যুক্তরাজ্যে সোনালী ব্যাংকের নতুন উদ্যোগ: এবার কি মুনাফা হবে?

অর্থনীতি

19 February, 2023, 10:00 am
Last modified: 19 February, 2023, 09:26 pm
ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দাবি, এই পদক্ষেপ রেমিট্যান্স সার্ভিসের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সেবা প্রদান করবে; যদিও গত দুই বছরে বেসরকারি ব্যাংকের মালিকানাধীন অন্তত আধা ডজন এক্সচেঞ্জ হাউজ বন্ধ হয়ে গেছে।

যুক্তরাজ্যে সোনালী পে (ইউকে) লিমিটেড নামে একটি নতুন প্রতিষ্ঠান গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক। তবে ব্যাংকের নতুন এই সিদ্ধান্ত ফলদায়ক হবে কিনা তা নিয়ে দেখ দিয়েছে সংশয়। কারণ মুনাফা তৈরিতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০২১ সালেই বন্ধ হয়ে গেছে সোনালী ব্যাংকের ইউকে শাখা।

ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দাবি, এই পদক্ষেপ রেমিট্যান্স সার্ভিসের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সেবা প্রদান করবে; যদিও গত দুই বছরে বেসরকারি ব্যাংকের মালিকানাধীন অন্তত আধা ডজন এক্সচেঞ্জ হাউজ বন্ধ হয়ে গেছে।

২০১৬ সালে ব্যাংকের পূর্ববর্তী সত্ত্বা সোনালী ব্যাংক (ইউকে) লিমিটেড এবং এর তৎকালীন সিইওকে আইন না মেনে চলাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে জরিমানা করেছিল ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড। ফলস্বরূপ, স্থগিত করা হয় ব্যাংকটির ব্যাংকিং কার্যক্রম। তবে প্রতিষ্ঠানটির এলসি বিষয়ক পরামর্শ, নিশ্চিতকরণ, ছাড় এবং রেমিট্যান্সের মতো কিছু পরিষেবা এখনও চালু রয়েছে।

শাখা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর, যুক্তরাজ্যে ব্যাংকের ৮২৩ কোটি টাকা ইক্যুইটি রয়েছে বলে দাবি করে সোনালী ব্যাংক এবং এই ইক্যুইটি ব্যবহার করে একটি এক্সচেঞ্জ হাউস প্রতিষ্ঠা করতে চায়। 

তবে গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য থেকে দেশের রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়লেও যুক্তরাজ্যে চালু হওয়া বাংলাদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো এখনও নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে পারেনি।

২০১০ সাল পরবর্তী সময়ে দেশের এক ডজনেরও বেশি ব্যাংক যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে মানি এক্সচেঞ্জ খুলে বসেছিল। কিন্তু চালু হওয়ার পর থেকে ওইসব মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান টিকে থাকতে পারেনি বেশি দিন।

এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ছয়টি ব্যাংকের মানি এক্সচেঞ্জ হাউজ। ব্যাংকগুলো হলো বেসরকারি খাতের প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি)।

বর্তমানে ইউকেতে ব্যাংক এশিয়া, ব্রাক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড, এক্সিম, আইএফআইসি ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সবমিলিয়ে ৭ টি এক্সেঞ্জ হাউজ রয়েছে। তবে সেই দেশে এখনও যে কয়টি ব্যাংকের মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলোও অধিকাংশ ধারাবাহিক লোকসান গুনছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকাররা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সোনালী ব্যাংক ২০১৪ সালের পর থেকে কোনো মুনাফা দেশে আনতে পারেনি। সেই দেশে ব্যবসা বাণিজ্য কেমন যাচ্ছে- রেগুলটারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা জানতে চাইলেও যথাসময়ে উত্তর দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। 

সোনালী ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৬ সালের প্রতিষ্ঠানটির কর–পূর্ববর্তী লোকসান ছিল ২ লাখ ৯৬ হাজার পাউন্ড এবং ২০১৭ সালে লোকসান হয় ১ লাখ ২৫ হাজার পাউন্ড। তবে ২০১৮ সাল থেকে মুনাফায় ফেরে। ওই বছর কর–পূর্ববর্তী মুনাফা হয় ৬৮ হাজার ৯৭৩ পাউন্ড। তবে এরপর ২০২১ সালে আবারও লোকসানে চলে যায় ব্যাংক। সে বছরে লোকসান হয় ৫ লাখ ৭১ হাজার ৩৮৯ পাউন্ড।

সোনালী ব্যাংকের নতুন বিনিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী টিবিএসকে বলেন, সেনালী ব্যাংক ইউকে বন্ধ হওয়ার পরই একটি এক্সচেঞ্জ হাউজ ও ট্রেড ফাইন্যান্সিং প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরমধ্যে ট্রেড ফাইন্যান্সিং বিজনেস শুরু হয়েছে সোনালী বাংলাদেশ ইউকে লিমিটেড নামে।

তিনি বলেন, "গত বছরের কয়েকমাসে প্রায় ১.৮ মিলিয়ন ডলার লাভ হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে মালিকানায় সরকারের রয়েছে ৫১ শতাংশ ও সোনালী ব্যাংকের ৪৯ শতাংশ।" 

যদিও সোনালী পে ইউকে লিমিটেডের লাইসেন্স এখনও প্রক্রিয়াধীন বলে জানান তিনি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন সচিব জানান, একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা প্রয়োজন।

"তবে এখনও ইউকেতে ৮০০ কোটি টাকার মতো রয়েছে। প্রতিষ্ঠনটি লাভ করলে তো দেশের জন্য ভালো, তবে নতুন ব্যবসার নামে ইক্যুইটি হারালে দেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকাই নষ্ট হবে," যোগ করেন তিনি।

জানা যায়, সোনালী বাংলাদেশ ইউকে লিমিটেড গঠনের পর থেকে চেয়ারম্যান রয়েছেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের (বিএফআইডি) সাবেক সচিব আসাদুল ইসলাম। যদিও তিনি বর্তমানে সরকারের চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্ত। 

সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান টিবিএসকে বলেন, "ইউকে তে সোনালী ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তারা যে নতুন নামে ট্রেড ফাইন্যান্সিং করছে অবশ্যই তার আগে এটি নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে। তবে সেখানকার জন্য ট্রেড ফাইন্যান্সিং বিজনেস ভালো হবে। এখন ব্যাংকিং সেবা বন্ধ হলেও পুনরায় চালু হওয়ারও সুযোগ রয়েছে।"

জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটিকে চালাতে সরকার ও সোনালী ব্যাংক মিলে দফায় দফায় মূলধন জোগান দিয়েছে। আবার ব্যবসা করতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকেও অর্থ দেওয়া হয়েছে। কয়েক দফায় মূলধন জোগান দেওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির মূলধন দাঁডিয়েছে ৬ কোটি ৩৮ লাখ পাউন্ড, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬৮৭ কোটি টাকা।

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ভারতে দুটি শাখা এবং কুয়েত ও সৌদি আরবেও তিনটি প্রতিনিধি অফিস রয়েছে। 

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.