড়ানোর মতো পদক্ষেপও নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ব্যাংক খাত থেকে সরকারের কম ধার করা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে মন্তব্য করে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, "মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ফিসক্যাল ও মানিটারি পলিসির মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজন হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মানিটারি পলিসির অংশ হিসেবে পলিসি রেট বাড়িয়েছে। ফিসক্যাল পলিসিতে সরকারের বাজেট ডেফিসিট কমাতে খরচ কমানো বা আয় বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল। রাজস্ব আয় খুব বেশি বাড়েনি। সে হিসাবে তথ্য উপাত্ত দেখে ধারণা করা যাচ্ছে, সরকার খরচ কমিয়ে এনেছে। তবে কোন খাতে খরচ কমানো হয়েছে, আমরা এখনো সেটা জানি না।"

সরকার দুইভাবে খরচ কমাতে পারে উল্লেখ করে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, "ধারণা করছি, প্রথমত, যে উন্নয়ন বাজেট আছে– সেখান থেকে অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানো হতে পারে। দ্বিতীয়ত, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ অনেক খাতে খরচ কমানো হতে পারে। তবে গত অর্থবছরে দেখা গেছে, এসব খাতে বরাদ্দ বাজেটের একটি অংশ খরচ করা যায়নি।"

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন টিবিএসকে বলেন, "ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ধার কম নেওয়া একটি ভালো লক্ষণ। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেওয়া বন্ধ করাটাও ভালো সিদ্ধান্ত। এগুলো অবশ্যই মূল্যস্ফীতি কমাতে সহায়ক হবে।"

মূল্যস্ফীতি কমাতে এক্সচেঞ্জ রেট ও ইন্টারেস্ট রেট বাজারভিত্তিক করার ওপর জোর দিয়ে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, "শুধুমাত্র ব্যাংকখাত থেকে সরকারের লোন নেওয়া কমালেই চলবে না। ডলারের চাহিদা কমানোর জন্য এক্সচেঞ্জ রেট ও ইন্টারেস্ট রেট বাড়াতে হবে। কারণ, মূল্যস্ফীতির তুলনায় ইন্টারেস্ট রেট কম হলে মানুষজন আমানত করতে কম উৎসাহ পাবে এবং ঋণের নেট ইন্টারেস্ট নেগেটিভ হয়ে যাবে।"

চলমান পরিস্থিতিতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন এই অর্থনীতিবিদ। 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.