উইজডম অ্যাটায়ার্স: প্রথমবারের মতো রপ্তানি পণ্যের ট্যাগে যুক্ত হলো বাংলা

অর্থনীতি

21 February, 2023, 04:10 pm
Last modified: 21 February, 2023, 07:42 pm
প্রায় এক দশক ধরে স্থানীয় বাজারের জন্য কাপড় তৈরির পর, ১৯৮৮ সালে বাইরে পোশাক রপ্তানি শুরু করে উইজডম অ্যাটায়ার্স। ২০১৩-১৪ সালে মালয়েশিয়ার বাজারে ১ কোটি ডলারের রপ্তানি করেছে উইজডম অ্যাটায়ার্স। এখানে তাদের বার্ষিক রপ্তানি গড়ে প্রায় ৬০-৭০ লাখ ডলার। অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাজারে তাদের বার্ষিক রপ্তানি প্রায় ৪০ লাখ ডলার, এর পরিমাণও দিনদিন বাড়ছে। বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসা ছাড়াও, উইজডম অ্যাটায়ার্সের লক্ষ্য গ্রিন অ্যাপারেল তৈরি এবং একটি টেকসই কর্মচারির দল গড়ে তোলা।
ইনফোগ্রাফ- টিবিএস

নিজেদের পণ্যের লেবেল দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করছে বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানিকারক উইজডম অ্যাটায়ার্স। মালয়েশিয়ার বাজারে রপ্তানি করা উইজডমের পোশাকের ট্যাগে এখন থেকে মেইড ইন বাংলাদেশের পাশাপাশি যুক্ত হলো 'বাংলাদেশে তৈরী' কথাটিও।

স্থানীয় পোশাক শিল্পের জন্য এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপের মাধ্যমে রপ্তানি পণ্যের ট্যাগে বাংলা ব্যবহার করা প্রথম কারখানা হিসেবে নাম লেখালো উইজডম।

উইজডম অ্যাটায়ার্স-এর পরিচালক আক্তার হোসেন অপূর্ব মনে করেন, এই অর্জন শুধু ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাই নয়, বরং বাঙালিদের জন্য গর্বেরও বিষয়।

অপূর্ব বলেন, তিনি সবসময়ই ভাষা আন্দোলন ও ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তার এই অনুপ্রেরণা ও নিজ দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি অটল থাকা অবশেষে আলোর মুখ দেখেছে। তার এই প্রচেষ্টা এমন একটি মাইলফলক তৈরি করেছে যা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ইতিহাসে রচিত থাকবে।

তাছাড়া, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের আকার ও গুরুত্ব বিবেচনায় উইজডম অ্যাটায়ার্সের এই পদক্ষেপটি অত্যন্ত তাৎপর্য বহন করে। বর্তমানে পোশাক রপ্তানিতে প্রায় ৩০০০ কারখানা জড়িত, যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গার্মেন্টসের ট্যাগে বাংলা ব্যবহার করে উইজডম অ্যাটায়ার্স অন্যান্য শিল্পের জন্য একটি উদাহরণ স্থাপন করছে। এই খাতে আরও উদ্ভাবনের সূচনা করতে পারে তাদের উদ্যোগ।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) এর ভাইস প্রেসিডেন্ট শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, তারা তাদের সদস্যদের মাধ্যমে বিদেশি ক্রেতাদেরকে পণ্যের লেবেল, ট্যাগ এবং প্যাকেজিং কার্টনে বাংলায় 'মেইড ইন বাংলাদেশ' লেখার বিষয়ে অনুরোধ করবেন।

পোশাক প্রস্তুতকারকরা বলছেন, বাংলাদেশ যেহেতু বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক সরবরাহকারী দেশ, তাই ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলায় ট্যাগ লেখার বিষয়টি নিয়ে খুচরা বিক্রেতাদেরকে অনুরোধ করা যেতে পারে।

ডাচ ফ্যাশন রিটেইলার জি-স্টার র-এর আঞ্চলিক অপারেশন ম্যানেজার শফিউর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "যদি কোনো প্রধান সরবরাহকারী ব্র্যান্ডগুলোকে অনুরোধ করে, তাহলে তারা (পশ্চিরা খুচরা বিক্রেতা) এটি বিবেচনা করতে পারে।"

এথনোলগ অনুসারে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষের মুখের ভাষার তালিকায় বাংলার অবস্থান ৭ম। বিশ্বের ২৭২.৭ মিলিয়ন মানুষ তাদের মাতৃভাষা হিসেবে বাংলায় কথা বলে।

১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো সাধারণ সম্মেলনে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ২০০০ সাল থেকে সারাবিশ্বে পালিত হয়ে আসছে এ দিবস।

স্বীকৃতির জন্য প্রয়োজন শক্তি

মালয়েশিয়ান ব্র্যান্ড ফোর স্কয়ারের জন্য প্রায় ২.২০ লাখ ডলার মূল্যের পোশাকের দুটি কন্টেইনার রপ্তানি করেছে উইজডম অ্যাটায়ার্স। ব্র্যান্ডটির মালিকও তারা।

