৯ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকেরই ৪৭.৮১%
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ৯ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮,৮৫৩ কোটি টাকা, যারমধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ন্যাশনাল ব্যাংকের ঘাটতি ১৩,৭৯৭ কোটি টাকা, যা মোট প্রভিশন ঘাটতির ৪৭.৮১ শতাংশ। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে আগের প্রান্তিকের তুলনায় ব্যাংকগুলোতে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ২,৭২১ কোটি টাকা। এরমধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের একারই বেড়েছে ২,১১৪ কোটি টাকা বা মোট ঘাটতির প্রায় ৭৮ শতাংশ।
ঋণদাতা ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে– রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংক; এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে– ন্যাশনাল ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক এবং মধুমতি ব্যাংক।
ব্যাংকারারা বলছেন, খেলাপি ঋণ বাড়লে প্রভিশন ঘাটতিও বাড়বে। ন্যাশনাল ব্যাংক কমিশন নিয়ে কিংবা ভুয়া ঋণ দেওয়ায় এমন সংকট বাড়ছে। নানান উপায়ে অনিয়ম করে ঋণ দেওয়ায় সেই গ্রাহকের টাকা এখন ফেরত আসছে না। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি অন্য ব্যাংকের থেকেও ধার দেনা করতে পারছেন না।
ন্যাশনাল ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, "ন্যাশনাল ব্যাংক ধার নিয়ে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের টাকা দিতে পারছে না। গ্রাহকদের থেকে পর্যাপ্ত আমানত ও আগের ঋণের টাকা আদায় করতে না পারায় খেলাপি ঋণ ও প্রভিশন ঘাটতি বাড়েছে।"
জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে অপর ৮ ব্যাংকের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ৪৩৮ কোটি টাকা; রূপালী ব্যাংকের বেড়েছে ১০১ কোটি টাকা; অগ্রণী ব্যাংকের ১৩৫ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের বেড়েছে ২৫ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, এই প্রান্তিকে এনসিসি ব্যাংকের ঘটতি কমছে ৮৫ কোটি টাকা এবং ঢাকা ব্যাংকের কমেছে ৪১ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, প্রভিশন ঘাটতি বাড়ে খেলাপি ঋণের কারণে। সেপ্টেম্বরে জনতা ব্যাংক ছাড়া সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বাড়ায় প্রভিশন ঘাটতিও বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭,৯০২ কোটি টাকা। এছাড়া, জনতা ব্যাংক ছাড়া বাকি ৪ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২,৩০০ কোটি টাকা। যার কারণে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি বাড়ছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে আমানতের বিপরীতে ০.৫০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রভিশন রাখতে হয়। তবে খেলাপি ঋণের মান অনুযায়ী ২০ শতাংশ, ৫০ শতাংশ ও শতভাগ পর্যন্ত প্রভিশন রাখার নীতিমালা রয়েছে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান টিবিএসকে বলেন, "দেশের ব্যাংকিং খাত এক ধরনের স্ট্রেসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অনেক গ্রাহক খেলাপি হওয়ায় ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ও মূলধন ঘাটতি বাড়ছে।"
প্রকৃত প্রভিশন ঘাটতি প্রায় ৭৯,০০০ কোটি টাকা
দেশের ১৬টি ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ সুবিধায় প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি ডেফারেল সুবিধা ভোগ করছে ১ থেকে ৯ বছর সময়ের জন্য। এ সুবিধার বেশিরভাগই নিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো।
এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ডেফারেল সুবিধা নিয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক ১০,৮৬৯ কোটি টাকা। এরপরে রয়েছে জনতা ব্যাংকের ৮,৫০৩ কোটি টাকা। এছাড়া, এবি ব্যাংকের রয়েছে ৬,২৪৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ, ডেফারেলের পরিমাণসহ হিসাব করলে ব্যাংকগুলোর প্রকৃত প্রভিশন ঘাটতি ৭৯,০০০ কোটি টাকার বেশি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, "ব্যাংক যদি প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়, তবে তাদের মূলধন ঘাটতিতে পড়ার শঙ্কা থাকে। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ব্যাংকের ওপর। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায় আমানত। গ্রাহকের আমানতের সুরক্ষায় ব্যাংকগুলোর যথাযথ প্রভিশন নিশ্চিত করা দরকার।"