প্রস্তাবিত যশোর ইপিজেডে ২ বিলিয়ন ডলার বিদেশি বিনিয়োগের আশা

অর্থনীতি

06 September, 2023, 03:20 pm
Last modified: 06 September, 2023, 03:24 pm
প্রস্তাবনা অনুয়ায়ী, এই প্রকল্পে ১,৫৪৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে মোট ৪৩৮টি শিল্প প্লট তৈরি করা হবে। ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। 

দেশের দক্ষিণাঞ্চালের জেলা পটুয়াখালীর পর এবার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোরে আরেকটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। প্রস্তাবিত যশোর ইপিজেড স্থাপনের মাধ্যমে ২ বিলিয়ন ডলার সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এবং বছরে ২.৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। 

সরকারি পরামর্শদাতা সংস্থা ইনফ্রাচট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটি কোম্পানি (আইআইএফসি)-এর সমীক্ষা অনুযায়ী, রপ্তানি ও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) এই লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সমীক্ষার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা  প্রকল্প  প্রস্তাবটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ইতোমধ্যেই পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। 

প্রস্তাব অনুয়ায়ী, এই প্রকল্পে ১,৫৪৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে মোট ৪৩৮টি শিল্প প্লট তৈরি করা হবে। ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। 

প্রস্তাবিত ইপিজেডটি চালু হলে দেড় লাখ বাংলাদেশি নাগরিকের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এছাড়া, আরও তিন লাখ বাংলাদেশি নাগারিকের কর্মসংস্থনের সুযোগ তৈরি হবে বলে জানায় বেপজা কর্তৃপক্ষ।

যশোরের অভয়নগর উপজেলার গ্রেমবাগ ইউনিয়নের চেঙ্গুটিয়া, মহাকাল, পোমবাগ, বালিয়াডাঙ্গা, আলডাঙ্গা আরাজি বাটিরঘাট, মাগুরা ও রাজাপুর মৌজায় ৫৬৫.৮৭১ একর ভূমিতে স্থাপিত হবে দেশের ১০ম এই  ইপিজেড।

এর আগে, পটুয়াখালীতে প্রস্তাবিত দেশের নবম ইপিজেড স্থাপনের প্রকল্প প্রস্তাবটি বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনের যাছাই-বাচাই শেষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) অনুমোদনের অপেক্ষা রয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, প্রস্তাবিত যশোর ইপিজেড স্থাপনের প্রকল্প প্রস্তাবনা একনেকে উপস্থাপনের আগে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর এর ওপর মূল্যায়ন কমিটির সভা হবে। সভায় প্রাথমিক অনুমোদন পেলে প্রকল্প প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় উপস্থাপন করা হবে। 

২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে  বেপজার  ৩৪তম  গভর্নর বোর্ড সভায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে যশোর জেলায় একটি ইপিজেড স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

সংশ্লিষ্টদের মতে, পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটেছে। এ সাফল্যকে কাজে লাগিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ইপিজেড স্থাপিত হলে তা দেশের সুষম উন্নয়নে অবদান রাখবে।

বেপজার নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) নাজমা বিনতে আলমগীর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সম্ভাব্যতা সমীক্ষার প্রতিবেদন অনুযায়ী তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, চামড়াজাত পণ্য, রাসায়নিক এবং ওষুধ শিল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে প্রস্তাবিত যশোর ইপিজেড।

তিনি বলেন, প্রস্তাবিত পটুয়াখালী ইপিজেডে তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, ফার্মাসিউটিক্যালস, পাট শিল্প, প্লাস্টিক শিল্প, আসবাবপত্র, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, চামড়াজাত পণ্য, পাদুকা, মাছ প্রক্রিয়াকরণ, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স খাতের পাশাপাশি আইটি শিল্পেও বিনিয়োগের সুযোগ থাকবে।

নাজমা বিনতে আলমগীর আরও বলেন, "প্রস্তাবিত দুটি ইপিজেড স্থাপন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিনিয়োগ আকর্ষণ, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে অবদান রাখবে।"

"প্রায় ২.৫ লাখ লোকের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ আরও ৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রায় ৩,৫৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ আহরণ এবং বার্ষিক প্রায় ৪,৪৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে। এছাড়া ইপিজেড দুইটি আঞ্চলিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে," যোগ করেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পের ব্যয় মেটাতে ২ শতাংশ সুদে সরকারি তহবিল থেকে ঋণ নেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে পরিচালিত বেপজা ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশের সমস্ত ইপিজেড পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে এই সংস্থা।

বর্তমানে বাংলাদেশে মোট ৮টি ইপিজেড রয়েছে। ১৯৮৩ সালে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে স্থাপিত হয় দেশের প্রথম ইপিজেড। পরবর্তী তিন দশকের মধ্যে পর্যায়ক্রমে স্থাপিত হয় বাকি ৭টি ইপিজেড।

ঢাকা ইপিজেডের কাজ শুরু হয় ১৯৯৩ সালে; পরবর্তীতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালে এই ইপিজেড সম্প্রসারণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।

পরবর্তীতে মংলা, কুমিল্লা, ঈশ্বরদী এবং উত্তরায় (নীলফামারী) ইপিজেড স্থাঅইত হয়। আদমজী জুট মিলস ও চট্টগ্রাম স্টিল মিলস এলাকায়ও স্থাপিত হয় আরও দুটি ইপিজেড।

বর্তমানে দেশের ইপিজেডগুলোতে ৪৫৬টি শিল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ ৬.০৪ বিলিয়নের বেশি। এসব অঞ্চলে বার্ষিক ৯.৫৮৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের রপ্তানি পণ্য উৎপাদিত হয়।

দেশের ইপিজেডগুলোতে পাঁচ লাখেরও বেশি দক্ষ শ্রমিক বিশ্ববিখ্যাত সব ব্র্যান্ডের বৈচিত্র্যময় পণ্য তৈরিতে কাজ করছে।

বিশ্বের ৩৭টি দেশে এই ইপিজেডগুলোর বিনিয়োগ রয়েছে।

দেশের বিভিন্ন ইপিজেডকে ঘিরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গড়ে উঠেছে স্যাটেলাইট টাউন। এছাড়া পিছিয়ে পড়া ও পুরাতন শিল্প কারখানা এবং আনুষঙ্গিক শিল্পসহ পরিবহন ও খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা, বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল গড়ে উঠেছে এসব ইপিজেডগুলোকে কেন্দ্র করে।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.