অর্থনৈতিক সংকট চলছেই, কঠিন সময়ে এসএমই উদ্যোক্তারা

অর্থনীতি

27 June, 2023, 01:00 pm
Last modified: 27 June, 2023, 01:16 pm
সাম্প্রতিক সময়ে গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কারণেও বেড়ে গেছে উৎপাদিত পণ্যের ব্যয়। কিন্তু সে অনুযায়ী পণ্য বিক্রি করতে পারছেন না উদ্যোক্তারা। সংকটাপন্ন এই পরিস্থিতির মধ্যে পুরো বিশ্বের সাথে মিল রেখে বাংলাদেশে আজ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক এসএমই দিবস।

মহামারির পর সরকার নানামুখী সুবিধা ও প্রণোদনা দিলেও এখনো স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরতে পারেনি দেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা।

ঋণ পেতে জটিলতা, ডলার সংকটে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি নিয়ে সমস্যা।

সাম্প্রতিক সময়ে গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কারণেও বেড়ে গেছে উৎপাদিত পণ্যের ব্যয়। কিন্তু সে অনুযায়ী পণ্য বিক্রি করতে পারছেন না উদ্যোক্তারা।

সংকটাপন্ন এই পরিস্থিতির মধ্যে পুরো বিশ্বের সাথে মিল রেখে বাংলাদেশে আজ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক এসএমই দিবস।

সাবাব লেদার- এর প্রতিষ্ঠাতা মাকসুদা খাতুন টিবিএসকে বলেন, ২০২০ সালে করোনা মহামারির ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি তিনি।

মাকসুদা বলেন, "অনেক অর্ডার বাতিল করা হয়েছে। কারখানাটি দুই মাসের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল, কিন্তু তারপরও আমাদের শ্রমিকদের মজুরি ও ভাড়া দিতে হয়েছে।"

তিনি বলেন, "এর পর আমরা যখন ঘুড়ে দাঁডাচ্ছিলাম তখন সারা দেশে এসএমই মেলা শুরু হলো, অবিক্রিত মাল বিক্রি করতে পারলাম।"

"কিন্তু যখন আমরা যখন আশার আলো দেখছিলাম, তখনই রাশিয়া -ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলো। এ যুদ্ধ শুরুর পর কাঁচামালে দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। এখন খরচ কিভাবে যোগাবো এই নিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে," বলেন তিনি।

নতুনত্য বুটিক অ্যান্ড হ্যান্ডিক্রাফ্টস ফ্যাশন ডিজাইনারের কর্ণধার হাসিনা মুক্তা (টিবিএস) কে জানিয়েছেন, এখন ব্যবসায় টিকে থাকাই কঠিন।

"সুতার দাম বেড়ে গেছে। পাইকারি যে কাপড় কিনি সেটার দাম বেড়েছে। এর ফলে পণ্যর উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে," বলেন তিনি।

তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর প্রায় ৪০% বেড়েছে কাপড়ের দাম।

"সরকার যদি আমাদের জন্য সুলভ মূ্ল্যে কাঁচামালের ব্যবস্থা করে দেয়। মার্কেট এনালাইসিস করে যদি বিদেশে আমাদের পণ্যগুলো বিক্রির সুযোগ করে দেওয়া হয় তাহলে আমরা ঘুড়ে দাঁড়াতে পারবো,"

"এখন ঋণ নিতে গেলে ৯% সুদ দিতে হয়। এটা আমাদের জন্য ৪-৫% করা উচিত," বলেন তিনি।

জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের (আরজেএসসি) নিবন্ধকের মতে, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতি বছর দেশে কোম্পানি লিকুইডেশনের সংখ্যা বেড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ৩১৭টি কোম্পানি লিকুইডেশনের সম্মুখীন হয়েছে।

এর আগের পুরো অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল ৩০১।

২০২১ অর্থবছরে কোম্পানি লিকুইডেশনের সংখ্যা ছিল ১৭৩, ২০২০ অর্থবছরে ৯৩, ২০১৯ অর্থবছরে ৮৪।

এই সময়ের মধ্যে যেসব কোম্পানি লিকুইডেশনে যায় তাদের ১৭,৩০০ কোটি টাকার ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ ছিল। এসব কোম্পানির সবই ছিল ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের। এছাড়া বেশকিছু বিদেশি মালিকানাধীন কোম্পানিও লিকুইডেশনে চলে যায়।

দেশে কুটির শিল্পসহ প্রায় ৭৮ লাখ মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসএমই খাতে প্রায় ২.১ কোটি জনবল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মরত আছে।

এসএমই ফাউন্ডেশন বলছে, দেশে বেশিরভাগ ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের। তাই এসএমই উদ্যোক্তাদের সুবিধা দিয়ে শক্তিশালি ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ তৈরী করতে হবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শিল্প খাতের অবদান ৩৭.০৭%, যেখানে এসএমই খাতের অবদান প্রায় ২৮%।

সরকার এসএমই নীতিমালা তৈরী করেছে সেখানে ২০২৪ এর মধ্যে এসএমই খাতের অবদা ৩২% এ উন্নীতকরণের লক্ষনির্ধারণ করা হয়েছে।

এসএমই ফাউন্ডেশন বলছে চীন, জাপান, দাক্ষিণ কোরিয়ার জিডিপিতে ৬০% থেকে ৭০% শতাংশ আবদান রাখছে এসএমই খাত। বাংলাদেশ অনেক সম্ভাবনা রয়েছে এই খাতে জিডিপিতে অবদান বাড়ানোর। আর এর জন্য এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেয়া প্রয়োজন।

এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন মো. মাসুদুর রহমান টিবিএসকে বলেন, "এখন একটা বৈশ্বিক সংকট চলছে। এসএমই ফাউন্ডেশন সরকারের সঙ্গে থেকে উদ্যোক্তাদের নীতিগত সহায়তা দিচ্ছে যাতে উদ্যোক্তা যে সমস্যার মধ্যে আছে সেটা যেন কাটিয়ে উঠতে পারে।"  

"আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজারের যে চাহিদা তৈরী হচ্ছে সেখানে যেন আমাদের উদ্যোক্তারা পণ্য বিক্রি করতে পারে সেজন্য বাজার ও ক্রেতার সঙ্গে উদ্যোক্তাদের সংযোগ তৈরি করছি আমরা। প্রতিটি বিভাগীয় শহরে আমরা এসএমই মেলা করেছি। অনলানে যেন পণ্য বিক্রি করতে পারে তার জন্য দেশি ও বিদেশি বড় বড় অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে আমরা চুক্তি করছি," বলেন তিনি।
 
তিনি আরো বলেন, "আমদানির ক্ষেত্রে কিছুটা বিধিনিষেধ থাকার কারণে কিছু পণ্য আমদানি হচ্ছে না। ওই পণ্যগুলো দেশিয় উদ্যোক্তারা এখন তৈরি করছে, এতে একটা সুযোগ তৈরি হচ্ছে।"  

"উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন এসোসিয়েশন আছে তারা সারা দেশে মেলা করছে। আমরা তাদের উৎসাহিত করছি। এর মধ্যে দিয়ে প্রান্তিক পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের পণ্যর পরিচিতি বাড়ছে," বলেন তিনি।

 

 

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.