স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য থেকে কি বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত ফল পাবে?

অর্থনীতি

28 April, 2023, 10:45 pm
Last modified: 29 April, 2023, 10:24 am
বাংলাদেশ একাই এ প্রতিযোগিতায় নামেনি। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে নিয়মিত এমন উদ্যোগের খবর আসছে। মালয়েশিয়া থেকে শুরু করে ব্রাজিলসহ অনেক দেশ বৈদেশিক বাণিজ্যের লেনদেনে এখন মার্কিন ডলারের পাশাপাশি নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহার করার কথা বলছে।

এশিয়া থেকে শুরু করে ল্যাটিন আমেরিকা ও আফ্রিকা পর্যন্ত নিজস্ব মুদ্রায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের লেনদেন করতে চাওয়া দেশের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সাম্প্রতিক এই ঘটনাকে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা নাম দিয়েছেন 'বি-ডলারীকরণ' (ডি-ডলারাইজেশন)। তবে বাংলাদেশের মতো ব্যাপকভাবে আমদানিনির্ভর দেশগুলোর জন্য এটি টিকে থাকার কৌশল। কারণ বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী লেনদেন মুদ্রা ডলার ইতিমধ্যে এই দেশগুলোর নাগালের প্রায় বাইরে চলে গেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বের অধিকাংশ অর্থনীতির জন্য সর্বনাশ ডেকে আনলেও এতে পোয়াবারো হয়েছে মার্কিন ডলারের। ২০২২ সালে ঐতিহাসিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটে মুদ্রাটির। এর ফলে দেশগুলোর জন্য বাণিজ্য করা কঠিন হয়ে গেছে।

তার ওপরে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় পড়ে রাশিয়া আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং লেনদেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে অনেক দেশ তাদের খাদ্য, রাসায়নিক ও প্রযুক্তির অন্যতম বৃহৎ উৎস-দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেন করার জন্য বিকল্প উপায় খুঁজতে বাধ্য হচ্ছে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নেওয়া রাশিয়ার ঋণের কিস্তি শোধ করতে বাংলাদেশকে চীনা মুদ্রা ইউয়ানের আশ্রয় নিতে হয়েছে।

বাংলাদেশ ও ভারত ইতিমধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন নিজস্ব মুদ্রা, টাকা ও রুপিতে নিষ্পত্তি করতে সম্মত হয়েছে। নিজস্ব মুদ্রায় লেনদেনের জন্য প্রতিবেশী দেশ দুটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো নস্ট্রো (বাইরের দেশের ব্যাংকে এদেশের ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট) ও ভস্ট্রো (এদেশের ব্যাংকে বাইরের দেশের ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট) অ্যাকাউন্ট খুলতে প্রাথমিকভাবে চারটি বাণিজ্যিক ব্যাংককে বাছাই করেছে।

ব্যাংকার ও ব্যবসায়ীরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা আশা করছেন, এ ব্যবস্থা চালু হলে দুদেশের মধ্যকার বার্ষিক বাণিজ্যে ২ বিলিয়ন ডলারের চাপ কমাবে। দুই দেশের মধ্যে বর্তমানে বছরে ১৫.৬ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়। কারেন্সি সোয়াপের ফলে বাংলাদেশের আমদানি বিল কিছুটা সমন্বয় করা যাবে।

এটি এখন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা

বাংলাদেশ একাই এ প্রতিযোগিতায় নামেনি। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে নিয়মিত এমন উদ্যোগের খবর আসছে। মালয়েশিয়া থেকে শুরু করে ব্রাজিলসহ অনেক দেশ বৈদেশিক বাণিজ্যের লেনদেনে এখন মার্কিন ডলারের পাশাপাশি নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহার করার কথা বলছে।

এপ্রিলে ভারত ঘোষণা দিয়েছিল তারা মালয়েশিয়ার সঙ্গে ভারতীয় রুপিতে বাণিজ্য শুরু করবে।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীন। ৬০টি দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেন আছে চীনের, যা যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিগুণ। কাজেই বাণিজ্যিক লেনদেনে ডলারের পরিবর্তে নিজস্ব মুদ্রার ব্যবহার বাড়ানোর এই প্রতিযোগিতায় চীন স্বাভাবিকভাবেই সবচেয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

তবে অন্যরাও চুপচাপ বসে নেই।

স্বর্ণ-সমর্থিত স্টেবলকয়েন, ইউরোর মতো সর্বজনীন মুদ্রা এবং একটি নতুন ব্রিকস রিজার্ভ মুদ্রার মতো প্রকল্পগুলোর সঙ্গে স্থানীয় মুদ্রার ব্যবহার বৃদ্ধিও বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনায় রয়েছে।

