বাংলাদেশে ব্র্যান্ডউইনের সঙ্গে যৌথভাবে ইলেকট্রিক ট্রাক উৎপাদন করবে ওমেগা সেইকি
যৌথভাবে ১০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে বাংলাদেশে ইলেকট্রিক ট্রাকের (ই-ট্রাক) উৎপাদন কারখানা নির্মাণের জন্য সম্প্রতি ব্র্যান্ডউইন গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করেছে দিল্লিভিত্তিক বৈদ্যুতিক যানবাহন নির্মাতা ওমেগা সেইকি মোবিলিটি। রাজধানী ঢাকার নিকটেই নির্মিত হবে এটি।
বাংলাদেশে যৌথ উদ্যোগে ওমেগা সেইকির দ্বিতীয় উৎপাদন কারখানা এটি। ব্র্যান্ডউইনের আগে নিটল-নিলয় গ্রুপের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কাজ শুরু করছে কোম্পানিটি। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে কোম্পানি দুটি দেশে ইলেকট্রিক থ্রি-হুইলার উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছে।
ব্র্যান্ডউইন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী হায়দার রতন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, যৌথ উদ্যোগের এ প্রকল্পে দুটি কোম্পানিরই প্রায় সমান সমান শেয়ার রয়েছে। রাজধানীর উত্তরে তাদের দুটি প্লট প্রস্তুত আছে বলেও জানান তিনি।
'মে মাস থেকে আমরা এমওয়ানকেএ (M1KA) ই-ট্রাকের আমদানিকৃত ইউনিটগুলো বিক্রি শুরু করবো। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি থেকে আমরা স্থানীয়ভাবে এ গাড়িটির অ্যাসেম্বল শুরু করব,' যোগ করেন আলী হায়দার।
তিনি আরও বলেন, 'আমরা এখানে একটি ইভি ইকোসিস্টেমের উন্নয়নেও কাজ করছি, যাতে ই-ট্রাকের জন্য একটি দেশব্যাপী চার্জিং নেটওয়ার্ক তৈরি করা যায়।'
এক সেট ব্যাটারি সম্পূর্ণভাবে চার্জ করা হলে ই-ট্রাকগুলো ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলে বলে জানান তিনি।
এমওয়ানকেএ-এর ১-টন ও ৩-টনের মডেলগুলো বাংলাদেশের বাজারে সফল হবে বলে বিশ্বাস করেন তিনি। অন্যদিকে ওমেগা সেইকি আশা করছে, বাংলাদেশে প্রায় ৫০০ ইউনিট ই-ট্রাকের বার্ষিক বিক্রি দিয়ে যাত্রা শুরু হবে তাদের।
নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল মতলুব আহমেদ টিবিএসকে বলেন, ওমেগা সেইকির সঙ্গে তাদের যৌথ উদ্যোগের কারখানাটি গাজীপুরের মৌচাকে অবস্থিত। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে যন্ত্রপাতি আমদানি ও স্থাপন করার অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।
ওমেগা সেইকি ব্র্যান্ডের ইলেকট্রিক থ্রি-হুইলারগুলো প্রতিবার চার্জ শেষে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলে বলে জানান তিনি।
ইতোমধ্যেই এই প্রকল্পে ৩৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে নিটল-নিলয় গ্রুপ। সামনের বছরগুলোতে ইলেকট্রিক গাড়িতে আরো বেশি বিনিয়োগের লক্ষ্য রয়েছে আব্দুল মতলুব আহমেদের।
তিনি আরো জানান, 'একটি যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি উৎপাদনের জন্য আমাদের চীনা অংশীদাররা এখন এই দেশেই আছেন।'
আব্দুল মতলুব আরো বলেন, শুধু লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা গেলে ইলেকট্রিক গাড়ির স্থানীয় মূল্য সংযোজন হবে ৪০ শতাংশ। তাছাড়া, গাড়ির বডি পার্টস, টায়ার, সিট ও গাড়ির কাচগুলো স্থানীয় উৎস থেকেই পাওয়া সম্ভব।
'প্রথমে আমরা ইলেকট্রিক গাড়ি অ্যাসেম্বলিং দিয়ে শুরু করব। আগামী দুই বছরের মধ্যে পণ্যটিতে সর্বোচ্চ স্থানীয় মান যোগ করার পরিকল্পনা করছি আমরা,' বলেন তিনি।
তবে নিবন্ধন-সংক্রান্ত সমস্যা, অসহনীয় শুল্ক কাঠামোর পাশাপাশি ইলেকট্রিক গাড়ির জন্য দেশে এখনও কোনো প্রণোদনা নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
'পরিবেশবান্ধব হওয়ায় অন্যান্য দেশে ইলেকট্রিক গাড়ির ক্রেতারা রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা পাচ্ছে। আমরা এখনো এ বিষয়ে কিছু ভাবিনি,' যোগ করেন তিনি।
২০১৮ সালে যাত্রা শুরু করে ওমেগা সেইকি মোবিলিটি। ২০২০ সালে কোম্পানিটি এর প্রথম ইলেকট্রিক কার্গো থ্রি-হুইলার 'রেজ প্লাস' বাজারে ছাড়ে।
বর্তমানে দুই চাকা ও তিন চাকার পাশাপাশি কোম্পানিটি বিভিন্ন আকার ও ক্ষমতার ইলেকট্রিক কার্গো উৎপাদন করছে।
প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে সমৃদ্ধ কোম্পানিটি এরমধ্যেই ভারতের নানা প্রান্তে তাদের তৃতীয় উৎপাদন কারখানা চালু করেছে।