কর ফাঁকি ও এড়ানো রাজস্ব আদায়ের প্রায় সমপরিমাণ: সিপিডি

অর্থনীতি

টিবিএস রিপোর্ট
03 April, 2023, 09:25 pm
Last modified: 03 April, 2023, 09:29 pm
‘এসব অর্থের কিছুটা দেশ থেকে পাচার করা হয়, কিছু দেশের ভেতরে বিনিয়োগ করা হয় আর কিছু সম্পদ বা নগদ হিসেবে রাখা হয়।’

উচ্চ হারে কর ফাঁকি ও কর প্রদান এড়িয়ে যাওয়ার কারণে সরকারের কোষাগার গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ওই বছরে আদায়কৃত রাজস্বের প্রায় সমান। এমন চিত্রই উঠে এসেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর জরিপ গবেষণায়।

২০২১-২২ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর রাজস্ব আদায় করে তিন লাখ কোটি টাকার কিছু বেশি। সে তুলনায়, কর ফাঁকি ও এড়ানোর পরিমাণ ছিল প্রায় দুই লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি।

সিপিডির গবেষণায় বলা হয়েছে, কর ফাঁকির কারণে প্রতিবছর সর্বনিম্ন ৪২ হাজার কোটি টাকা থেকে দুই লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এর সাথে কর প্রদান এড়িয়ে যাওয়াকে অন্তর্ভুক্ত করলে সর্বোচ্চ রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় দুই লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকায়।

কর ফাঁকি দিতে গিয়ে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তার প্রকৃত আয় কম দেখিয়ে থাকে, ফলে সম্পূর্ণ কর দায় পরিশোধ করে না। অন্যদিকে আইনি কাঠামোর আওতায় সরকারের দেওয়া সুবিধা গ্রহণ করে কর কম দিয়ে থাকে। দুটিকেই কর অস্বচ্ছতা বলা হয়েছে।

বাংলাদেশে কর ফাঁকির পরিমাণ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সরকারি ব্যয়ের চেয়ে প্রায় আটগুণ বেশি বলেও গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

এছাড়া, আইনি পরামর্শক, কর কর্মকর্তাদের সাহায্য নিয়ে আয় কম দেখনো হচ্ছে। একইসঙ্গে, বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়িয়ে দেখিয়ে এবং অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে নগদ লেনদেনসহ বিভিন্ন উপায়ে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কীভাবে কম কর দিচ্ছে — সে সম্পর্কেও গবেষণায় বলা হয়েছে।

এজন্য কালো টাকা সাদা করার সুযোগকে অন্যতম কারণ বলে চিহ্নিত করেছে সিপিডি।

সোমবার (৩ এপ্রিল) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডির কার্যালয়ে 'কর্পোরেট খাতে কর স্বচ্ছতা: জাতীয় বাজেটে এর প্রভাব' শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপনকালে সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, 'এসব অর্থের কিছুটা দেশ থেকে পাচার করা হয়, কিছু দেশের ভেতরে বিনিয়োগ করা হয় আর কিছু সম্পদ বা নগদ হিসেবে রাখা হয়।'

তিনি বলেন, 'কর রেয়াতের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক অর্থনীতির ওপর বিবেচনা করে নেওয়া হয়। কিন্তু এটি দেওয়া উচিত প্রয়োজনীয়তার দিক বিবেচনা করে।'

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, 'রেডিমেড গার্মেন্ট রপ্তানির ক্ষেত্রে এক শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া হয়। কিন্তু এটা যদি নন-কটন শিল্পে দেওয়া হতো, তাহলে আরও বেশি কার্যকর হতো।'

তিনি বলেন, বিভিন্ন মহল দ্বারা প্রভাবিত হয় এসব সিদ্ধান্ত।

এনবিআর-এর দুই কর্মকর্তা এবং ১০ জন প্রখ্যাত চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট-এর ওপর করা জরিপের ভিত্তিতে সিপিডির গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'জরিপ থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তি করে কর এড়ানোর আনুমানিক এ হিসাবটি দেখানো হয়েছে।'

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.