মিয়ানমারের দুটি ব্যাংকে থাকা সোনালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে বলছে আমেরিকা

অর্থনীতি

16 August, 2023, 11:10 am
Last modified: 16 August, 2023, 01:58 pm
সম্প্রতি আমেরিকা মিয়ানমার ফরেইন ট্রেড ব্যাংক ও মিয়ানমার ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড কমার্সিয়াল ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এতেই সমস্যায় পড়েছে সোনালী ব্যাংক। সোনালী ব্যাংকের মিয়ানমারের ওই ব্যাংক দুটিতে নষ্ট্রো অ্যাকাউন্ট রয়েছে এবং সেখানে বেশকিছু বৈদেশিক মুদ্রাও জমা রয়েছে। সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, এই অর্থ এখন ‘ফ্রোজেন’। অর্থাৎ তারা আপাতত এই টাকা তুলতে বা স্থানান্তর করতে পারবে না।

আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার খড়গ এসে পড়েছে বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংকের ঘাড়ে। সোনালী ব্যাংককে মায়ানমারের দুটি ব্যাংকে থাকা অ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে বলছে যুক্তরাষ্ট্র।  

সম্প্রতি বিশ্বের ক্ষমতাধর এই দেশটি মিয়ানমার ফরেইন ট্রেড ব্যাংক (এমএফটিবি) ও মিয়ানমার ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড কমার্সিয়াল ব্যাংক (এমআইসিবি)'র ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

এরপর ওই ব্যাংক দুটিতে সোনালী ব্যাংকের যে অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তা ক্লোজ করে দিতে বলেছে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস। সম্প্রতি ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস সোনালী ব্যাংকের মিয়ানমারের ব্যাংকে থাকা অ্যাকাউন্ট ক্লোজ করার অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে।

গত ৩ আগষ্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মার্কিন দূতাবাসের চিঠিটি সোনালী ব্যাংকে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

এতেই সমস্যায় পড়েছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রমালিকানাধীন বৃহত্তম ব্যাংকটি। সোনালী ব্যাংকের মিয়ানমারের ওই ব্যাংক দুটিতে নষ্ট্রো অ্যাকাউন্ট রয়েছে এবং সেখানে বেশকিছু বৈদেশিক মুদ্রাও জমা রয়েছে।

এমএফটিবি-তে সোনালী ব্যাংকের ১৭ হাজার মার্কিন ডলার জমা রয়েছে। আর এমআইসিবি-তে সোনালী ব্যাংকের জমা রয়েছে ২ লাখ ডলার।

সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, এই অর্থ এখন 'ফ্রোজেন'। অর্থাৎ তারা আপাতত এই টাকা তুলতে বা স্থানান্তর করতে পারবে না।

এদিকে সোনালী ব্যাংকের ভষ্ট্রো হিসেবে এমএমটিবি-তে ১ লাখ ডলার আর এমআইসিবি-তে ১০ লাখ ডলার জমা রয়েছে। মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত এ অর্থ তুলে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ঢাকাস্থ মিয়ানমার দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত এ নিয়ে সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে মিটিংও করেছে।

সোনালী ব্যাংককে এখনই টাকা স্থানান্তর না করার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের যে বাণিজ্য হয়, তার সিংহভাগই হয়ে থাকে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে।

সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম টিবিএসকে বলেন, "আপাতত অ্যাকাউন্ট যেভাবে আছে সেভাবেই রাখা হয়েছে। তবে কোনো লেনদেন করা হচ্ছে না। অ্যাকাউন্ট ক্লোজ করার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতামত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে ওই দুটি ব্যাংকে যে অর্থ আছে সেগুলো অন্য ব্যাংকে ট্রান্সফার করে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিলো। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না।"

তিনি বলেন, "অন্যদিকে মিয়ানমারের ব্যাংকের যে অর্থ সোনালী ব্যাংকে আছে, সেগুলোও ট্রান্সফার করা হবে না। যদিও মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত চাচ্ছেন তাদের ব্যাংকের অর্থ অন্য ব্যাংকে ট্রান্সফার করা হোক। কিন্তু নিষেধাজ্ঞায় থাকা ব্যাংকের অর্থ ট্রান্সফার করার সুযোগ নেই।"

সামগ্রিক বিষয়ে সোনালী ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত জানতে চেয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনো কোনো সুষ্পষ্ট সিদ্ধান্ত জানায়নি।

মার্কিন দূতাবাসের চিঠির পরপরই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আর্থিক সেবাদানকারি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান জেপি মর্গানের ঢাকা অফিস থেকেও সোনালী ব্যাংকে চিঠি পাঠিয়ে বিশ্বের কোন কোন দেশের নিষেধাজ্ঞায় পড়া ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তাদের সাথে লেনদেনের হালনাগাদ পরিস্থিতি কী এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে।

পেমেন্ট সেটেলমেন্ট, এলসি কনফার্মেশনসহ আন্তর্জাতিক লেনদেনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে জেপি মর্গান সোনালী ব্যাংক পার্টনার হিসেবে কাজ করে থাকে।

জেপি মর্গানের মুম্বাইয়ের এক মুখপাত্র, মল্লিকা সেনাপতি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এক ইমেইলের উত্তরে তিনি লিখেন, 'যোগাযোগ করার জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু আমরা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাইছি না।'

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংক ও কিছু ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এরপর থেকেই বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ার সাথে সরাসরি লেনদেন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ব্যাংকগুলোর সাথেই বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর করেসপনডেন্ট ব্যাংকিং ছিল এবং এগুলোতেই বেশি লেনদেন হতো, যা এখন যাচ্ছে না। রাশিয়ার মিত্র বেলারুশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও কয়েকজন ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

এদিকে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি চালু করেছে আমেরিকা। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ঘোষিত এই ভিসা নীতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যেকোন বাংলাদেশি নাগরিকের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।

অন্য অনেকের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান বা সাবেক কর্মকর্তা/কর্মচারী, সরকারের সমর্থক এবং বিরোধী দলীয় সদস্যরা এর অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের ব্যক্তিদের নিকটতম পরিবারের সদস্যরাও এর অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিসর তেমন বড় নয়।

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ কাঠ, হিমায়িত মাছ, আদা, পেঁয়াজ, সুপারি, উলের ঝাড়ু, নারকেল, আচার, শুঁটকি, বেত, তেঁতুলের বিচি, ডাল, ছোলা ইত্যাদি আমদানি করে থাকে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে রপ্তানি হচ্ছে আলু, গেঞ্জি, বিস্কুট ও প্লাস্টিক পণ্য।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ৩.৯ মিলিয়ন ডলার মূল্যের বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয়েছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ১ হাজার ৪০৯ কোটি টাকার বিভিন্ন পণ্য আমদানি করেছে। বর্তমান ডলারের বিনিময় হার অনুযায়ী, প্রায় ১৩ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি হয়েছে ওই সময়ে।

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.