পেট্রোবাংলার এলএনজি আমদানি ফান্ডে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০০ মিলিয়ন ডলার অর্থায়ন

অর্থনীতি

21 September, 2023, 03:45 pm
Last modified: 21 September, 2023, 05:15 pm
পেট্রোবাংলার এই ঋণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকৃত বৈদেশিক মুদ্রার মজুদও কিছুটা কমবে। কারণ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর বিপিএম৬ পদ্ধতিতে বৈদেশিক মুদ্রার হিসাবে এ ধরনের ঋণ বা বিনিয়োগে অর্থায়ন করা অংশ বাদ দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশনকে (পেট্রোবাংলা) ঋণ দিতে ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইটিএফসি)-র নেতৃত্বাধীন ৫০০ মিলিয়ন ডলারের সিন্ডিকেট তহবিলে ১০০ মিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পেট্রোবাংলা এই ঋণ দিয়ে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করবে।

বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) চিঠি দিয়ে আইটিএফসিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কো-ফাইন্যান্স করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে জ্বালানি বিভাগ।

জানা গেছে, এলএনজি আমদানির জন্য পেট্রোবাংলার এটিই প্রথম ঋণ নেওয়া। ৬ মাস মেয়াদে পেট্রোবাংলা এই ঋণ নিচ্ছে। এর সুদ হার হবে এসওএফআর রেটের সাথে ২%।

ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কের তথ্য অনুযায়ী, ১৮ সেপ্টেম্বর সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট ছিল ৫.৩১%।

আইটিএফসি নিজস্ব তহবিল থেকে এই অর্থ পেট্রোবাংলাকে দিচ্ছে না। একটি সিন্ডিকেট ফাইন্যান্সিংয়ের আওতায় কো-ফাইন্যান্স ব্যবস্থায় এ অর্থায়ন করা হচ্ছে, যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে অংশ নিচ্ছে।

পেট্রোবাংলার এই ঋণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকৃত বৈদেশিক মুদ্রার মজুদও কিছুটা কমবে। কারণ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর বিপিএম৬ পদ্ধতিতে বৈদেশিক মুদ্রার হিসাবে এ ধরনের ঋণ বা বিনিয়োগে অর্থায়ন করা অংশ বাদ দেওয়া হয়।

গত ২৩ জুলাই অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার আইটিএফসি থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব করেন।

যদিও ওই বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিরা এই ঋণ না নেওয়ার পক্ষে মতামত দেন।

পেট্রোবাংলা সুত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কো-ফাইন্যান্স ছাড়া আইটিএফসি ঋণ দিতে রাজি হয়নি। সংস্থাটি জানিয়েছে, আইটিএফসি সবসময় কো-ফাইন্যান্স ভিত্তিতে অর্থায়ন করে থাকে। যে দেশের প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া হয়, সেই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থায়ন ছাড়া ঋণের তহবিল গঠন করা হয় না।

এরপর জ্বালানি বিভাগসহ সরকারের এ সংক্রান্ত নীতিনির্ধারকরা বাংলাদেশ ব্যাংককে কো-ফাইন্যান্স করার সুপারিশ করে। বিভিন্ন পর্যালোচনা শেষে দুই মাস পরে ২০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণের ২০% কো-ফাইন্যান্স করার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে।

এখন আইটিএফসির সাথে পেট্রোবাংলার একটি চুক্তি হবে। চুক্তির পর অর্থ ছাড় হবে।
   
এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার টিবিএসকে বলেছেন, পেট্রোবাংলা আইটিএফসি থেকে ঋণ নিতে চেয়েছে। এরপর জ্বালানি বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সেটি নিশ্চিত করেছে।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এ বিষয়ে বলেন, "এ ধরনের বাণিজ্যিক ঋণ যা সুদসহ স্বল্প সময়ে ফেরত দেওয়া লাগবে, এসব আমাদের দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে আরও সঙ্গীন করে তুলবে। ৬ মাসের মধ্যে পরিশোধের চাপ দুর্ভাবনা বাড়াবে।"

তিনি বলেন, "এলএনজি আমদানি নির্ভরতার দিকে না গিয়ে উচিত হবে দেশে গ্যাস উত্তোলন ও অনুসন্ধানে গুরুত্ব দেওয়া। ২০২৪ সালের মধ্যে সরকার ঘোষিত ২৪টি গ্যাস কুপ খনন করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জোর দেওয়া উচিত। একথায় অভ্যন্তরীণ গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোতে গুরুত্ব দিতে হবে। বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ করে এলএনজি আমদানি করলে রিজার্ভ ও বিনিময় হারে চাপ বাড়বে। যা সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য সুখকর হবে না।"  

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. এম শামসুল আলম বলেন, ঋণ করে জ্বালানি কেনা কোনো সমাধান নয়। এই ঋণ সুদসহ পরিশোধ করতে হবে।

"এটি কোনো না কোনোভাবে জনসাধারণের ওপরই চাপবে। এরচেয়ে জরুরি অপচয়, অনিয়ম বন্ধ করা। অভ্যন্তরীণ গ্যাস উত্তোলন ও উদ্ভাবনে গুরুত্ব দেওয়া," বলেন তিনি।    

জ্বালানি তেল আমদানি করতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) গত ১৫ বছর ধরে ঋণ নিচ্ছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্যও আইটিএফসি থেকে ১.৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের চুক্তি করেছে বিপিসি। ইতিমধ্যে বিপিসি আইটিএফসি থেকে চলতি অর্থবছরের এই অর্থও নিয়েছে, যা দিয়ে বিপিসি অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করছে। বিপিসির ঋণেও বাংলাদেশ ব্যাংকের কো-ফাইন্যান্স রয়েছে।

 

 

 

 

 

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.