উইজডম অ্যাটায়ার্সের পরিচালক আক্তার হোসেন অপূর্ব বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার বাজারে সম্ভাবনা দেখে ২০১১ সালে মালয়েশিয়ায় ব্র্যান্ডটি চালু করে উইজডম অ্যাপারেলস।

অপূর্ব বলেন, ব্র্যান্ডটি যখন মালয়েশিয়ায় নিবন্ধিত হয়, তখন সেখানকার বাজারে বাংলাদেশি পোশাকের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। বাজারে তখন আধিপত্য ছিল চীনা রপ্তানিকারকদের।

তবে, এত বছরে এ চিত্রে পরিবর্তন এসেছে। অপূর্ব জানান, ব্র্যান্ডটি এখন দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে একটি শক্তিশালী অবস্থান অর্জন করেছে।

২০১৩-১৪ সালে মালয়েশিয়ার বাজারে ১ কোটি ডলারের রপ্তানি করেছে উইজডম অ্যাটায়ার্স। এখানে তাদের বার্ষিক রপ্তানি গড়ে প্রায় ৬০-৭০ লাখ ডলার। অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাজারে তাদের বার্ষিক রপ্তানি প্রায় ৪০ লাখ ডলার, এর পরিমাণও দিনদিন বাড়ছে।

"আমার শ্বশুর আমাকে এই ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস উপলক্ষ্যে কিছু করার জন্য উৎসাহ দিয়েছিলেন। অবশেষে, শনিবার আমরা তা করেছি," বলেন অপূর্ব।

তিনি তার অন্যান্য বিদেশি ক্রেতাদেরকেও বাংলা ট্যাগ ব্যবহারের জন্য অনুরোধ করেছেন বলে জানান এই রপ্তানিকারক।

বাংলা ভাষার প্রচার, সাথে গ্রিন ফ্যাক্টরি হিসেবে এগিয়ে যাওয়া

বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসা ছাড়াও, উইজডম অ্যাটায়ার্সের লক্ষ্য গ্রিন অ্যাপারেল তৈরি এবং একটি টেকসই কর্মচারির দল গড়ে তোলা।

প্রায় এক দশক ধরে স্থানীয় বাজারের জন্য কাপড় তৈরির পর, ১৯৮৮ সালে বাইরে পোশাক রপ্তানি শুরু করে উইজডম অ্যাটায়ার্স।

কিন্তু মানগত সমস্যার কারণে ৪৮,০০০ ডলার মূল্যের প্রথম চালানটি লাভের মুখ দেখেনি।

"১৯৯৪-৯৫ সালে আমরা মৌলিক পণ্যের দিকে নজর দেই কারণ সেগুলো সবসময়ই ব্যবসার জন্য অক্সিজেনের মতো বলা চলে। এই পদক্ষেপের ফলে রপ্তানির ক্ষতি মোকাবেলা করতে ও নেদারল্যান্ডে একটি সফল ফ্যাশন ব্র্যান্ড চালু করতে পারি আমরা," বলছিলেন অপূর্ব।

বিগত ২৫ বছর ধরে উইজডম অ্যাটায়ার্স স্প্যানিশ জেএইচকে-এর সাথে ব্যবসা করছে। উইজডম ফ্যাক্টরিতে উৎপন্ন ৭৫ শতাংশ পণ্যই তাদের। দিনে এক লাখ পিস টি-শার্ট এবং পোলো শার্ট তৈরির ক্ষমতা রয়েছে এই কারখানার।

অপূর্ব বলেন, "এমন মনে হয় যেন আমি আর এ কারখানা, দুজনে একসঙ্গে বড় হয়েছি।"

২০১৪ সালে কোম্পানিটি তার কারখানার পাশে ৬ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করে এবং গ্রিন অ্যাপারেল তৈরি শুরু করে। বর্তমানে উইজডম একটি গোল্ড-সার্টিফায়েড গ্রিন ফ্যাক্টরি।

কর্মচারীদের জন্য একটি ভাল কর্মক্ষেত্রের লক্ষ্যেই উইজডম গ্রিন ফ্যাক্টরি হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়েছে বলে উল্লেখ করেন অপূর্ব। এতে কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং তাদের চাকরি ছাড়ার সংখ্যাও কমেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমাদের কারখানায় একজন শ্রমিকের চাকরির গড় মেয়াদ দশ বছর। বর্তমানে, আমাদের বেশ কিছু কর্মী আছে যারা তিন প্রজন্ম ধরে এখানে কাজ করছে।"

২০০০ কর্মী, সদস্য এবং ৩৫ মিলিয়ন ডলারের বার্ষিক রপ্তানি নিয়ে কোম্পানিটি সামনেই কাতারের বাজারে প্রবেশ করবে।

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.