জুলাই-অক্টোবরে বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ৫২%, অর্থছাড় কমেছে ১৭.৪৭%
চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে দেশের বৈদেশিক ঋণের অর্থছাড় ১.৯৭ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ১.৬ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
সরকারী সংস্থাগুলোর ব্যয় করার সীমিত সক্ষমতা এবং নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলমান হরতাল-অবরোধ পরিস্থিতির কারণে অর্থছাড়ের পরিমাণ ১৭.৪৭ শতাংশ কমেছে। এতে করে দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।
অন্যদিকে, একই সময়ে দেশের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ৫২ শতাংশ বেড়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সর্বশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্ষমতা ছাড়া অর্থছাড় কমার অন্যতম কারণ হলো বাজেট সহায়তা। এর আগের বছরে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছ থেকে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা পেয়েছিল সরকার, যার মধ্যে কিছু বাজেট সহায়তার অর্থছাড় হয়েছিল অর্থবছরের শুরুর দিকে। কারণ বাজেট সহায়তার অর্থচুক্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছাড় হয়ে যায়। কিন্তু চলতি অর্থবছরে এখনও কোনো বাজেট সহায়তা আসেনি। যদিও সরকার এডিবি, বিশ্বব্যাংক, এআইআইবির কাছ থেকে বাজেট সহায়তা নেওয়ার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু করেছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল প্রকল্পের মতো উল্লেখযোগ্য প্রকল্পের ঋণের মূল পরিশোধ শুরু হয় গ্রেস পিরিয়ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে, যা এই বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ।
অর্থনৈতিক জটিলতার পাশাপাশি সরকারের বাজার-ভিত্তিক ঋণ বেড়েছে; একই সঙ্গে বেড়েছে ফ্লোটিং ইন্টারেস্ট রেট। দুই বছর আগে, বাজার-ভিত্তিক ঋণে সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (এসওএফআর) ছিল ১ শতাংশের নিচে, যা এখন ৫ শতাংশ বেড়েছে।
এর ফলে বেড়েছে বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সুদ পরিশোধে ১৭৬ শতাংশ বৃদ্ধি দেখা গেছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. মোস্তফা কে মুজেরি বলেন, "অর্থবছরের শুরুর প্রস্তুতিগত কাজের কারণে অর্থছাড় এমনিতে কম থাকে। এরমধ্যে আমাদের অর্থনৈতিক সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ সংকট এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি– সবকিছু মিলিয়ে অনেক প্রক্রিয়াগত কাজ এগোচ্ছে না। এ অবস্থায় অর্থছাড় কমেছে এবং আগামীতে আরও কমতে পারে।"
তিনি বলেন, "অর্থনৈতিক সংকট থাকলেও আমাদের ঋণ পরিশোধ করতেই হবে। কারণ অতীতে যেসব ঋণ আমারা মেগা প্রকল্পের জন্য নিয়েছি, সেগুলো পরিশোধের সময় চলে এসেছে।"
"এরমধ্যে বিশ্বব্যাপী সুদ হার বৃদ্ধির প্রভাব আমাদের ঋণ পরিশোধে চাপ বাড়িয়েছে। তবে পরিস্থিতি যাইহোক না কেন, ঋণ পরিশোধে আমারা যেন ব্যর্থ না হই, সে বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। পরিশোধে ব্যর্থ হলে আমাদের ঋণ মান কমে যাবে," যোগ করেন তিনি।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-অক্টোবর সময়ে জাপান ছাড় করেছে সর্বোচ্চ ৫১২.৩৬ মিলিয়ন ডলার। বিশ্বব্যাংক এবং এডিবির কাছ থেকে পাওয়া গেছে যথাক্রমে ৩৩২.৪৬ মিলিয়ন এবং ২৯৪.২৪ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া, রাশিয়া ছাড় করেছে ২৬০ মিলিয়ন ডলার।
চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত সরকার উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ১১.২৪ বিলিয়ন ডলার অর্থছাড় আশা করছে। যদিও এর আগে সর্বোচ্চ ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড় হয়েছে ২০২১-২২ অর্থবছরে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের তথ্যে আরও দেখা যায়, জুলাই-অক্টোবর সময়ের মধ্যে বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি ৭৭৬.৮৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে আগের অর্থবছরের একই সময়ের ৪১৩.৮১ মিলিয়ন ডলার থেকে ৩.৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সবচেয়ে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে জাপানের কাছ থেকে। এই সময়ে জাপানের সঙ্গে দেড় বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি হয়েছে। এডিবির কাছ থেকে পাওয়া গেছে ১.০৩ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি। এছাড়া, বিশ্বব্যাংক ৩০০ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।