এপ্রিলে বেইজিং সফরকালে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডা সিলভা ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরতা কমানোর আহ্বান জানান বলে উল্লেখ করা হয়েছে সিএনবিসির একটি প্রতিবেদনে।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী তো এশিয়ান মানিটারি ফান্ড নামের একটি নতুন সংস্থা গড়ে তোলার প্রস্তাবও দেন। আর দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য আমেরিকান মুদ্রার উপর এশিয়ার অতি-নির্ভরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

আন্তর্জাতিক অর্থ পরিশোধে বৈচিত্র্য আনতে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতের মতো দেশগুলোর সঙ্গে লোকাল কারেন্সি ট্রেডিং (এলসিটি) চালুর লক্ষ্য স্থির করেছে ইন্দোনেশিয়া। দেশটির প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো অর্থ মন্ত্রণালয়কে এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে রুপিয়ায় বাণিজ্য লেনদেন বাড়াতে বলেছেন।

২৭ এপ্রিল রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ক্রমহ্রাসমান ডলারের রিজার্ভকে চাপমুক্ত রাখতে ডলারের পরিবর্তে ইউয়ানে চীনা আমদানির অর্থ পরিশোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর্জেন্টিনা।

শীর্ষস্থানীয় তেল রপ্তানিকারক সৌদি আরবও মার্কিন ডলারের বাইরে অন্য মুদ্রায় বাণিজ্য করার ইঙ্গিত দিয়েছে।

রাশিয়া ও ইরান একটি স্বর্ণ-সমর্থিত স্টেবলকয়েন ও সুইফটের বিকল্প চালুর কথা ভাবছে, কারণ উভয় দেশই এই আন্তর্জাতিক লেনদেন ব্যবস্থা থেকে নিষিদ্ধ।

ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা 'সুর' (sur) নামে একটি যৌথ মুদ্রা চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশ দুটি আশা করছে, মুদ্রাটি দক্ষিণ আমেরিকায় ইউরোর মতো সর্বজনীন মুদ্রা হয়ে উঠতে পারবে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভারত গত বছর তেল-বহির্ভূত বাণিজ্যের লেনদেনে রুপি ব্যবহার করতে সম্মত হয়েছিল।

ছোট দেশগুলো তাদের বাণিজ্যের একটি অংশ ডলারের বাইরে অন্য মুদ্রায় করার চেষ্টা করছে। তবে এ কাজের পেছনে চীন ও ভারতের নিজস্ব এজেন্ডা রয়েছে—সেটি হলো, তাদের মুদ্রার যতটা সম্ভব আন্তর্জাতিকীকরণ করা।

মার্চে ইন্দোনেশিয়ায় এক বৈঠকে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকাররা মার্কিন ডলারের সঙ্গে জাপানি ইয়েন ও ইউরোপের সর্বজনীন মুদ্রা ইউরোকে পাশাপাশি রেখে এই তিনটি প্রধান বাণিজ্য-মুদ্রার ওপর নির্ভরতা কীভাবে কমানো কিংবা বন্ধ করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেন। স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য কীভাবে বাড়ানো যায়, সেটি নিয়ে কথা বলেন তারা।

ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার সমন্বয়ে গঠিত ব্রিকস নিজেদের মধ্যে বাণিজ্যের জন্য একটি সাধারণ মুদ্রা চালু করার বিষয়টি পর্যালোচনা করছে। এ ধারণাটি গত বছর চীনের শীর্ষ সম্মেলনে উঠে আসে। আশা করা হচ্ছে, আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিতব্য আগামী শীর্ষ সম্মেলনে ব্লকটি মুদ্রা-সংক্রান্ত একটি নতুন ঘোষণা দেবে।

সৌদি আরব ও ইরানসহ ১৯টি দেশ যেহতু এই দলে যোগ দিতে ইচ্ছুক, তাই নতুন এই আইডিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ অনেক বেশি পাবে ব্লকটি।

এদিকে ডলার-বিরোধী এই মিছিলে শামিল হতে ইউরোপকেও বেশ আগ্রহী মনে হচ্ছে। বিজনেস ইনসাইডারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ডলারের ওপর ইউরোপের নির্ভরতার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা বন্ধ করার সুযোগ খুঁজতে থাকা দেশগুলো বি-ডলারীকরণ থেকে কীভাবে লাভবান বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, বিশ্লেষকরা এখন তা যাচাই-বাছাই করছেন।

