সুন্দরবনের শুঁটকি পল্লী থেকে আয় বেড়েছে সরকারের

অর্থনীতি

11 April, 2023, 12:15 pm
Last modified: 13 April, 2023, 02:32 pm
গত ৫ মাসে সেখানে প্রায় ৫ হাজার ১০০ টন শুঁটকি উৎপাদন করেছেন জেলারা। এর বিপরীতে বন বিভাগের আয় হয়েছে ৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

সুন্দরবনের দুবলার চরের শুঁটকি পল্লী থেকে রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আয় করেছে বন বিভাগ। গত মৌসুমের তুলনায় এ মৌসুমে মাছ আহরণ ১,৪০০ টন কম হলেও এখাত থেকে এবার রেকর্ড আয় হয়েছে সরকারের। 

গত ৫ মাসে সেখানে প্রায় ৫ হাজার ১০০ টন শুঁটকি উৎপাদন করেছেন জেলারা। এর বিপরীতে বন বিভাগ ৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করেছে; আগের মৌসুমে এই আয় ছিল ৪.১৮ কোটি টাকা।

বন বিভাগের দুবলা জেলে পল্লী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন জানান, মৌসুমের শুরুতে বন মন্ত্রণালয় শুঁটকি মাছের ওপর বর্ধিত শুল্ক নিয়ে একটি সার্কুলার জারি করায় রাজস্ব আয় বেড়েছে।

সুন্দরবনের পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, "দুবলায় এই বছর ৬ কোটি ৬৮ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে, যা অতীতের যেকোনো মৌসুমের চেয়ে বেশি।"

দুবলার চরে শুঁটকি মাছ প্রক্রিয়াকরণ করছেন জেলেরা। ছবি: আওয়াল শেখ / টিবিএস।

বাগেরহাটে জেলার মোড়েলগঞ্জ থেকে ওই চরে এবার শুঁটকি উৎপাদন করতে গিয়েছিলেন অশরাফুল আলম।

তিনি জানান, এবার মৌসুমের শুরুতে তেমন মাছ পড়েনি। তবে মাঝামাঝি সময় থেকে বেশি পাওয়া গেছে। শেষের দিকেও ভাল মাছ পাওয়া গেছে। এতে অনেক বহরদার লাভবান হয়েছেন।

দুবলা জেলে পল্লী টহল ফাঁড়ির কূপ কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ বলেন, "প্রত্যক মৌসুমে জেলাদের চার মাস চরে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে এবার মৌসুমের শেষের দিকে মাছ ভাল আহরণ হওয়ায়, শেষে একমাস সময় বাড়িয়ে ৫ মাস করা হয়েছিল। জেলেরা প্রতি ১৫ দিনের মধ্যে ৭ দিন মাছ ধরেন। বাকি দিনগুলো তারা মাছ শুঁটকি করেন।"

"তবে জেলেরা যেন কোনোভাবে সুন্দরবনের অভ্যয়রাণ্যের মধ্যে গিয়ে মাছ আহরণ করতে না পারে, সে ব্যাপারে আমরা কঠোর নজরদারীতে ছিলাম," যোগ করেন তিনি। 

ছবি: আওয়াল শেখ / টিবিএস।

বন বিভাগের তথ্য মতে, এই মৌসুমে শুঁটকি উৎপাদনের জন্য জেলারা দুবলায় গিয়েছিল ২০২২ সালের ০১ নভেম্বরে। মৌসুম শেষ হয় চলতি বছরের ৩১ মার্চ। ইতোমধ্যে জেলেরা দুবলা ছেড়ে লোকালয়ে চলে এসেছেন। এই মৌসুমে সেখানে প্রায় দেড় হাজার বহরদারের অধীনে ১২ জেলে বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ আহরণ করেছেন। জেলেদের থাকা ও শুঁটকি সংরক্ষণের জন্য চরে দেড় হাজার ঘর, ৬৩টি ডিপো এবং শতাধিক দোকান স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

এ বছর দুবলার চরে একটি বহর নিয়ে গিয়েছিলেন খুলনার পাইকগাছা উপজেলার জেলে জিহাদুল ইসলাম। 

তিনি বলেন, "আমার বহরে দুটি ট্রলার, ৪টি জাল ও ১৭ জন কর্মচারী ছিলেন। মৌসুমের শুরুতে এসব নিয়ে দুবলায় যেতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ১৭ লাখ টাকা।" 

"১৭ জন কর্মচারীর প্রত্যেকের বেতন ছিল ৮ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়া এবার জ্বালানি তেলের দামও বেশি, সঙ্গে খাবার খরচও বেশি হয়েছে। গত ৫ মাসে দুবলা থেকে যে মাছ পেয়েছি, তাতে আমার তেমন লাভ না হলেও একেবারে লোকসান হয়নি," যোগ করেন তিনি।

ছবি: আওয়াল শেখ / টিবিএস।

দুবলা জেলে পল্লী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন জানান, প্রতি কেজি মাছ আহরণের জন্য জেলেদের কাছ থেকে ১০ টাকা হারে রাজস্ব আদায় করা হয়, যা আগে ছিল গড়ে ৫ টাকা। ১৫ দিন পর পর প্রত্যের বহরদার কী পরিমাণ মাছ আহরণ করলেন, তার হিসাব করে আদায় হয় এ রাজস্ব।

বঙ্গোপসাগরের সৈকতঘেঁষা সুন্দরবনের কুঙ্গা নদীর পূর্ব পাড়ে অবস্থিত দুবলা দ্বীপ। ওই দ্বীপের আলোরকোল নামক অংশে (দুবলার চর নামেও পরিচিত) জেলারা শুঁটকি উৎপাদন করেন। প্রতি মৌসুমের পাঁচ মাস সেখানে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের জেলারা অবস্থান করে বঙ্গপসাগর থেকে মাছ আহরণ করেন। সেই মাছ রোদের তাপে শুকিয়ে শুঁটকি উৎপাদন করেন তারা।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.