গ্রে মার্কেটের আগ্রাসনে ক্ষতির মুখে স্থানীয় মোবাইল বাজার

অর্থনীতি

23 May, 2023, 12:30 pm
Last modified: 23 May, 2023, 05:43 pm
২০২১-২২ অর্থবছরে নিবন্ধিত মোট হ্যান্ডসেটের মধ্যে ৯৬% স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত; বাকি মাত্র ৪% আমদানিকৃত। বর্তমানে প্রতিটি পণ্য বিক্রির উপর ৫% ভ্যাট ছাড়াও, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মোবাইল হ্যান্ডসেটের উপর প্রায় ১৭% ভ্যাট এবং কর আরোপ করা হয়েছে। অন্যদিকে গ্রে মার্কেট ব্যবসায়ীদের থেকে কোনো প্রকারের রাজস্ব আয় হয়না।

বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোবাইল হ্যান্ডসেটের অ্যাসেম্বলার এবং ম্যানুফেকচাররা বর্তমানে কেবল ৫০% কর্মক্ষমতা নিয়ে কাজ করছে। এর ওপর গ্রে মার্কেটের আগ্রাসন, মূল্য সংযোজন করের (ভ্যাট) বোঝা এবং চলমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এ খাতের কর্মসংস্থান অচিরেই ৪০% পর্যন্ত কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা অবিলম্বে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছে। বিদেশ থেকে মোবাইল হ্যান্ডসেটের অবৈধ প্রবেশ বন্ধ করার লক্ষ্যে একটি বিশেষ ব্যবস্থা এটি। এছাড়া, বাণিজ্য পর্যায়ের ভ্যাট প্রত্যাহার এবং উৎপাদন পর্যায়ে কর ছাড় অব্যাহত রাখারও দাবি জানিয়েছেন তারা।

এদিকে, আগামী মাসের শুরুতেই আসন্ন অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবিত হতে চলেছে। আসন্ন বাজেটে যাতে নতুন করে কর আরোপ না করা হয়, সে বিষয়ে সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন ম্যানুফেকচারার ও অ্যাসেম্বলাররা। এ খাতে কর আরো বাড়ানো হলে গ্রে মার্কেটের সাথে প্রতিযোগিতায় আরো পিছিয়ে পড়তে হবে বলে জানিয়েছে তারা।

দক্ষিণ কোরিয়ার বহুজাতিক ব্র্যান্ড স্যামসাং-এর স্থানীয় অ্যাসেম্বলি পার্টনার ফেয়ার ইলেক্ট্রনিক্স-এর প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন বলেন, মোবাইল হ্যান্ডসেট বাণিজ্যে বিধিনিষেধের অভাবে মোট চাহিদার প্রায় ৫০ শতাংশই গ্রে মার্কেটের দখলে।

ছবি- রয়টার্স

"যদি এই অবস্থা চলতে থাকে, তাহলে এই খাতের কর্মসংস্থান প্রায় ৪০% কমে যেতে পারে। গ্রে মার্কেটের পরিসর বাড়তে থাকায় আমাদের ডিভাইস বিক্রি কমে গেছে। ফলে বেশিরভাগ কোম্পানিই এখন কর্মক্ষমতার ৫০ শতাংশ নিয়ে কাজ করছে," বলেন তিনি।

মেজবাহ উদ্দিন বলেন, এক্ষেত্রে গ্রে মার্কেটের বিরুদ্ধে স্থানীয় অ্যাসেম্বলার ও ম্যানুফেকচারারদের টিকে থাকার জন্য এনইআইআর বাস্তবায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হিসেবে কাজ করতে পারে।

বর্তমানে প্রতিটি পণ্য বিক্রির উপর ৫% ভ্যাট ছাড়াও, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মোবাইল হ্যান্ডসেটের উপর প্রায় ১৭% ভ্যাট এবং কর আরোপ করা হয়েছে। অন্যদিকে গ্রে মার্কেট ব্যবসায়ীদের থেকে কোনো প্রকারের রাজস্ব আয় হয়না।