অধিকাংশ বিশ্লেষকেরই বিশ্বাস, এর ফলে স্থানীয় অর্থনীতি নানাভাবে সুফল পেতে পারে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে 'ফড়িয়া' হিসেবে ডলারের ভূমিকা কমালে সেটি বাণিজ্যরত দুটি দেশের রপ্তানিকারক এবং আমদানিকারকদের ব্যবসায়িক ঝুঁকির ভারসাম্য বজায় রাখতে, বিনিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধিতে এবং ভ্যালু চেইনকে এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি আরও বেশি আয় করতে সহায়তা করবে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল পূর্বাভাস দিয়েছে, আগামীতে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিতে এশিয়ার অবদান হবে ৭০ শতাংশের বেশি। এই পূর্বাভাসের বদৌলতে বিশ্লেষকরা আরও আশাবাদী হয়ে উঠেছেন যে অনেক অর্থনীতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে স্থানীয় মুদ্রার ব্যবহার বাড়াবে।

দ্রুতগতিতে প্রতিপত্তি হারাচ্ছে মার্কিন ডলার? 

এ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত বিশ্লেষকেরা। একদল মনে করছেন, দ্রুতগতিতেই নিজের জায়গা হারাচ্ছে ডলার। অন্যদিকে আরেক পক্ষের মতে, ডলারের ক্ষমতা হারানোর ঘটনা শীঘ্রই ঘটছে না।

ইউরিজন এসএলজে ক্যাপিটাল লিমিটেড-এর স্টিফেন জেনের মতে, গত বছর ডলারের বিনিময় হারের অস্বাভাবিক ওঠানামার কোনো কারণ অনেক বিশ্লেষক ব্যাখ্যা করতে না পারায় সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য গতির তুলনায় অনেক বেশি দ্রুত হারে ডলার রিজার্ভমুদ্রা হিসেবে মর্যাদা হারাচ্ছে।

অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান অবশ্য মনে করেন না যে বিশ্ববাজারে সহসা প্রাধান্য হারাতে যাচ্ছে ডলার।

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর এক নিবন্ধে নোবেলজয়ী এ অর্থনীতিবিদ জোর দিয়ে বলেছেন, মার্কিন ডলার আদৌ কোনো ঝুঁকিতে নেই এবং এর অবস্থান 'বেশ নিরাপদ মনে হচ্ছে'। ডলারের বড় সুবিধাগুলো তালিকা করে দেখিয়েছেন তিনি—সবাই ডলার ব্যবহার করার কারণে এর মর্যাদা ও মার্কিন অর্থনৈতিক বাজারের উন্মুক্ততা; যে-কেউই দেশের ভেতরে বা বাইরে অর্থ পরিবহন করতে পারে।

তেলসহ বেশিরভাগ পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ডলারে। তাই দীর্ঘদিন ধরে বৈশ্বিক বাণিজ্য খাতে প্রভাবশালী ভূমিকায় ছিল ডলার। মূলত অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমের তীব্র হারে সুদহার বৃদ্ধির কারণে ডলারের দাম আরও বেড়ে গেছে। এতে ২০২২ সালের প্রথম নয় মাসেই মুদ্রাটির দাম ১৭ শতাংশ বেড়ে যায়। ফলে ছোট অর্থনীতির জন্য কঠিন হয়ে পড়ে বাণিজ্য।

পাশাপাশি অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সুদহার বাড়াতে বা বাণিজ্যে বিধিনিষেধ আরোপ করতে হয়েছিল। এর ফলে ডলারে বিপরীতে দুর্বল স্থানীয় মুদ্রাগুলোর (যার মধ্যে টাকাও রয়েছে—২০২২ সালে ২২ শতাংশ দরপতন ঘটেছে বাংলাদেশি মুদ্রার) মানের লাগামহীন পতন ঘটে। স্থানীয় মুদ্রার মান কমে যাওয়ায় আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যায়, আর এর ধাক্কা লাগে স্থানীয় বাজারের পণ্যমূল্যে।

ডলারের চাপ কমাতে ছোট অর্থনীতিগুলোর বিকল্প উপায় খোঁজার জন্য এতসব অর্থনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতি পর্যাপ্ত ছিল। আর এর পাশাপাশি রাশিয়ার ব্যাংকগুলোর ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এবং দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ৩০০ বিলিয়ন ডলার ফ্রিজ করার কারণে তথাকথিত বি-ডলারীকরণ প্রক্রিয়া আরও বেশি গতি পায়।

