ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যে রুপিতে লেনদেন শুরু হচ্ছে আজ

অর্থনীতি

11 July, 2023, 12:00 pm
Last modified: 11 July, 2023, 12:26 pm
ভারত থেকে আমদানির ক্ষেত্রে রুপিতে বিল পরিশোধের জন্য অনুমোদিত দুটি স্থানীয় ব্যাংকের একটি হলো ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, অন্যটি রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক।

ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যে আজ (১১ জুলাই) থেকে মার্কিন ডলারের বিকল্প হিসেবে রুপিতে লেনদেন নিষ্পত্তি শুরু হতে যাচ্ছে। দুই প্রতিবেশী দেশ ইতোমধ্যেই এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

বর্তমানে বৈদেশিক বাণিজ্যের লেনদেন নিষ্পত্তিতে বাংলাদেশ একচেটিয়াভাবে মার্কিন ডলার ব্যবহার করে। তবে গত ১২ মাসে, টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য প্রায় ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ায় তা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে উল্লেখযোগ্য প্রভাব রেখেছে।

ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার বলেন, "যারা ভারতের সঙ্গে রুপিতে ব্যবসা করতে চায়, আমরা তাদের জন্য বিকল্প মুদ্রা নিয়ে এসেছি। এটি ধীরে ধীরে ডলারের ওপর চাপ কমাবে; কেননা ডলার সংকট অনেক ব্যবসার জন্যই আমদানি কঠিন করে তুলেছে।" 

ভারত থেকে আমদানির ক্ষেত্রে রুপিতে বিল পরিশোধের জন্য অনুমোদিত দুটি স্থানীয় ব্যাংকের একটি হলো ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, অন্যটি রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক।

নতুন ব্যবস্থার অধীনে, ব্যাংকগুলো রপ্তানি আয় থেকে প্রাপ্ত টাকার সমপরিমাণ আমদানি দায় নিষ্পত্তি করতে পারবে। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার, এরমধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল মাত্র ২ বিলিয়ন ডলার। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত দেশের মোট আমদানির ১৯ শতাংশেরও বেশি ভারত থেকে হয়েছে।

বর্তমান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এটিই প্রতীয়মান হয়, বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে আমদানির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বিল রুপিতে নিষ্পত্তি করতে সক্ষম হবেন। ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি আরও বাড়ালে রুপিতে লেনদেন বাড়ানো সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।

তবে  সব ব্যবসায়ী রুপিতে লেনদেনের ক্ষেত্রে আগ্রহী নাও হতে পারেন, কারণ এটি তাদের জন্য বাধ্যতামূলক নয় বলে উল্লেখ করেন ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। 

তিনি বলেন, "মঙ্গলবার আমরা রুপিতে বাণিজ্য শুরুর ঘোষণা দেবো। এখন আমাদের যেটা করতে হবে, তা হলো ব্যবসায়ীদের মধ্যে এ সংক্রান্ত সচেতনতা বাড়ানো, যাতে তারা নতুন মুদ্রায় বাণিজ্য করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।"

আলী রেজা ইফতেখার আরও বলেন, রুপিতে লেনদেন হলে বিনিময় হারের ক্ষতির ক্ষেত্রে ডলারপ্রতি ১ টাকা সাশ্রয় হতে পারে। টাকা-রুপির বিনিময় হার সম্পর্কে মার্কিন ডলার রেফারেন্স রেট হিসেবে কাজ করবে বলে জানান তিনি। 

এর অর্থ হল, হারটি নির্ধারিত হবে মার্কিন ডলার-রুপি এবং মার্কিন ডলার-টাকার বিনিময় হারের ভিত্তিতে।

তিনি জানান, লেনদেন নিষ্পত্তিতে রুপি এবং টাকা উভয়েই আবেদন করা হয়েছে এবং রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া তা অনুমোদন করেছে। তিনি উল্লেখ করেন, প্রাথমিকভাবে রুপিতে অল্প পরিমাণে লেনদেন হবে, পর্যায়ক্রমে এটি বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া, পরবর্তীতে টাকায় লেনদেন চালু করা হবে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান তিনি। 

সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম বলেন, বিষয়টি নিয়ে ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সকল  পক্ষকে বিস্তারিত জানিয়ে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, উদ্বোধনের দিনে লেনদেন নাও হতে পারে, কারণ সুবিধাটি পেতে আগ্রহীদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে।

ইতোমধ্যেই এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া যেমন- স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্রেডিট অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (আইসিআইসিআই) ব্যাংকের সাথে রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ্লিকেশন (আরএমএ) খোলাসহ সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ইমপোর্ট লেটার অফ ক্রেডিট (এলসি) খোলার জন্য আরএমএ প্রয়োজন হয় বলে জানান আফজাল করিম।

তিনি আরও জানান, ব্যবসায়ীদের জন্য একটি ডেডিকেটেড ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে, যা রুপিতে ব্যবসা করতে ইচ্ছুক আমদানিকারক বা রপ্তানিকারকদের সব ধরনের সহায়তা দেবে।

উভয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, যদি টাকার ঘাটতি থাকে, তবে তারা স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই) এবং আইসিআইসিআই থেকে ক্রেডিট লাইনের অধীনে ঋণ নিতে পারবেন; তবে এই ঋণ স্বল্পমেয়াদে দেওয়া হবে।

ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ জোর দিয়ে বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য রুপিতে চালু হওয়ায় এতে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলো। কারণ এ ধরনের ব্যবসা লেনদেন মেটাতে গ্রিনব্যাক বা মার্কিন ডলার পেতে লড়াই করে৷ তিনি আরও বলেন, বিনিময় হারের ক্ষতি সাশ্রয়ের ক্ষেত্রেও ব্যবসাগুলো লাভবান হবে।

গত বছর ভারতের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে লেনদেন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ভারতীয় মুদ্রা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে, ডলার সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। আমদানি বিল নিষ্পত্তি এবং আমদানির জন্য নতুন এলসি খোলায় হিমশিম খাচ্ছে দেশের ব্যাংকগুলো। তখন থেকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এক তৃতীয়াংশেরও বেশি কমেছে; ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে রিজার্ভ, যা গত ৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.