বাংলাদেশের মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট রিজওয়ানুল হক বলেন, "স্থানীয় উৎপাদকদের ওপর ভ্যাট ও ট্যাক্স আরোপ করা এবং গ্রে মার্কেটের বর্তমান পরিস্থিতির কোনো সুরাহা না করা পরিশেষে মোবাইল উৎপাদন খাতকেই হুমকির মুখে ফেলবে। এতে সরকারের রাজস্ব আয়ও কমবে।"

ছবি- রয়টার্স

সরকার যদি এ খাতকে সচল রাখতে চায় তাহলে এসব ডিভাইসের উপর আর কোনো অতিরিক্ত ভ্যাট আরোপ না করার পরামর্শ দেন তিনি।

বর্তমানে বাংলাদেশে ১৪টি জাতীয় ও বহুজাতিক লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান মোবাইল উৎপাদনের কাজ করছে।

২০১৮ সাল থেকে শুরু হওয়া মোবাইল উৎপাদন খাতে এ পর্যন্ত প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। এ খাতে প্রায় ১২ হাজার দক্ষ জনবল, বিশেষ করে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) অনুসারে, দেশে আনুমানিক ৩২ মিলিয়ন হ্যান্ডসেটের বার্ষিক চাহিদা মেটাতে এ খাতের যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে।

২০২১-২২ অর্থবছরে নিবন্ধিত মোট হ্যান্ডসেটের মধ্যে ৯৬% স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত; বাকি মাত্র ৪% আমদানিকৃত।

২০২১ সালে গ্রে মার্কেটের মাধ্যমে মোবাইল হ্যান্ডসেট আসা রোধ করতে এনইআইআর প্রয়োগ করা হয়। সে বছর স্থানীয় কারখানাগুলোতে হ্যান্ডসেট উৎপাদনও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

ছবি- মিন্ট

কিন্তু এ অবস্থা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। একটি ফার্মের সাথে চুক্তি করে এনইআইআর বাস্তবায়নের পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এই আকস্মিক পরিবর্তনের পর স্থানীয় বাজারেও হ্যান্ডসেটের উৎপাদন কমে যেতে থাকে বলে জানিয়েছেন কিছু অ্যাসেম্বলার।

২০২১ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে স্থানীয়ভাবে তৈরি স্মার্টফোনের বিক্রি ৩.৮ মিলিয়ন ইউনিট ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু এর পরের ত্রৈমাসিকে স্মার্টফোন বিক্রি ৩.২ মিলিয়ন ইউনিটে নেমে আসে।

বিটিআরসি এবং এ খাত থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, নিম্নমুখী প্রবাহ চলতে থাকায় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে স্থানীয়ভাবে মোবাইলের উৎপাদন কমে ১.৪ মিলিয়ন ইউনিটে এসে দাঁড়িয়েছে।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, ম্যানুফেকচারার ও অ্যাসেম্বলারদের টিকিয়ে রাখার জন্য বিটিআরসি অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেটের বিরুদ্ধে আকস্মিক অভিযান চালাচ্ছে।

ছবি- সংগৃহীত

অবশ্য, তিনি বলেন, এনইআইআর বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রযুক্তিগতভাবে গ্রে মার্কেটের প্রসার রোধ করা সম্ভব ছিল।

কেন এনইআইআর বাস্তবায়নের উদ্যোগ স্থগিত করা হয় জানতে চাইলে শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, কর্তৃপক্ষ ভেবেছিল হ্যান্ডসেট নিবন্ধন ম্যানুয়ালি করতে হলে তা জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে।

এ পরিস্থিতি এড়াতেই কর্তৃপক্ষ এনইআইআর বাস্তবায়ন থেকে পিছিয়ে গেছে বলে যোগ করেন তিনি।

তবে, নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত হওয়ার পরপরই নতুন মোবাইল হ্যান্ডসেটগুলো নিবন্ধিত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.