রাশিয়াকে বাধ্য হয়ে অন্য মুদ্রায় বাণিজ্য শুরু এবং রিজার্ভে সোনার পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হয়। তাছাড়া রাশিয়ার বাণিজ্যিক দৃশ্যপটে ভূমিকা হারাতে শুরু করেছে ডলার, সেখানে এখন চীনের ইউয়ানের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য হচ্ছে।

তবে এসব কিছু ডলারের ক্ষমতা ধূলিস্যাৎ হওয়াকে নির্দেশ করছে না। যদিও ২০২২ সাল পর্যন্ত গত দুই দশকে রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ডলারের মর্যাদা ১০ গুণ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। আর ইউরিজন এসএলজে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের ৫৫ শতাংশ থেকে গত বছর বৈশ্বিক মোট রিজার্ভ মুদ্রায় ডলারের হিস্যা ৪৭ শতাংশে নেমে গেছে। ২০০৩ সালে বৈশ্বিক রিজার্ভ মুদ্রার মোট দুই-তৃতীয়াংশই ছিল মার্কিন ডলার।

মার্কিন ডলার এখনও সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য, স্থিতিশীল রিজার্ভ ও বাণিজ্যিক মুদ্রা।

বাংলাদেশ যেভাবে লাভবান হতে পারে

তবে বৈদেশিক বাণিজ্যের লেনদেনের ক্ষুদ্র একটা অংশও ডলার বাদে অন্য মুদ্রায় করতে পারলেও তা বাংলাদেশের জন্য বড় ব্যাপার। বাংলাদেশের মোট আমদানির ২৫ ও ১৮ শতাংশ হয় যথাক্রমে ভারত ও চীন থেকে। কারেন্সি সোয়াপ ব্যবস্থার বাস্তবায়ন হলে এ দুই শীর্ষ আমদানি উৎসের সঙ্গে আমদানি লেনদেনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলার বেঁচে যেতে পারে।

বাংলাদেশের মোট আমদানি ৭৫.৬ বিলিয়ন ডলারের। এর মধ্যে ৭২ শতাংশ আমদানি ব্যয়ই হয় জি২০-ভুক্ত দেশগুলোতে। পাশাপাশি সার্ক, আসিয়ান, ওআইসি, ওপেক, জি৭, ডি৮ ইত্যাদি জোটভুক্ত অনেক দেশ থেকেও আমদানি করে বাংলাদেশ। এ আমদানির একটা অংশও যদি ডলার বাদে অন্য কোনো মুদ্রায় করা যায়, তাহলে তা হবে একটি তাৎপর্যপূর্ণ উদ্বেগ-নিরসন।

বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ৭.৫ বিলিয়ন ডলারের উদ্বৃত্ত বাণিজ্য বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। উপসাগরীয় তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোসহ বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য লেনদেনে উৎসাহ দিয়ে বাংলাদেশ তার বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ কমাতে পারে।

বাংলাদেশ ও ভারত স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্যিক লেনদেনের বিষয়ে রাজি হয়েছে। দেশের ব্যাংকার ও ব্যবসায়িক নেতারা এ পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। সোনালী ব্যাংক লিমিটেড-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম বলেন, 'ভারতের সঙ্গে টাকা ও রুপিতে দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ মার্কিন ডলারের ওপর চাপ কমাবে। উভয় দেশ এর মাধ্যমে লাভবান হবে।'

'এর ফলে ব্যবসায়ীদের খরচ কমবে। পাশাপাশি ডলারের চাহিদার কারণে সৃষ্ট বাড়তি চাপও কমবে,' বলেন ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার।

গত বছর ডলার সংকট শুরু হওয়ার পর থেকেই এ ধরনের ব্যবস্থার পক্ষে ছিলেন ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া চেম্বার অভ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ টিবিএসকে বলেন, 'আমরা বেশ কিছুদিন ধরেই ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানির সমপরিমাণ লেনদেন টাকা ও রুপিতে সম্পন্ন করতে দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অনুরোধ করে আসছি।' আরেক ব্যবসায়িক নেতা, বাংলাদেশ চেম্বার অভ ইন্ডাস্ট্রিজ-এর প্রেসিডেন্ট আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, এ চুক্তির ফলে বাংলাদেশ দুই বিলিয়ন ডলারের আমদানিমূল্য (ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের সমান) রুপিতে পরিশোধ করতে পারবে।

রাশিয়ার সঙ্গে কারেন্সি সোয়াপের চুক্তি নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ। চীনও বাংলাদেশকে কারেন্সি সোয়াপের প্রস্তাব দিয়েছে, বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে চীনা প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করছে।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.